বিশ্বনবী (দ) কবুতরকে শয়তান কেন বলেছেন? ইসলামে কবুতর লালন পালনের বিধান কি?
বিশ্বনবী (দ) কবুতরকে শয়তান কেন বলেছেন?
ইসলামে কবুতর লালন পালনের বিধান কি?
বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম! আসসালামু
আলাইকুম জা আল হকের প্রিয় বন্ধুরা, আশা করি
আপনারা ভালো আছেন।
আমার এটাই দোয়া যে আল্লাহ পাক আপনাকে
খাইর ও বরকতে রাখুক ছহি সালামত রাখুক আমিন।
প্রিয় বন্ধুরা কবুতর এমন একটি সুন্দর ও আকর্ষনীয় পাখি যা সকলেই পছন্দ করে, আর সে জন্য এই পাখি অধিকাংশ ঘরেই পালিত হয়। ঘর ছাড়াও এই পাখিটি বিভিন্ন মাজার এমনকি মক্কা মদীনায়ও প্রচুর পরিমাণে দেখা যায়।
তবে মক্কা মদীনায় মানুষ কবুতরকে খুব বেশী দানা ঢালে সে জন্য সেখানে দিন
দিন কবুতরের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে আর এরা মক্কা মদীনার চত্বরকে পায়খানা করে করে ভরিয়ে
দেয়, আর হকুমত এদের কারনে পেরেশান কারন হেরেমে কোন প্রাণীকে মারা হারাম, তাই মক্কা
মদীনা সহ সব জায়গায় কবুতরকে এমন জায়গায় দানা ঢালা উচিত যেখানে মানুষের কষ্ট হবেনা।
আজ আমি আপনাদেরকে বলব কবুতর লালন পালন
করা কখন জায়েজ কখন না জায়েজ। কোন কবুতর কল্যানকর আর কোন কবুতর ঘরের জন্য আযাবের কারন।
কেন প্রিয় নবী কবুতরকে শয়তান বলেছেন? কেন প্রিয় নবী কাবা ঘরের ভিতর থেকে কবুতরের মুতি
ভেঙ্গে ফেলে দিয়েছেন? কবুতর খাওয়া জায়েজ নাকি না জায়েজ?
কবুতর সংক্রান্ত এসব বিষয়ে হাদীস শরীফের
আলোকে বিস্তারিত জানার জন্য আপনাদের কাছে অনুরোধ বিভিওটি শেষ পযন্ত অবশ্যই দেখবেন।
প্রিয় বন্ধুরা কবুতর এর কল্যান ও আযাবের
বিষয়ে জানার আগে কবুতরের ব্যপারে ১টি পুরানো কাহিনি শুনুন
হযরত নুহ (আ) এর প্লাবনের সময় জুদী পর্বতে
নৌকা থামার পর হযরত নূহ (আ.) এবং তাঁর সাথিরা পৃথিবীতে নামার জন্য প্রস্তুত হলেন। আশেপাশের
অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে আসার জন্য হযরত নূহ (আ.) একটি কাককে পাঠালেন। কাকটা উড়ে গিয়ে
মরা খেতে লেগে গেল আর ফিরে এলো না। কাক আসতে দেরি দেখে নুহ (আ) একটি কবুতরকে পাঠালেন
অবস্থা দেখে আসার জন্য। কবুতরটা উড়ে গেল এবং কিছুক্ষণ পর একটি জলপাইয়ের ডাল ঠোঁটে
নিয়ে ফিরে এলো। এবং কবুতরের পায়ে কাঁদা লেগে আছে দেখে হযরত নূহ (আ.) এবং নৌকার অন্যান্য
আরোহী বুঝতে পারলেন পৃথিবী এখন বসবাসের উপযোগী। কবুতরের এই কাজের জন্য হযরত নুহ (আ)
কবুতরের জন্য দোয়া করেছিলেন ফলে কবুতর মানুষের সাথে সহজে পোষ মানে। আর কাককে ভয়ের বদদোয়া
দিলেন ফলে কাক মানুষকে বেশী ভয় পায়।
সুনানে ইবনে মাজার ২৯৪৭ নং হাদীস শায়বা-র
কন্যা সাফিয়্যা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
মক্কা বিজয়ের বছর যখন নিশ্চিত (নিরাপদ) হলেন তখন তিনি স্বীয় উটে উরোহণ করে (বাইতুল্লাহ)
তাওয়াফ করেন এবং নিজের হাতের লাঠির সাহায্যে
(হাজরে আসওয়াদ)-কে চুমা দনে। অতঃপর তিনি কাবার অভ্যন্তর ভাগে প্রবেশ করেন এবং
তথায় কাঠের তৈরী একটি কবুতর দেখতে পান। তিনি তা ভেঙ্গে ফেলেন, অতঃপর তিনি
কাবার দরজায় দাঁড়িয়ে তা বাইরে নিক্ষেপ করেন। আমি তা দেখছিলাম।
সুতরাং
বুঝা যায় কবুতরের মুর্তি যদিও বা তা মাটির কিংবা কাঠের হউক তা ঘরে রাখা ইসলাম সমথন
করেনা। ঘরে কোন প্রাণীর মুতি রাখলে রহমতের ফেরেশতা আসেনা
কবুতর যেহেতু পোষ মানে সেহেতু অসংখ্য মানুষ
এই কবুতর লালন পালন করে কিন্তু কবুতরের ব্যপারে আবূ দাঊদ শরীফের ৪৯৪০ নং ইবনু মাজাহ ৩৭৬৪, ৩৭৬৫, নং হাদিস আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক ব্যক্তিকে দেখলেন, সে কবুতরের পিছনে দৌড়াচ্ছে
(খেলা করছে)। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ এক শয়তান আরেক শয়তানের
পিছনে ছুটছে।
এ হাদীসটিতে হুজুর (দ) কবুতরকে শয়তান বলেছেন।
এই হাদীস শুনে যারা কবুতর পালেন তাদের মন খারাপ হয়ে যাওয়ার কথা। তাই এই হাদীসের ব্যাখ্যায়
ব্যাখ্যাকারগণ কি বলেছেন তা জানা দরকার
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক
ব্যক্তিকে দেখলেন সে একটি কবুতরকে অনুসরণ করে তার পিছে পিছে দৌড়িয়ে খেলছে তখন
তিনি বললেন, এক শয়তান আরেক শয়তানের অনুসরণ করছে। তাকে শয়তান বলার কারণ হলো, সে সত্য
পথ থেকে দূরে রয়েছে এবং এমন কাজে ব্যস্ত রয়েছে যাতে কোন কল্যাণ নেই। আর তা আল্লাহর
স্মরণ থেকে গাফেল করছে এবং এমন কাজে ব্যস্ত রয়েছে যা তাকে দীন ও দুনিয়া অন্বেষণ থেকে
অন্যদিকে ফিরিয়ে দিচ্ছে। কবুতর নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকা এবং শিকারের পেছনে ছোটা মানুষকে
মজিয়ে রাখে। এতে আল্লাহর আনুগত্য, ইবাদত-বন্দেগি ও সালাত ছুটে যায়। এখান থেকেই নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,এক শয়তান আরেক শয়তানের পিছে লেগেছে
ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ কবুতরকে
ডিম এবং বাচ্চা ফুটানোর কাজে অথবা শখের জন্য অথবা চিঠিপত্র বহন করার জন্য পালন করা
জায়িয। কিন্তু তা দ্বারা খেলাধূলা করা মাকরূহ। এর সাথে যদি জুয়া লটারি বা এ জাতীয় কিছু
যুক্ত হয় তাহলে সে ব্যক্তির স্বাক্ষীও গ্রহণযোগ্য হবেনা।
এবার আসুন কবুতর খাওয়া জায়েজ কিনা? অনেকে
মনে করে কবুতর খাওয়া জায়েজ নাই এটা ভুল ধারনা, কবুতর খাওয়া হালাল। যে দলিল দিয়ে মুরগি
খাওয়া যাজেজ সে দলিলে কবুতর খাওয়াও জায়েজ।
আমাদের আজকের ভিডিওটি কেমন লাগল কমেন্ট
করে জানাবেন আর কবুতর সংক্রান্ত কোন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই কমেন্টে লিখবেন। আর ভিডিওটি
ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবেন।
কোন মন্তব্য নেই