দোয়া কেন কবুল হয়না? দ্রুত দোয়া কবুল করানোর উপায় দোয়া কবুলের সেরা ১০টি সময়
দোয়া কেন কবুল হয়না? দ্রুত দোয়া কবুল করানোর উপায়,
যা হযরত জিবরাইল এসে এয়াকুব (আ) কে শিক্ষা দিয়েছেন।
দোয়া কবুলের সেরা ১০টি সময়
নাহমাদুহু ওয়া নুছাল্লি ওয়া নুসাল্লিমু
আলা রাসুলিহিল কারিম, আম্মা বাদ- আজ আমি দোয়া কবুল হওয়ার এমন কিছু কলমা বলব যে কলমা
কোন মামুলি কালমা নয় যা আমি আজ আপনাদের বলতে যাচ্ছি।
এই কলমা হযরত জিবরাইল (আ) আল্লাহর হকুমে
হযরত এয়াকুব (আ) এর কাছে নিয়ে নাজিল হয়েছেন। যা পড়ার সাথে সাথে আল্লাহর বারেগাহে দোয়া
কবুল হয়ে যায়।
যে দোয়া ২০ বছর যাবৎ হযরত এয়াকুব (আ) করতে
থাকেন কবুল হয়না, কিন্তু জিবরাইল এমন কয়েকটি কলমা আল্লাহর তরফ থেকে নিয়ে আসেন যা উচ্চারণ
করার সাথে সাথে ২০ বছর যাবৎ যা কবুল হয়নি তা সাথে সাথে কবুল হয়ে যায়।
অধিকাংশ লোক প্রশ্ন করেন আমার দোয়া কেন
কবুল হয়না? মনে রাখবেন মানুষ যদি কোন গুনাহ করার এরাদা রাখে, আর সম্পক ছিন্ন করতে থাকে
আত্মিয় স্বজনের সাথে দুরে দুরে থাকে তাদের সাথে সম্পককে ঠিক না করে, তাহলে তার দোয়া
কবুল হয়না। চাই সে যা কিছু করুকনা কেন। কিন্তু কেহ যদি গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে, সিলা
রেহমি করে, নিজের শক্তি মোতাবেক সিলা রেহমি করার চেষ্টা করতে থাকে, যে আপনার সাথে কাটে
আপনি তার সাথে জোড়া লাগাতে থাকেন, আল্লাহ তায়ালা আপনার দোয়া জরুর কবুল করবেন। শত হল
সে লোক তার দোয়া কবুল হওয়ার জন্য তাড়াহুড়া করবেনা।
আর দোয়াতে তাড়াহুড়া করার অথ হল- মানুষ
দোয়া করে আর বলে আমি দোয়া করলাম আবার দোয়া করলাম কিন্তু আমি দোয়া কবুল হতে চোখে দেখলাম
না। অতপর সে কি করে? হতাশ হয়ে দোয়া করা ছেড়ে দেয়। আল্লাহ থেকে মুখ ফিরিয়ে দেয় হতাশ
হয়ে যায় অথচ হতাশ হওয়া মুমিনের আলামত নয়। সে জন্য আল্লাহ বলেন (লা তাকনাতু মির রাহমাতিল্লাহ)
তোমরা আমার রহমত থেকে নিরাশ হইও না।
এখন হাদীস থেকে একটি নুসখা বলব যাতে দোয়া
জলদি কবুল করানোর উপায় আছে। হযরত আবদুল্লাহ বিন মসউদ (রা) ফরমান যখন তোমাদের মধ্যে
থেকে কেহ দোয়া চায়, তার উচিত এই ৩টি কাজ করা।
প্রথম কাজ হল যখন কেহ দোয়া করে তার উচিত
আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের হামদ ও ছানা বয়ান করা।
দ্বিতীয় কাজ হল নবী করিম (দ) এর উপর দরুদ
শরীফ পাঠ করা
তৃতীয়ত এই কলমা পড়ে যে দোয়া করবে সে দোয়া
দ্রুত কবুল হবে।’
তেমনি ভাবে হাদীসের মধ্যে দোয়া কবুল হওয়ার
কয়েকটি উপযুক্ত সময় বলা হয়েছে, যে কলমা আমি বলব যদি এই কলমাসমুহ এই ওয়াক্তসমুহে পড়ে
নেয়া যায় একিনান দোয়া কবুল হবে।
আর
দোয়া কবুল হওয়ার ওয়াক্তসমুহ হল হাদীসে এসেছে রাতের আখেরী ওয়াক্তে দোয়া কবুল করা হয়।
হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (দ) এরশাদ করেন প্রতি রাতে যখন রাতের
শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকে তখন আমাদের মহিমান্বিত মহা-কল্যাণময় প্রতিপালক নিকটবর্তী
আসমানে অবতরণ করেন। তিনি বলেন:
مَنْ يَدْعُونِىْ فَأَسْتَجِيبَ لَه مَنْ يَسْأَلُنِىْ فَأُعْطِيَه مَنْ يَسْتَغْفِرُنِي فَأَغْفِرَ لَه
আমাকে
ডাকার কেউ আছ কি? আমি তার ডাকে সাড়া দিব। আমার কাছে চাওয়ার কেউ আছ কি? আমি তাকে প্রদান
করব। আমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার কেউ আছ কি? আমি তাকে ক্ষমা করব।”
তেমনি
ভাবে ২য় ওয়াক্তের ব্যপারে হাদিসে আছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন, ‘আজান ও ইকামতের
মধ্যবর্তী সময়ের দোয়া ফিরিয়ে দেয়া হয় না।’ (আবু দাউদ)
অনুরুপভাবে
৩য় ওয়াক্তের ব্যপারে আছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জুমআর দিনে একটি সময় আছে যে সময়টা কোনো মুমিন নামাজ পড়া অবস্থায়
পায় এবং আল্লাহর কাছে কোনো কিছু প্রার্থনা করে, আল্লাহ অবশ্যই সে চাহিদা পুরণ
করবেন। এবং তিনি তাঁর হাত দিয়ে ইশারা করে সে সময়ের সংক্ষিপ্ততার ইঙ্গিত দেন।’ (বুখারি)
তেমনি
ভাবে ফরয নামাজের পর দোয়া - রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রাতের শেষ সময় এবং ফরজ নামাজের পরে দোয়া কবুল হয়।’ (মুসলিম)
একইভাবে সিজদার মধ্যে
দোয়া কবুল হয়- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে সময়টাতে বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে কাছে চলে যায়, তাহলো সেজদার সময়।
সুতরাং তোমরা তখন আল্লাহর কাছে বেশি বেশি চাও।’ (মুসলিম)
অনুরোপভাবে বৃষ্টির সময়
দোয়া কবুল হয়
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন, ‘দুই সময়ের দোয়া ফেরানো
হয় না। আজানের সময়ের দোয়া আর বৃষ্টি বর্ষণের সময়ের দোয়া।’ (আবু দাউদ)
তাছাড়া আরাফাতের দিন,
রোজাদারের ইফতারের সময়, জিলহজ্বের ১০ তারিখ, শবে কদরের রাতে, মুসাফির অবস্থায়,
মজলুম অবস্থায় দোয়া কবুল হয়।
এসবই হল এমন ওয়াক্ত
যাতে আল্লাহ তাবারাকা ওয়াতায়ালা দোয়া দ্রুত কবুল করেন।
এখন আমি আপনাদের বলব সে
কলমা কি? আর তা কিভাবে পড়া যাবে? আর এই কলমা হযরত জিবরাইল (আ) কেন নিয়ে এসেছেন?
তার কি রহস্য ছিল? সে রহস্য শুনতে থাকুন তাতে এই কলমাসমুহের গুরুত্ব আপনাদের
অন্তরে বসে যাবে।
তফসিরে
রুহুল মায়ানিতে হযরত আল্লামা আলুসি (রহ) লিখেন- যখন হযরত ইউসুফ (আ)ও তার পিতা ভাইদেরকে
মাফ করে দিলেন আর এটা ফরমালেন (লা তাছরিবা আলাইকুমুল এয়াউম) তখন ভায়েরা বললেন হে আমার আব্বাজান এবং হে
আমাদের ভাই আপনারা আমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।কিন্তু আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে
ক্ষমা করেন নি। আপনাদের ক্ষমা আমাদের কোন উপকারে আসবে না। সে জন্য আপনারা আল্লাহর
কাছে দোয়া করুন তিনি যেন আমাদের ভুলসমুহকে ক্ষমা করে দেন। এবং আমাদেরকে যে ক্ষমা
করেছেন তার জন্য অহি নাজিল করেন। তখন হযরত এয়াকুব (আ) ফরমালেন (ছাওফা
আসতাগফিরুলাকুম রাব্বি, ইন্নাহু হুয়াল গাফুরুর রাহিম) অতি সত্বর তোমাদের জন্য আমার
রবের কাছে দোয়া মাগফেরাত করব, নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশিল পরম দয়ালু।
অতপর
হযরত এয়াকুব (আ) কেবলামুখি হয়ে দোয়ার জন্য দাঁড়ালেন আর হযরত েইউসুফ (আ) তার পিছে
দাঁড়ালেন।আর তাদের পিছে সকল ভাইয়েরা দাঁড়ালেন।এবং খুবই নম্রতা ও একাগ্রতার সাথে
দোয়া করেছেন কিন্তু ২০ বছর পযন্ত এই দোয়ার কবুল হওয়ার কোন সাড়া শব্দ প্রকাশ পেলনা।
অতঃপর হযরত জিবরাইল (আ) তশরীফ আনলেন আর এই খাস দোয়া শিখালেন। যা আজ আপনাদেরকে
শিখাব। দোয়াটি লিখে রাখুন আর আরবীতে মুখস্থ করুন। আর দোয়া করতে থাকুন ইনশা আল্লাহ
তায়ালা আপনার দোয়া কবুল হতে আর দেরি হবেনা।
দোয়াটি হল (এয়া রাজাআল মুমিনিনা রা তাকতাআ রাজাআনা) হে
ঈমানদারদের আশা ভরসা আমাদের আশা ভরসাকে ভঙ্গ করিনা।
(এয়া
গিয়াছাল মুমিনিা আগিছনা) হে ঈমানদারদের দোয়া শ্রবণকারী আমাদের সাহায্য করুন।
(এয়া
মুঈনাল মুমিনা আইন্না) হে ঈমানদারদে সাহায্যকারী আমাদেরকে সাহায্যকরুন।
(এয়া
মুহিব্বাত তাওয়্যাবিনা তুব আলাইনা) হে তওবাকারীকে মহব্বতকারী, আমাদের উপর খাস
দৃষ্টি দান করুন
এই
৪টি এমন আজিমুশশান কালিমা এই কলমাগুলিকে যদি আপনি আপনার দোয়াতে শামিল করেন আর
দোয়ার যে সব কবুলীয়তের সময় আমি বলেছি সে সময়গুলিতে যদি দোয়া করেন এবং দোয়ার মধ্যে
যদি এই কলমাগুলি পাঠ করেন ইনশা আল্লাহ তায়ালা কোন ফরিয়াদ কোন দোয়া আল্লাহর দরবারে
কবুল না হয়ে ফিরে আসবে না।
আমাদের
ঈমানের কমজুরির কারনে আমরা তাড়াহুড়া করি অথচ আল্লাহ কুরআনে এরশাদ করেন মানুষ আসলেই
খুব তাড়াহুড়া কারি। সুতরাং তাড়াহুড়া করবেন না বরং দোয়া কবুল হওয়ার জন্য অপেক্ষা
করতে থাকুন। আল্লাহ তায়ালা সব কিছু জানেন তিনি এটাও জানেন কোন সময় কোন দোয়া কবুল
করলে আমাদের কল্যান হবে আমাদের ফায়দা হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বুঝার ও আমল
করার তৌফিক দান করুন আমিন।
কোন মন্তব্য নেই