শীতে রাতে ঘুমানোর আগে দুধ পান করলে কি হয়? দুধ পানের উপকারিতা কি?
শীতে রাতে ঘুমানোর আগে দুধ পান করলে কি হয়?
বিছমিল্লাহির
রাহমানির রাহিম! আসসালামু আলাইকুম জা আল হকের প্রিয় বন্ধুরা, আশা করি আপনারা ভালো
আছেন।
আমার
এটাই দোয়া যে আল্লাহ পাক আপনাকে খাইর ও বরকতে রাখুক ছহি সালামত রাখুক আমিন।
প্রিয়
বন্ধুরা দুধ এমন পানিয় যার উপকারিতা কুরআন ও হাদিসে পাওয়া যায়,আজকের ভিডিওতে আমি
আপনাদেরকে বলব দুধের ব্যপারে কুরআন ও হাদিসে কি বর্ণিত আছে?
দুধে
কি কি ফজিলত আছে যা আমাদের পেয়ারা নবী (দ) বলেছেন। আর চিকিৎসা বিজ্ঞান মোতাবেক
দুধের কি কি উপকারিতা। তাছাড়া আরো বলব হুজুর (দ) দুধ পানের পর কুলি করতে কেন
বলেছেন?
দুধ
সম্পর্কিত অজানা সব তথ্য জানার জন্য আপনার কাছে অনুরোধ ভিডিওটি শেষ পযন্ত অবশ্যই
দেখবেন।
প্রিয়
বন্ধু আপনি যদি আমাদের চ্যানেল প্রথমবার দেখে থাকেন আর এখনো পযন্ত যদি আপনি আমাদের
এই চ্যানেলটি সাবস্ক্রাই না করে থাকেন তাহলে আপনার প্রতি আরজগুজার আমাদের
চ্যানেলটি সবস্ক্রাইব করে বেল আইকনের অল এ ক্লিক করে দিবেন, তাহলে আমাদের আগত সকল
ভিডিওর নোটিফিকেশন আপনি সাথে সাথে পেয়ে যাবেন।
প্রিয়
বন্ধুরা কুরআনে পাকে আল্লাহ পাক এরশাদ করেন
وَإِنَّ لَكُمْ
فِي الأَنْعَامِ لَعِبْرَةً
نُّسْقِيكُم مِّمَّا
فِي بُطُونِهِ مِن بَيْنِ فَرْثٍ
وَدَمٍ لَّبَنًا
خَالِصًا سَآئِغًا
لِلشَّارِبِينَ
অর্থঃ “আর নিশ্চয়ই গবাদিপশুর মধ্যে তোমাদের জন্য শিক্ষা রয়েছে। তার পেটের
গোবর ও রক্তের মধ্য থেকে তোমাদেরকে পান করাই বিশুদ্ধ দুধ, যা পানকারীদের জন্য
উপাদেয়।” সুরা নাহল ৬৬
মহান
আল্লাহর কী কুদরত! মানুষের প্রিয়তম খাদ্য এই দুধে পশুখাদ্য বা পশুর রক্তের কোনো রং
বা গন্ধ নেই। প্রকৃতিতে ছড়িয়ে থাকা সবুজ ঘাস ও তরুলতা খাবার হিসেবে গ্রহণ করে
গৃহপালিত পশু। আর মানুষকে সরবরাহ করে সাদা ও বিশুদ্ধ দুধ। এতে অবশ্যই বিবেকবান
মানুষের জন্য রয়েছে চিন্তার খোরাক।
মেরাজ রাতে সব নবি-রাসুলদের নিয়ে বায়তুল মুকাদ্দাসে নামাজ আদায়ের পর প্রিয় নবিকে
সরাব, দুধ ও মধু দিয়ে আপ্যায়নের ব্যবস্থা করেন। প্রিয়নবি দুধ গ্রহণ করলেন।
প্রিয়নবি দুধ পান করার ফলে জিবরিল আলাইহিস সালাম বলেন, ‘আপনি ফিতরাতের ওপর বিজয়ী হয়েছেন। যদি আপনি পানি পান করতেন তবে,
আপনার উম্মত বিপদের সম্মুখীন হয়ে যেত।
আবু নাঈম হযরত ইবনে আব্বাস (রা) হতে নকল করেন - পান করা হয় এমন জিনিষের মধ্যে
রাসুলুল্লাহ (দ) এর নিকট দুধই খুব বেশী প্রিয় ছিল। এই দুধ শরীরে শক্তি তৈরী করে,
দ্রুত হজম হয়, শারিরিক শুস্কতা দুর করে, চেহেরার রং পরিস্কার করে, ব্রেইনকে
শক্তিশালি করে, একমাত্র দুধেই রয়েছে আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিটি পুষ্টি
উপাদান। যার ফলে দুধ শুধু পানীয়ই নয়, খাদ্য তালিকায় এটি জায়গা করে নিয়েছে একটি
পূর্ণাঙ্গ খাবার হিসেবে।
গরমের
সময় হুজুর (দ) কখনো কখনো দুধের মধ্যে ঠান্ডা পানি মিশ্রন করে পান করতেন, হাদীসে
পাকে আছে যখন হুজুর (দ) কিছু পান করতেন তখন ৩ শ্বাসে পান করতেন, সে জন্য দুধ পান
করার সময়ও যেন এক শ্বাসে পান করা না হয় কমপক্ষে ৩ শ্বাসে পান করা উচিত।
দুধ
পানের পর দোয়া পড়া সুন্নত প্রিয় নবী (দ) দুধ পানের পর দোয়াতে বলতেন
اللهم بارك لنا فيما رزقتنا وزدنا منه . (ابن ما جة )
হে
আল্লাহ তুমি যে রিজিক আমাদেরকে দিয়েছো, তাতে তুমি বরকত দাও এবং তা তুমি আমাদেরকে
বেশী বেশী দান কর।
এ
দোয়া থেকেই বুঝা যায় দুধ হল বরকতময় ও উত্তম খাদ্য তাই নবীজি এই খাদ্য বেশী বেশী
দেওয়ার জন্য দোয়া করতেন। আমাদেরও উচিত এই দোয়াটি মুখস্থ করা এবং দুধ পানের পর এই
দোয়াটি পাঠ করা।
দুধ
পানের পর নবী করিম (দ) কুলি করতেন- বুখারীর শরীফের ২১১ নং হাদিস হযরত আবদুল্লাহ
বিন আব্বাস (রা) হতে বর্ণিত তিনি বলেন নবী করিম (দ) দুধ পান করার পর পানি দিয়ে
কুলি করলেন আর ফরমালেন দুধে চর্বি থাকে, সেজন্য কুলি করা ভাল
দুধ
স্বপ্নে দেখার অথ হল এলম যেমন বুখারী শরীফের ৮২ নং হাদিস
ইবনু
উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, একবার আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। তখন (স্বপ্নে) আমার কাছে এক
পেয়ালা দুধ আনা হল। আমি তা পান করলাম (তার পরিতৃপ্তি আমার সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে পড়ল।)
এমনকি আমার মনে হতে লাগল যে, সে তৃপ্তি আমার নখ দিয়ে বের হচ্ছে। এরপর যেটুকু
অবশিষ্ট ছিল, তা আমি উমর ইবনুল খাত্তাবকে দিলাম। সাহাবায়ে কিরাম জানতে চাইলেন, ইয়া
রাসূলাল্লাহ! আপনি এ স্বপ্নের কী তাবীর করেন? তিনি জওয়াবে বললেনঃ তা হল ইলম।
দুধের
মধ্যে শেফাও আছে যেমন বুখারীর ২৩৩ নং হাদীস উরায়না গোত্রের লোকেরা মদিনায় আসলে
তারা অসুস্থ হয়ে পড়লেন তখন নবী করিম (দ) তাদেরকে সদকার উটের কাছে গিয়ে উটের দুধ ও
মুত্র পান করার জন্য বললেন
এবার
আসুন চিকিৎসা বিজ্ঞানের আলোকে দুধের কি কি উপকারিত তা জেনে নিই
দুধকে
বলা হয় সুপার ফুড বা সর্বগুণ সম্পন্ন খাবার। এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম,
ফসফরাস, প্রোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি-১২, । দুধের নানা পুষ্টিগুণ
আপনাকে সুস্থ, সবল ও নিরোগ রাখতে পারে।
অ্যাসিডিটির
সমস্যা, পিরিয়ডের সময় তীব্র যন্ত্রণা, কাজের স্ট্রেসে অস্থির অবস্থা- এসব সমস্যা
থেকে মুক্তি দিতে পারে এক গ্লাস দুধ। প্রতিদিন মাত্র এক গ্লাস দুধ পানেই এমন অনেক
সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারি আমরা।
প্রতিদিন
দুধ পান করলে দাঁত ক্ষয়ে যাওয়া, দাঁতে পোকা ও হলুদ ছোপ পড়া, হাড় ক্ষয়ের মতো
সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে।
প্রতিদিন
এক গ্লাস দুধ পানে অন্যান্য খাবারের চাহিদা অনেকাংশে মিটে যায়।
দুধে
থাকা ভিটামিন ও মিনারেল ফিটনেস বাড়ায় ও মানসিক চাপ দূর করতে সহায়তা করে। দুধ পানে
ঘুমের উদ্রেক হয়, যার ফলে মস্তিষ্ক শিথিল থাকে ও মানসিক চাপমুক্ত হয়। সারাদিনের
মানসিক চাপ দূর করে শান্তির ঘুম নিশ্চিত করতে প্রতিদিন রাতে এক গ্লাস কুসুম গরম
দুধ পান করুন।
কোষ্ঠকাঠিন্য
সমস্যা থাকলে এবং দুধজাতীয় খাবারে অ্যালার্জি না থাকলে রাতে ঘুমনোর আগে প্রতিদিন
এক গ্লাস গরম দুধ পান করুন।
পিরিয়ডের
সময় পেট ব্যথা ও অ্যাসিডিটির সমস্যা হলে খেয়ে নিন এক গ্লাস দুধ।
শিশুদের
মাংশপেশির গঠন উন্নত করতেও প্রতিদিন দুধ পান করা উচিত।
প্রতিদিন
আমরা এমন অনেক ধরণের খাবার খাই যার ফলে অ্যাসিডিটি হয় ও বুক জ্বালাপোড়া করে।
এক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ সমাধান, প্রতিদিন দুধ পান। দুধ পাকস্থলী ঠাণ্ডা রাখে ও বুক
জ্বালাপোড়ার সমস্যা দূর হয়।
দুধ
কোলেস্টোরল নিয়ন্ত্রণে রাখে ও রক্ত পরিষ্কারের পাশাপাশি রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে।
দুধে
প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে, যা দেহের ইমিউন সিস্টেম উন্নত করে ও রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। প্রতিদিন দুধ পানে ত্বক নরম, কোমল ও মসৃণ হয়।
প্রিয়
বন্ধুরা আমরা যদি প্রিয় নবীর প্রিয় খাদ্য হিসেবে প্রতিদিন দুধ পান করি তাহলে
সুন্নতের সাওয়াবও পাব সাথে সাথে বর্ণিত সকল শারিরিক ও মানসিক উপকারিতাও অজন করব।
আল্লাহর
কাছে ফরিয়াদ আল্লাহ যেন আমাদেরকে দ্বীনের সমজ দান করেন এবং সে মোতাবেক জিন্দেগী
বছর করার তৌফিক দান করেন। আমিন
কোন মন্তব্য নেই