আপনি কি মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত? মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতির ৭টি চিহ্ন
আপনি কি মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত? মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতির
৭টি চিহ্ন
মৃত্যু যে কোন সময় চলে আসতে পারে, কখন কার মৃত্যু হবে
কেহ জানেনা,
এই মৃত্যুর পরই আছে অনন্ত জীবন সে জীবনের জন্য প্রত্যেক
মুসলমানের প্রস্তুতি গ্রহণ করা উচিত, আজ আমি আপনাদেরকে কুরআন হাদীসের আলোকে সে ৭টি
আলামত ও চিহ্ন তুলে ধরব যে সব আলামত ও চিহ্ন যদি আপনার মধ্যে জমা করতে পারেন তাহলে
আপনি মৃত্যুর জন্য পরিপূণ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন, আপনার আর আখেরাতের জন্য চিন্তা
নাই। তাই আপনি যদি মুসলমান হয় তাহলে আপনার জন্য আজকের ভিডিওটি অত্যন্ত গুরুত্বপূণ,
কারন এ ধরনের বিষয়বস্তুর ভিডিও বা বয়ান আপনি ইউটিউবে বাংলায় ২য় আরেকটি খুঁজে পাবেন
না। তাই অনুরোধ করব শেষ পযন্ত দেখবেন আশা করি আপনার ভালো লাগবে।
রাসুলুল্লাহ (দ) এরশাদ করেন
(ইজা আমছাইতা ফালা তানতাজিরিস ছাবাহ)
যখন সন্ধ্যা নেমে আসে সকালের জন্য অপেক্ষা করিওনা
(ওয়া ইজা আছবাহতা ফালা তানতাজিরিল মাসাহ)
সকাল হয়ে গেলে সন্ধ্যার জন্য অপেক্ষা করিওনা
১। মৃত্যুর জন্য প্রথম প্রস্তুতি
হযরত হাসান বসরী (রহ) এক সাগরিদকে পাঠালেন মসজিদে প্রথম
কাতারে কারা আছে তা দেখার জন্য, সাগরিদ দেখে এসে বলল হুজুর প্রথম কাহারে সব লোক
গরীব, তখন হাসান বসরী (রহ) বললেন কিয়ামতের দিনও কাতার এভাবেই হবে অথ্যাৎ প্রথম
কাতারে গরীব ফকিররাই হবেন, আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত সেদিন তারা হবে যারা দুনিয়াতে
প্রথম কাতারে থাকে। আর সহি বুখারীর হাদীস যে যত বেশী পিছে থাকবে (ফা
আখখারাহুল্লাহ) আল্লাহ তাকে নিজ রহমত থেকে দুরে সরিয়ে দেন।
সে জন্য রাসুলুল্লাহ (দ) এরশাদ করেন যদি লোকেরা জানত
আযানের ফজিলত কি? প্রথম কাতারের ফজিলত কি? তাহলে তারা এই ফজিলতের জন্য লটারি করত।
সে জন্য সাহাবাগন আযান দেয়ার জন্য লটারি দিত। আর প্রথম কাতারে আসার জন্য তারা যদি
হামাগুড়ি দিতে হয় হামাগুড়ি দিয়ে হলেও আসবে। কিয়ামতের দিন ১২০ কাতার হবে তার মধ্যে
উম্মতে মুহাম্মাদির হজে ৮০ কাতার আর বাকী ১লাখ ২৪ হাজার নবীদের উম্মতের কাতার হবে
মাত্র ৪০টি, অতএব যারা দুনিয়ায় কাতারে প্রথমদিকে হবে তারা আখেরাতেও প্রথমদিকে হবে
সুতরাং আপনি যদি নামাজের জন্য প্রথম কাতারে আগে ভাগে পৌঁছতে পারেন তাহলে আপনি
মৃত্যুর জন্য যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন।
২। মৃত্যুর জন্য ২য় প্রস্তুতি
মানুষ লম্বা লম্বা আশা করে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার আশা করে
তাই তওবা না করে গুনাহের মধ্যে লিপ্ত থাকে, সে চিন্তা করে এখনো সুস্থ আছি সবল আছি
আরো কিছুদিন দুনিয়াদারি করে নিই, কিন্তু মানুষ যদি দুনিয়াদারিকেও আল্লাহ ও আল্লাহর
রাসুলের তরিকা মত করে সেটাও আর দুনিয়া থাকেনা সেটাও দ্বীন হয়ে যায়, তাই দ্বীনদারীর
সাথে দুনিয়া করতে হবে সাথে সাথে গুনাহ হয়ে গেলে তওবা করে পাক সাফ হয়ে যেতে হবে,
আগামীকাল তওবা করব এই ধোকায় পরে থাকা যাবেনা। (আল মাওতু এয়াতি বাগতা) মৃত্যু হঠাৎ
আসে। (ইন্নাল্লাহা এয়াকবালু তাওবাতা আবদি মা লাম ইউগারগির) তাই মৃত্যুর গরগরা আসার
আগে তওবা করে নিতে হবে, কারন গড়গড়া চলে আসলে তখন তওবার দরজা বন্ধ হয়ে যায়।
৩।মৃত্যুর জন্য ৩য় প্রস্তুতি
মানুষ মৃত্যুকে ভুলে থাকে কিন্তু মৃত্যু আসবেই আসবে, তাই
মৃত্যুর কথাকে মনে করার জন্য রাসুলুল্লাহ (দ) জানাযায় শরীক হওয়ার জন্য দাফন কাফনে
উপস্থিত হওয়ার জন্য কবর জেয়ারত করার জন্য হকুম দিয়েছেন যাতে আমরা ছবক গ্রহণ করতে
পারি - (ফাইন্নাহা তুজাক্কিরুল আখিরা) এই জন্য কবর জিয়ারত কর যাতে আখেরাতের কথা
স্মরণ হয়। (তিরমিজি ১০৫৩)
৪। মৃত্যুর জন্য ৪থ প্রস্তুতি
(আকসিরু জিকরা হাদিমিল লাজ্জাত) বেশী বেশী মৃত্যুর স্মরণ করা - সব সময় এটা মনে করা না জানি কখন মৃত্যু বরণ
করতে হয়।
(ফামা জাকারাহু আবদুন ক্বাত) ইবনে হিব্বানের হাদীস নম্বার ২৯৮২ যে বান্দা মৃত্যুকে
স্মরণ করে আল্লাহ তার অন্তরকে প্রসস্থ করে
দেন। ফলে তার মনে মৃত্যুর ভয় থাকেনা বরং সে সদা মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকে।
সে জন্য সলেফে সালেহিন বলতেন যে মৃত্যুর ভয়ে ভীত হয় সেটা
তার ঈমানের দুর্বলতার আলামত। আর যে মৃত্যুর ভয়ে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে সেটা
তার ঈমানের উচ্চতার আলামত।
আয়শা (রা) এর কাছে এক নারী এসে বলেন আমার মন খুব শক্ত,
তখন আয়শা (রা) বলেন (আকসিরি বিজিকরিল মওত)
মৃত্যুকে বেশী বেশী স্মরণ কর ফলে তোমার মন নরম হয়ে যাবে। কিছুদিন পর সে মহিলা এসে
বলেন যখন থেকে আমি চ্তিা করতে লাগলাম যদি মৃত্যু চলে আসে আমার কি হবে তখন থেকে
আমার অন্তরের হালতই বদলে গেল।
আম্মার ইবনে এয়াসের (রা) বলেন মৃত্যুকে স্মরন
যে করে তার আলামত হল (কাফা বিল মওতে ওয়ায়েজা) মৃত্যু অনেক বড় নসিহত,
আবু দারদা (রা) বলেন (মান আকসারা মিন জিকরিল
মাওত) যে বেশী বেশী মৃত্যুকে স্মরণকরে ২টি
কাজ হয় সে কারো সাথে হিংসা করে না দুনিয়ার খুশি তার কাছে মূল্যহীন বরং আখেরাতের
খুশীই তার কাছে সবচেয়ে মূল্যবান।
হযরত কাব আহবার (রহ) বলেন যে দুনিয়ার মধ্যে সব
সময় মৃত্যুকে স্মরণ করে তার কাছে দুনিয়ার সকল মসিবত হালকা মনে হয়। মৃত্যু অনেক বড়
মসিবত তার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে বাকী সব মসিবত হালকা।
হাসান বসরী (রহ) ফরমান যে বেশী বেশী মৃত্যুকে
স্মরণ করে তার সামনে দুনিয়া ছোট হয়ে যায়।সে দুনিয়ার কোন পরওয়া করেনা।
দাক্কাক (রহ) বলেন (মান আকসারা জিকরাল মাওত
উকরিমা বিসালাছ) যে মৃত্যুকে স্মরণ করে তাকে ৩টি নেয়ামত আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতে
দিয়ে দেন
প্রথমত- সে দ্রুত তার গুনাহ থেকে তওবা করে
নেয়,
দ্বিতীয়ত-সে এবাদতে অলসতা ছেড়ে দেয়
তৃতীয়ত- সে দুনিয়ার কোন নেয়ামত না পেলেও
আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট থাকে শোকর আদায়কারী হয়।
আর যে মৃত্যুকে ভুলে যায় তার মধ্যে ৩টি দোষ
সৃষ্টি হয়
১) তওবা করতে অবহেলা করতে থাকে
২) এবাদতে অলসতা করতে থাকে
৩) আর আল্লাহর দেয়া নেয়ামতের সে শোকর আদায়
করেনা, তাতে তার চাহিদা পুরণ হয়না। ফলে অনেক কিছু থাকলেও সারাক্ষন অভাব অভাব বলে
জিকির করে।
৫।মৃত্যুর জন্য ৫ম প্রস্তুতি
অছিয়ত লিখে রাখা, হাদীসে এসেছে সহি বুখারীর রেওয়ায়েত
২৭৩৮
‘আবদুল্লাহ্ ইবনু
‘উমার
(রাঃ) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, কোন মুসলিম
ব্যক্তির উচিত নয় যে, তার অসীয়াতযোগ্য কিছু (সম্পদ) রয়েছে, সে দু’রাত কাটাবে অথচ তার
নিকট তার অসীয়াত লিখিত থাকবে না।
৬। মৃত্যুর জন্য ৬ষ্ঠ প্রস্তুতি
সব সময় মৃত্যুর যে কঠিন কষ্ট সেটাকে স্মরণ করা, কেননা
মৃত্যুর কঠোরতা সকলের উপর পতিত হবে আর তা কিভাবে হবে তা আল্লাহই ভালো জানেন। তবে
মৃত্যু যন্ত্রনা কেমন হবে তার বিভিন্ন বণনা পাওয়া যায়
১। মৃত্যুর সময় মনে হবে যেন মাথা থেকে পা পযন্ত করাত
দিয়ে কাটা হচ্ছে
২। মৃত্যুর সময় মনে হবে জীবন্ত ছাগলের চামড়া ছিলে ফেলা
হচ্ছে
৩। মৃত্যুর সময় মনে হয় কাটাদার গাছ প্রতিটি রগে রগে
ঢুকিয়ে দিয়ে সে গাছটি টান দিচ্ছে
৪। মৃত্যুর সময় গরম তাবার উপর ১টি জীবন্ত পাখিকে
জ্বালালে যে কষ্ট তেমন কষ্ট হবে
৫।কারো ক্ষেত্রে মনে হবে যেন সাত আসমান তার উপর ভেঙ্গে
পড়েছে।
আর সে মুহুর্তে কলমা পড়তে পারা অনেক বড় নেয়ামত
৭।মৃত্যুর জন্য ৭ম প্রস্তুতি
বেশী বেশী লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর জিকির করা কেননা
(লাক্কিনু মাওতাকুম বি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ)মুমিনের চিহ্ন হল সে যখন মৃত্যু বরণ
করে তখন কালিমা পড়ে, আর তার ঘাম কপালে প্রকাশিত হয়, সে জন্য যে গোটা জিন্দেগী লা
ইলাহা ইল্লাল্লাহর জিকির করবে মৃত্যুর সময় যদি সে বেহুশও থাকে সে কলমা পড়তে পড়তে
বিদায় নিবে।
কোন মন্তব্য নেই