১ নারীর আযব প্রশ্ন- স্বামী অক্ষম হলে সন্তান লাভের জন্য পর পুরুষের সাথে ১ রাত থাকা যাবে?

 ১ নারীর আযব প্রশ্ন- স্বামী অক্ষম হলে সন্তান লাভের জন্য পর পুরুষের সাথে ১ রাত থাকা যাবে?



সুপ্রিয় সুধী বৃন্দ আসসালামু আলাইকুম, আশা করি আপনারা সকলে ভালো আছেন, আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ তিনি আপনাকে আপনার পরিবারকে সুখ সচ্ছলতায় রাখুক আমিন

মক্কার মসজিদে হারামে আল্লামা মক্কী হেজাজিকে আপনারা চিনেন উনার কাছে মানুষ নানান ধরনের প্রশ্ন করেন তিনি সে সব প্রশ্নের জবাবও দিয়ে থাকেন

এক নারী উনার কাছে এমন একটি প্রশ্ন করল যা খুবই বেদনাদায়ক, সে বিষয়ে আজ বিস্তারিত আলোচনা করব আশা করি এই মজার প্রশ্নটি এবং তার উত্তরে মক্কী হেজাজি কি বলেছেন তা জানার জন্য শেষ পযন্ত ভিডিওটি অবশ্যই দেখবেন

প্রথমে স্বামীদের ব্যপারে মদীনার ১১ জন নারীর মন্তব্য সংক্রান্ত শামায়েলে তিরমিযির ১৮৮ নং মজার হাদিসটি শুনুন

সহীহ বুখারী, হা/৫১৮৯; সহীহ মুসলিম, হা/৬৪৫৮; ইবনে হিব্বান, হা/৭১০৪; জামেউস সগীর, হা/১৪১

আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার ১১ জন মহিলা এ মর্মে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলো যে, তারা তাদের নিজ নিজ স্বামী সম্পর্কে সব খুলে বলবে এবং কোন কিছুই গোপন করবে না।

প্রথম মহিলা বলল, আমার স্বামী অলস, অকৰ্মণ্য, দুর্বল উটের গোশততুল্য, তা আবার পর্বত চূড়ায় সংরক্ষিত; যা ধরাছোঁয়া দুঃসাধ্য। তাঁর আচরণ রুক্ষ। ফলে তাঁর কাছে যাওয়া যায় না। সে স্বাস্থ্যবানও নয়, আর তাকে ত্যাগও করতে পারছি না।

দ্বিতীয় মহিলা বলল, আমার স্বামী এমন যে, আমি আশংকা করছি, তাঁর দোষক্ৰটি বর্ণনা করে শেষ করতে পারব না। আর আমি যদি বর্ণনা করে দেই, তাহলে কেবল দোষত্রুটিই বর্ণনা করব।

তৃতীয় মহিলা বলল, আমার স্বামী দীর্ঘদেহ বিশিষ্ট, দেখতে কদাকার। আমি কথা বললে (উত্তরে আসে) তালাক। আর নীরব থাকলে সে তো ঝুলন্ত রশি (অর্থাৎ কিছু চাইলে বদ মেজাজের সম্মুখীন হতে হয় এবং নীরব থাকলে হতে হয় বঞ্চিত)।

চতুর্থ মহিলা বলল, আমার স্বামী তিহামার রাত্রির ন্যায়- না (প্রচণ্ড) গরম, আর না (প্রচণ্ড) ঠাণ্ডা। তাঁর থেকে কোন ভয়-ভীতি কিংবা অস্বস্তির কারণ নেই।

পঞ্চম মহিলা বলল, আমার স্বামী ঘরে এলে মনে হয় চিতাবাঘ আর বাইরে বের হলে সে হয় সাহসী সিংহ। বাড়িতে কি ঘটল সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে না।

ষষ্ঠ মহিলা বলল, আমার স্বামী যখন খায়, তৃপ্তি ভরে খায়। আর পান করলে সব সাবাড় করে দেয় এবং কোন কিছু অবশিষ্ট রাখে না। আর যখন ঘুমাতে চায়, চাদর দেহে জড়িয়ে দেয়। আমার কোন বিপদাপদ আছে কি না তা হাত বাড়িয়েও দেখে না।

সপ্তম মহিলা বলল, আমার স্বামী অক্ষম, কথা বলতে পারে না, সব ধরনের রোগে আক্রান্ত। সে আমার মস্তক চূর্ণ করতে পারে অথবা মারধোর করে হাড়গোড় সব ভেঙ্গে দিতে পারে বা উভয়টিও করতে পারে।

অষ্টম মহিলা বলল, আমার স্বামীর পরশ খরগোশের ন্যায় কোমল। (তাঁর ব্যবহৃত সুগন্ধি) জাফরানের সুগন্ধির ন্যায়।

নবম মহিলা বলল, আমার স্বামী উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিত্ত্ব। অত্যন্ত অতিথিপরায়ণ, দীর্ঘ দেহবিশিষ্ট, তাঁর বৈঠকখানা ঘরের নিকটবর্তী।

দশম মহিলা বলল, আমার স্বামী হলো আমার মালিক। মালিকের প্রশংসা কী আর করব (উপরে বর্ণিত সকলের প্রশংসা একত্র করলেও তাঁর গুণ গেয়ে শেষ করা যাবে না)। তার রয়েছে অসংখ্য উট, অধিকাংশ সময় সেগুলো বাধাই থাকে। খুব কমই মাঠে চরানো হয়। এসব উট যখন বাদ্যের ঝংকার শোনে, তখন তারা নিশ্চিত হয়ে যায় যে, তাদেরকে যবেহ করা হবে।

একাদশ মহিলা উম্মে যারআ বলল, আমার স্বামী আবু যারআ। আবু যারআর কী আর প্রশংসা করব, সে তো অলংকার দিয়ে আমার দুকান ভর্তি করে দিয়েছে, উপাদেয় খাবার খাইয়ে দুবাহু চর্বিযুক্ত করে দিয়েছে। আমাকে খুবই স্বাচ্ছন্দ্যে রেখেছে। ফলে আমি আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েছি। আমি ছিলাম বকরী রাখালের কন্যা, খুব দুঃখ-কষ্টের মধ্যে দিন অতিবাহিত করতে হতো। আমি এখন অসংখ্য ঘোড়া, উট ও বকরী পালের মধ্যে তথা পর্যাপ্ত ধন-সম্পদের মধ্যে আছি। আমি তাকে কিছু বললেও আমাকে মন্দ বলত না। সারাক্ষণ নিদ্রায় কাটালেও কিছুই বলত না। পর্যাপ্ত খাওয়ার পরও খাবার অবশিষ্ট থাকত।

সে (একাদশ মহিলা) বলল, আমি এমনই সুখ শান্তি, আদর সোহাগ সমৃদ্ধির মধ্যে দিনকাল কাটাচ্ছিলাম। এমন সময় একবার আবু যারআ বাইরে যান এবং দেখতে পান যে, স্বাস্থ্যবান দুটি শিশু তাদের মায়ের স্তন নিয়ে খেলা করছে। এরপর আবু যারআ আমাকে তালাক দিয়ে তাকে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ করে ফেলেন।

এরপর আমি একজন বিত্তশালী উষ্ট্রারোহী ব্যক্তিকে বিয়ে করি। সেও আমাকে পর্যাপ্ত সামগ্রী জোড়ায় জোড়ায় দিয়েছিল। সে স্বামী বলল, উম্মে যারআ! তৃপ্তি সহকারে খাও এবং ইচ্ছেমতো তোমার বাপের বাড়িতে পাঠাও। সে মহিলা বলল, তার দান-দক্ষিণার যাবতীয় বস্তু একত্র করলে আবু যারআর সামান্যও হবে না। আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, আবু যারআ যেমন উম্মে যারআর জন্য, আমিও ঠিক তদ্রুপ তোমার জন্য। (কিন্তু কখনো আবু যার'আর মতো তোমাকে তালাক দেব না)

এ হাদীসের মধ্যে প্রিয় নবী (দ) স্ত্রীর প্রতি আবু যারআর আচরনে মুগ্ধ হয়েছেন সে জন্য বলেছেন হে আয়শা আমি তোমার জন্য আবু যারআর মত, তবে নবী করিম (দ) আবু যারআর স্ত্রীকে তালাকের বিষয়টি অপছন্দ করলেন। ইসলামে তালাক দেয়া যদিও বৈধ কিন্তু এই অপশন শুধু মাত্র অপারগ অবস্থার জন্য বৈধ রাখা হয়েছে, তালাক দেয়াকে প্রিয় নবীজি অনুৎসাহিত করেছেন।

আমাদের সমাজে অধিকাংশ তালাক হয় সন্তান না হলে কিংবা কন্যা সন্তান হলে পুত্র সন্তান না হলে, কিংবা টুনকু কারনে তালাক দিয়ে দেয়। মনে রাখতে হবে সন্তান দেয়া না দেয়া আল্লাহর হকুমে হয়। তাই আল্লাহর বন্টনে আমাদেরকে খুশি থাকতে হবে।

এক মহিলা আল্লামা মক্কী হেজাজিকে প্রশ্ন করেন আমার স্বামীর সাথে বিয়ে হেয়ছে ১০ বছর কিন্তু সন্তান হচ্ছেনা এখন আমার স্বামী আমাকে অন্য একজন পুরুষের সাথে ১ রাত থাকার জন্য বলছে তখন থেকে আমার স্বামীর প্রতি আমার মনে ঘৃনা সৃষ্টি হয়, এখন আমি কি করব?

মক্কী হেজাজি বলেন এখন আধুনিক যুগ সন্তান না হলে এর উন্নত চিকিৎসা আছে, চিকিৎসা করানো উচিত, আর এরপরও যদি না হয় আল্লাহর ফয়সালাতে সবর করা উচিত, সন্তানের জন্য অবৈধ কাজ করা হারাম তাই কোন স্বামী এমন নির্দেশ দিলে সে হাদীসের ভাষা মোতাবেক দাইউস বলে গন্য হব। আর স্বামী যদি অক্ষম হয় তখন স্ত্রী সবর করা ভালো, কারন আমাদের সমাজে একজন নারী যখন তালাক প্রাপ্ত হয় তখন তার আর ২য় বিয়ে হয়না, তখন বাবা ও ভায়ের বোঝা হয়ে থাকতে হয়, তাই বাবা ও ভায়ের বোঝা না হয়ে সে স্বামী যদি ভরন পোষন দিয়ে থাকে সেখানে ধৈর্য্য ধারন করাই ভালো, আর যদি ধৈর্য্য ধারন সম্ভব না হয় ২য় বিয়ে হওয়ার সুযোগ থাকে তাহলে তালাকের অপশন ব্যবহার করা যেতে পারে এ ব্যপারে

বুখারীর ৪৮৮৭ নং হাদীস

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ জনৈক ব্যাক্তি তার স্ত্রীকে তালাক দিলে সে (স্ত্রী) অন্য স্বামীকে বিবাহ করে। পরে সেও তাকে তালাক দেয়। তার লিঙ্গ ছিল কাপড়ের কিনারা সদৃশ। সুতরাং মহিলা তার থেকে নিজের মনবাসনা সিদ্ধ করতে পারতো না। দ্বিতীয় স্বামী অবিলন্বে তালাক দিলে সে (মহিলা) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার স্বামী আমাকে তালাক দিলে আমি অন্য স্বামীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হব। এরপর সে আমার সাথে সংগত হয়। কিন্তু তার সাথে কাপড়ের কিনারা সদৃশ বৈ কিছুই নেই। (অর্থ্যাৎ আমার ২য় স্বামী অক্ষম পুরুষত্বহীন) তাই সে একরারের অধিক আমার নিকটস্থ হল না এবং আপন মনবাসনা সিদ্ধী করতে সক্ষম হল না। এরুপ অবস্থায় আমি আমার প্রথম স্বামীর জন্য বৈধ হব কি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি ততক্ষণ পর্যন্ত তোমার প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হবে না, যতক্ষন না দ্বিতীয় স্বামী তোমার কিছু স্বাদ উপভোগ করে আর তুমিও তার কিছু স্বাদ আস্বাদন কর।

আল্লাহ আমাদের পারিবারিক বিষয়গুলি প্রিয় নবীর জীবনের আলোকে সমাধান করার তৌফিক দান করুন। প্রত্যেক স্বামী স্ত্রীর বন্ধনকে সুন্দর ও মধুময় করুক, টুনকু কারনে তালাকের দিকে না গিয়ে আল্লাহর ফয়সালায় সবর করার তৌফিক দান করুন আমিন।

 

কোন মন্তব্য নেই

borchee থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.