যে সব নেকি বা সাওয়াবের আল্লাহর কাছে কোন মূল্য নেই। সাওয়াব কি? সাওয়াব নিয়ে যতসব ভুল ধারনা
বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম! আসসালামু
আলাইকুম প্রিয় বন্ধুরা, আশা করি আপনারা ভালো
আছেন।
আমার একটাই দোয়া যে আল্লাহ পাক
আপনাকে সঠিক পন্থায় নেক আমল করার তৌফিক দান করুন, খাইর ও বরকতে রাখুক ছহি সালামত রাখুক
আমিন।
প্রত্যেক মানুষ চাই সে ভালো লোক
হউক বা খারাপ, সকলেই নেকি করতে চায়, ভালো কাজ করতে চায়, আর ভালো কাজ করে আত্মতৃপ্তি
নেয়।
যে কোন ভালো কাজ করলেই আত্মতৃপ্তি
আসে, তাতে সন্দেহ নাই, আপনি যদি একটি কুকুরকেও খাদ্য দেন তাতেও এক ধরনের আত্মতৃপ্তি,
মনের মধ্যে শান্তি অনুভুত হয়, কিন্তু শুধুমাত্র আত্মতৃপ্তি কিংবা মনের শান্তি অনুভুত
হলেই কি নেক কাজে সাওয়াব পাওয়া যায়? তা সকলের অজানা।
মানুষ কোন অন্যায় করলে তার ভিতর
একটি নফসে লাওয়্যামা আছে - কুরআনে আল্লাহ যে নফসের কসম খেয়েছেন, সে নফসটি মানুষকে সে
অন্যায় কাজের জন্য ধিক্কার দেয়, তখন সকল মানুষ নিজের নফসকে শান্তি দেয়ার জন্য কিছু
ভালো কাজ করে আর আত্মতৃপ্তিতে ভোগে।
কিন্তু কিভাবে নেক কাজ করলে, কোন
পদ্ধতিতে সাওয়াবের কাজ করলে আল্লাহর কাছে সে নেক কাজের কোন মূল্য নাই আজকের ভিডিওতে
সে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব, আশা করি শেষ পযন্ত শুনে আপনার নেক কাজের সঠিক পন্থা জেনে
নিবেন এবং কষ্ট করে নেক কাজ করে তাকে মূল্যহীন না করে মূল্যবান করবেন ইনশা আল্লাহ।
আমাদের সমাজের মন্দ থেকে মন্দ লোকও
কিছুনা কিছু ভালো কাজ করে নিজের মনকে প্রশান্তি দেয়,
ডাকাত বলে আমি ডাকাতি করলে কি হবে
এলাকার বিধবা ও গরীবদের তা থেকে সাহায্য সহযোগিতা করি,
হারাম পদ্ধতিতে যিনি কামাই করেন
তিনি বলেন; আমি হারাম কামালে কি হবে আমি সে হারাম কামাই দিয়ে বছরে ২ বার গরু জবেহ করে
লোকজনকে খাওয়াই।
একদল লোক নেকি কামাই করার ব্যপারে
সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দেয় এবাদতকে সামাজিক রছমকে কিন্তু লেনদেনে সে মানুষকে ধোকা দেয়।
সুদী কারবার করেন, যাঞ্চাকারীকে ধিক্কার দেয়, আর বড় গলায় বলে আমি সুদি কারবার করলে
কি হবে আমি মসজিদ বানিয়েছি, আমি মসজিদে কাপেট দিয়েছি, ঝাড়বাতি দিয়েছি এটা আমাদের সমাজের এক অংশ লোকের নেকি নিয়ে ভুল ধারনা।
আবার ২য় দলের মধ্যে আছে আধুনিক
শিক্ষিত সমাজ, নেকির ব্যপারে তাদের ধারনা প্রথম দলের সম্পূণ বিপরীত, তারা বলে আসল নেকি
হল কাউকে ধোকা দিবনা, মিথ্যা বলবনা,ওয়াদা পুরণ করব, নিজের দায়িত্ব সঠিক ভাবে আদায় করব,
আর নামাজ রোজা হল ব্যক্তিগত বিষয় যদি কেহ করে নিজের জন্য আর না করলে কোন সমস্যা নাই।
নেকির ব্যপারে প্রথম ও ২য় দলের
চিন্তা ভাবনা আসমান জমিনের পার্থক্য। এক দল মনে করে নামাজ রোজা এবাদতই নেকির ক্ষেত্রে
বেশী গুরুত্বপূণ ২য় দলের মধ্যে নামাজ রোজা এবাদত হল সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত বিষয়। অথচ দুটাই
ভুল ধারনা।
আপনারা জেনে অবাক হবেন যারা দেহ
ব্যবসা করে, গানবাজনা করে তারাও কোননা কোন নেক কাজ করে, আর এসব করে তারা নিজেকে নিজে
মুতমাইন করে। এ ব্যপারে বাদশা আলমগীর আউরঙ্গজেব এর, ১টি ঘটনা প্রসিদ্ধ, ঘটনাটি হল তিনি দিল্লিতে গান বাজনা করার ব্যপার
নিষেধাজ্ঞা আরোপ করল, আর এর ফলে গান বাজনা যাদের পেশা তাদের আয় রোজগারের রাস্তা বন্ধ
হয়ে গেল, তাই গান বাজনাকারী লোকেরা অনেক চেষ্টা করেও বাদশার সে ফরমানকে টলাতে পারলনা,
অবশেষে তারা বাদশা যে নদীর পাশ দিয়ে চলাচল করে সে নদীতে সকল গায়ক গায়িকারা নৌকাতে করে
গান বাজনা করতে লাগল যখন তারা বাদশাকে দেখল সকলে ১টি ফাসি শ্লোক গাইতে লাগল
(দর কুয়ে নেক নামি মারা গুজর না
দারান্দ- গর তু নামি পছন্দি তকদির তগঈর কুল কাজারা)
(অর্থ্যাৎ নেকির ভিতর দিয়ে আমাদের
রুজি রোজগার নাই, এটাতো আল্লাহর পক্ষ থেকেই ফয়সালা, যদি আল্লাহর ফয়সালা তোমার পছন্দ
না হয় তাহলে তুমি আমাদের তকদীর বদলে দাও)
তাদের এই শেয়ার শুনে বাদশা হেসে
দিলেন আর তাদেরকে গান বাজনার অনুমতি দিয়ে দিলেন।
এধরনের নেকির ব্যপারে নানা রকম
ভুল চিন্তা ভাবনা মানুষের মধ্যে প্রচলন আছে, যেমন আমি উদাহারন দিয়ে থাকি এক গ্রামে
প্রথমবার হাতির আগমন হল সেখানে কিছু অন্ধ ছিল তারাও হাতির মত আজব বিশালাকৃতির প্রাণীটি
কেমন তা জানতে চাইলে এক অন্ধ হাতির পা ধরে ধারনা দিল হাতি খাম্বার মত, একজন কান ধরে
ধারনা দিল হাতি কুলার মত, একজন পেট ধরে ধারনা দিল হাতি ঢোলের মত।
আমাদের সমাজেও নেকির ব্যপারে মানুষের
মাঝে অন্ধদের হাতির ব্যপারে যেমন ভুল ধারনা তেমনই ভুল ধারনা প্রচলিত আছে।
নেকির ব্যপারে মুফতি জামালুদ্দীন
সুবহানি (রহ.)-এর ব্যাখ্যা চমৎকার তিনি বলেন, সওয়াব হলো জান্নাতের মুদ্রা। দুনিয়ায়
যেমন যার কাছে মুদ্রা ও অর্থ বেশি থাকে, তার জীবনযাত্রাও উন্নত হয়। ইচ্ছা হলেই যেকোনো
জিনিস ভোগ করতে পারে। আর যার কাছে অর্থকড়ি কম থাকে, তার জীবনযাত্রা নিম্নমানের হয়ে
থাকে। তেমনি জান্নাতে যার আমলনামায় সওয়াব যত বেশি থাকবে, সে তত বেশি সুখ ভোগ করতে পারবে।
জান্নাতে সব মানুষের মর্যাদা নির্ণীত হবে সওয়াবের আধিক্যের মাধ্যমে।
আর নেকী বা সাওয়াব পাওয়ার জন্য
প্রধান শর্ত হল ঈমান, ও বিশুদ্ধ নিয়ত কোরআনে
ইরশাদ হচ্ছে,
وَمَا
أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاء
وَيُقِيمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذَلِكَ دِينُ الْقَيِّمَةِ
তাদের কেবল এই আদেশই করা হয়েছিল
যে তারা আল্লাহর ইবাদত করবে, খালেস ও একনিষ্ঠভাবে তাঁরই আনুগত্য করবে এবং নামাজ কায়েম
করবে ও জাকাত দেবে। আর এটাই সরল-সঠিক দ্বীন। (সুরা : বায়্যিনাহ, আয়াত : ৫)
কাফির ব্যক্তি কি সওয়াবের অধিকারী
হবে? পরকালে কোনো ভালো কাজের প্রতিদান পাওয়ার জন্য ইমান আনয়ন করা পূর্বশর্ত। ইমান ছাড়া
যত ভালো কাজই করুক না কেন, আল্লাহ তাআলার কাছে তা অগ্রাহ্য হবে। ইমান না এনে পরকালে
প্রতিদান পাওয়ার আশা করা অনর্থক। তবে কাফিরদের ভালো কাজের প্রতিদান দুনিয়ায় দিয়ে দেওয়া
হয়। এর প্রতিদান কোনো না কোনোভাবে তারা দুনিয়ায় পেয়ে যাবে।
তদ্রুপ কোন ঈমানদারও যদি আল্লাহর
জন্য ও পরকালের জন্য নেক আমল না করে নিজের আত্মতৃপ্তি বা লোকের বাহবা পাওয়ার জন্য নেককাজ
করে সে তার প্রতিদান দুনিয়াতেই পেয়ে যাবে এ ব্যপারে আল্লাহ সুরা আল ইমরানে বলেন
وَمَن
يُرِدْ ثَوَابَ الدُّنْيَا نُؤْتِهِ مِنْهَا وَمَن يُرِدْ ثَوَابَ الآخِرَةِ
نُؤْتِهِ مِنْهَا وَسَنَجْزِي الشَّاكِرِينَ
যে লোক দুনিয়ায় বিনিময় কামনা করবে, আমি তাকে তা দুনিয়াতেই
দান করব। পক্ষান্তরে- যে লোক আখেরাতে বিনিময় কামনা করবে, তা থেকে আমি তাকে তাই দেবো।
আর যারা কৃতজ্ঞ তাদেরকে আমি প্রতিদান দেবো [সুরা ইমরান - ৩:১৪৫]
অতএব আমাদেরকে নেকির ব্যপারে যতসব
ভুল চিন্তা ভাবনা আছে তা মন থেকে ধুয়ে মুছে সাফ করে ফেলতে হবে, নেকি করতে হবে বিশুদ্ধ
নিয়তে একমাত্র আল্লাকে খুশি করার জন্য, পরকালে প্রতিদান লাভের জন্য। আল্লাহ আমাদেরকে
বুঝার ও আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
কোন মন্তব্য নেই