রমজানের প্রস্তুতি-১, আমল কম নেকী বেশী

 রমজানের প্রস্তুতি-১,  আমল কম নেকী বেশী



(এয়া আইয়্যুহাল্লাজিনা আমানু কুতিবা আলাইকুমুস সিয়ামু কামা কুতিবা আলাল্লাজিনা মিন কাবলিকুম লায়াল্লাকুম তাত্তাকুন)

আল্লাহ তায়ালা উম্মতে মুহাম্মদিকে পবিত্র কুরানে পাকে৮৮ জায়গায় অতি পেয়ার ও মহব্বত ভরা ভাষায় ডাক দিয়েছেন, আমাদের জন্য আল্লাহর মহব্বত ভরা ভাষা হল (এয়া আইয়্যুহাল্লাজিনা আমানু) আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সরাসরি সম্বোধন করছেন তা আমাদের জন্য কত বড় সৌভাগ্যের বিষয় কিন্তু আমরা তা বুঝতে পারি না।

অথচ ইহুদীদেরকে আল্লাহ পাক মাত্র একবার সম্বোধন করায় তারা দাবী করে যেহেতু আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সম্বোধন করেছেন সেহেতু তিনি আমাদেরকে আমাদের পাপের জন্য শাস্তি দিবেন না দিলেও অতি সামান্য সময় জাহান্নামে দিবেন আবার জান্নাত দিয়ে দিবেন।

এ আয়াতে আল্লাহ হে ঈমানদারগন বলে সম্বোধন করে বলেন (কুতিবা আলাইকুমুস সিয়াম) অর্থ্যাৎ তোমাদের জন্য রমজানের রোজা ফরয করা হয়েছে।

এ রমজানের রোজাটাকে আমরা শাস্তি মনে করতে পারি, আমাদের জন্য পানিশমেন মনে করতে পারি, তাতে উম্মতে মুহাম্মদি পেরেশান হয়ে পড়বে, সেটা যাতে না হয় সেজন্য আল্লাহ তায়ালা এতটুকুতে শেষ না করে বলছেন (কামা কুতিবা আলাল্লাজিনা মিন কাবলিকুম) অর্থ্যাৎ যেমন ভাবে পূর্বের ধর্মের লোকদের জন্য ফরয করা হয়েছিল।

আল্লাহ পাক এ কথা বলে মুলত উম্মতে মুহাম্মদীকে সান্তনা দিচ্ছেন যে হে আমার বান্দারা তোমাদেরকে এ রোজা ফরয করছি কোন ধরনের শাস্তি স্বরুপ নয় বরং এমন রোজা তোমাদের পূর্ববতীদের উপরও ফরয ছিল।

যেমন আমরা হাদীসে পাকে জানতে পারি সওমে দাউদির ব্যপারে অর্থ্যাৎ দাউদ (আঃ) এর সিস্টেম ছিল ১দিন ইফতার করবে অথ্যাৎ খাওয়া দাওয়া করবে ১দিন রোজা রাখবে, আল্লাহ পাক আমাদেরক এমন কঠিন বিধান দেন নি, আলহামদুলিল্লাহ।


খ্রীষ্টানদের জন্য ২ মাস রোজার বিধান ছিল

আর ইহুদীদের জন্য ৪০ দিনের রোজার বিধান ছিল

আর আমাদের জন্য ৩০দিনের রোজার বিধান দেয়া হয়েছে

উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য কম আমলে নেকী বেশী কেন?

আর ৩০ দিন রোজা রাখলে আমরা ৩০০ দিন রোজা রাখার সাওয়াব পাব আর তার সাথে সাওয়াল মাসে ৬ রোজা রাখলে আরো ৬০ দিনের সাওয়াব আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দান করবেন মুলত ৩৬ দিন রোজা রাখার ফলে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সারা বছর রোজা রাখার নেকি দান করবেন। আলহামদুলিল্লাহ।

(মান জায়া বিল হাসানাতি ফালাহু আশারু আমছালিহা)

মেহনত কম নেকী বেশী:

হাদীসে পাকে আছে নবী করিম (দঃ) উদাহারন স্বরুপ বলেন একজন লোক সকাল থেকে জোহর পর্যন্ত কাজ করে ১ কিরাত বদলা পেল, আবার আরেকজন লোক জোহর থেকে আছর পর্যন্ত কাজ করে ১ কেরাত বদলা পেল, আর অন্যজন আছর থেকে মাগরীব পর্যন্ত কাজ করে ১ কেরাত বদলা পেল। ১ম ও ২য় জন লম্বা সময় কাজ করল যতটুকু বদলা পেল ৩য় জন অতি অল্প সময় কাজ করে পুর্বের ২ জনের সমান বদলা পেল আর ৩য় জনের উদাহারন হল উম্মতে মুহাম্মদী। কারন উম্মতে মুহাম্মদী অতি অল্প সময় কাজ করবে কিন্তু বদলা পাবে যারা বেশী কাজ করেছেন তাদের সমান।

যেমন একজন লোক সারাদিন কাজ করে ঘন্টায় ১০০ টাকা  করে কিন্তু সে যখন উভারটাইম করে তখন তার বদলা হয় ঘন্টায় ২০০ টাকা। আমরা উম্মতে মুহাম্মদীকে আল্লাহ তায়ালা বিভিন্নভাবে শর্টকাটে অধিকহারে নেকী দেওয়ার ব্যবস্থা করে রেখেছেন।

যেমন ১ নেকির বদলা ১০ গুন, রমজানের ৭০ গুন, আবার শবে কদরের রাতে এক রাতে ১০০০ মাসের চাইতে বেশী সাওয়াব,

এর কারন হল পূর্বের যুগে মানুষের হায়াত লম্বা ছিল তারা এবাদতও বেশী করতে পারত, কিন্তু উম্মতে মুহাম্মদীর হায়াত হল অল্প, গড়ে ৬০/৭০ বছর এ অল্প সময়ে তারা আগের উম্মতদের সাথে নেকীতে প্রতিযোগীতায় দাঁড়াতে পারবে না, তাই আল্লাহ তায়ালা এটা অনেক বড় অনুগ্রহ যে তিনি আমাদেরকে রমজান দিয়েছেন, শবে কদর দিয়েছেন, ৫ ওয়াক্ত নামাজের বদলায় ৫০ ওয়াক্তের সাওয়াব, ৩৬ রোযার বদলায় সারা বছরের রোজার সাওয়াব দিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ।

উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে অনেক বড় রহমত যে আমরা আমল করব কম কিন্তু আমাদের নেকী হবে বেশী। আর এই সুযোগ রমজান মাসে বেশী তাই রমজান আসার আগেই বাহিরের সব কাজ কারবার গুটিয়ে রমজানে বেশী বেশী এবাদত কুরআন তেলাওয়াত, তাহাজ্জুদ, তারাবী, জামায়াতে নামাজ, দান সদকা, শবে কদর পালনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করাটা হল প্রকৃত বুদ্ধমানের কাজ।


কোন মন্তব্য নেই

borchee থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.