পিরিয়ড অবস্থায় মহিলারা কিভাবে শবে কদর পালন করবেন?
পিরিয়ড অবস্থায় মহিলারা কিভাবে শবে কদর পালন করবেন?
শবে কদর বা লায়লাতুল কদরে মহিলারা পিরিয়ড অবস্থায়
কিভাবে আমল করবেন আজ আমি সে বিষয়ে কুরান ও সুন্নাহর আলোকে আলোচনা করব,
শবে কদর
এমন একটি রাত যে রাতের বননা দিতে দিয়ে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন- (লাইলাতুল কদরে খাইরুন মিন আলফি শাহার) এই লায়লাতুল কদর
হল হাজার মাস থেকে উত্তম, অত্যাৎ এক রাতের এবাদতে আপনি হাজার মাস রাত জেগে এবাদতের
সাওয়াব অজন করতে পারবেন। এই রাতে ফেরেশতারা মানুষের দোয়ার সাথে আমিন বলেন, এবাদতকারীদেরকে
সালাম দেয়, তাদের জন্য দোয়া করে, জিবরীল ফেরেশতা মুসাফাহা করে, এমনটি আগামী ১ বছরের
বাজেট পাশ হয়। তাই এই রাত প্রত্যেকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তাছাড়া বুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদীস হযরত আবু হুরাইরা
(রাঃ) রাসুল (দঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন যে ব্যক্তি কদর রাতে ঈমান ও ইখলাসের
সাথে কিয়াম করবে তার পূববর্তী যাবতীয় গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।
কিন্তু পিরিয়ডের সময় যেহেতু কুরআন তেলাওয়াত ও নামাজ
পড়া যাবেনা সেহেতু এমন কিছু দোয়া জিকির ও আমল আজ শিখে নিন যা আপনার শবে কদরকে মিস হতে
দিবেনা। কদরের রাতে আপনি বঞ্চিত হবেন না ইনশা আল্লাহ।
প্রথমত দোয়া করা যা আমাদের প্রিয় নবী হযরত আয়শাকে শিখিয়েছেন তিরমিযি শরীফের
হাদীস হযরত আয়শা বলেন আমি হুযুর (দঃ) কে প্রশ্ন করলাম হে আল্লাহর রাসুল যদি আমি শবে
কদর সম্পর্কে জানতে পারি তাহলে কি পড়ব, তখন প্রিয় নবী বললেন এভাবে দোয়া কর (আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া
ফাফু আন্নি) হে আল্লাহ তুমি ক্ষমাশীল। তুমি ক্ষমা পছন্দ করো, সুতরাং আমাকে
ক্ষমা কর।
তাহলে পিরিয়ড কালীন আপনি যেহেতু নামাজ কুরান তেলাওয়াত
করতে পারবেন না আপনার জন্য এই ১টি কাজ করা সম্ভব তা হল দোয়া করা, যা নবীজি শিক্ষা দিয়েছেন।
আর সে দোয়াতে ১টি বিষয় স্পষ্ট তা হল ক্ষমা চাওয়া, ক্ষমা চাওয়ার এই দোয়াটির পাশাপাশি
আপনারা এসতেগফার পড়বেন, আর বেশী বেশী এসতেগফারের দ্বারা আল্লাহ গুনাহ মাফ করেন, রিযিক
বৃদ্ধি করে দেন, হায়াতে বরকত দান করেন,
শুধু আসতাগফিরুল্লাহ আসতাগফিরুল্লাহ এভাবে জিকির
করতে পারবেন, অথবা, (আসতাগফিরুল্লাহা
রাব্বি মিন কুল্লি জানবিয়াউ ওয়াআতুবু ইলাইহি লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহিল
আলিয়্যিল আজিম) পড়বেন। কমপক্ষে ১০০ বার।
তাহলে আপনি সুন্দর করে অজু করে এ দোয়া ও এসতেগফার এর আমল করবেন।
২য় আমল হল জিকির- মহিলারা পিরিয়ড অবস্তায় জিকির করতে পারবেন, তাই অজু করে বসে
বসে জিকির করবেন - তিরমিযী শরীফের হাদীস হযরত আবুদ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন
রাসুল (দঃ) এরশাদ করেন, আমি কি তোমাদেরকে এমন আমল সম্পকে সুসংবাদ দিবনা, যা হতে তোমাদের
সর্বোত্তম আমল, তোমাদের মুনিবের নিকটও পছন্দনীয় এবং মর্যাদার নিরীখে যা বুলন্দ, স্বণ
ও সম্পদ ব্যয় করার চেয়েও উত্তম, এমনকি শত্রুর সাথে জিহাদ করা অপেক্ষাও উত্তম। সাহাবীগন
আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসুল আপনি আমাদেরকে বলুন, তখন রাসুল (দঃ) এরশাদ করলেন তা হল
আল্লাহর জিকির।
তাহলে আপনি পিরিয়ডের কারনে নাপাক হলেও অজু করে বসে
বসে আপনি এই উত্তম আমলটি করতে পারেন,
এবার
আসুন জিকিরে কি পড়বেন?
তিরমিজি শরীফের হাদীস-
হযরত জাবের (রাঃ) বলেন ,রাসূল (সাঃ) কে আমি বলিতে
শুনিয়াছি ,সকল জিকিরের মধ্যে উত্তম জিকির হইতেছে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং সকল দোয়ার মধ্যে উত্তম দোয়া হইল আলহামদুলিল্লাহ ।-(তিরমিজি)
তাছাড়া এমন ৭টি জিকির আছে যা খুবই সহজ
তবে এর প্রতিদান অফুরন্ত সে জিকিরগুলি হল
১) প্রতিদিন ১০০ বার সুবহান আল্লাহ্ পাঠ করলে ১০০০ সাওয়াব
লিখা হয় এবং ১০০০ গুনাহ মাফ করা হয়। [সহীহ মুসলিম-৪/২০৭৩]
২) আলহামদুলিল্লাহ মীযানের পাল্লাকে ভারী করে দেয় । [তিরমিযী-৫/৪৬২,ইবনে মাযাহ-২/১২৪৯,হাকিম-১/
৫০৩,]
৩) সুবহান আল্লাহ ওয়াল হামদুলিল্লাহ ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবর এই কালিমাগুলি আল্লাহর
নিকট অধিক প্রিয় এবং নবী (সঃ) বলেনঃ পৃথিবীর সমস্ত জিনিসের চইতে আমার নিকট অধিক প্রিয়।
[সহীহ মুসলিম -৩/১৬৮৫, ৪/২০৭২]
৪) যে ব্যক্তি সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী প্রতিদিন ১০০ বার
পাঠ করবে সমুদ্রের ফেনা পরিমান (সগীরা) গুনাহ থাকলে ও তাকে মাফ করে দেওয়া হবে। [সহীহ
আল-বুখারী-৭/১৬৮,সহীহ মুসলিম-৪/২০৭১]
৫) নবী (সা.) বলেন, সুবহানাল্লাহি ওয়া বি হামদিহী সুবহানাল্লাহিল
আযীম এই কালীমাগুলি জিহ্বায় উচ্চারনে সহজ, মীযানের পাল্লায় ভারী, দয়াময় আল্লাহর
নিকট প্রিয় । [সহিহ আল- বুখারী-৭/ ১৬৮,সহীহ মুসলিম-৪/২০৭২]
৬) নবী (সা.) বলেন,
লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা
বিল্লাহ হচ্ছে জান্নাতের গুপ্তধন সমুহের মধ্যে একটি গুপ্তধন। [ সহীহ
আল-বুখারী -১১/২১৩, সহীহ মুসলিম-৪/২০৭৬]
৭) নবী (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার
দুরুদ পাঠ করবে আল্লাহ তাআলা তার প্রতি দশ বার রহমত বরষন করবেন- (আল্লাহুম্মা ছাল্লে আলা সায়্যেদিনা মুহাম্মদ
ওয়ালা আলি সায়্যেদিনা মুহাম্মদ ওয়া আলিহি ওয়াবারিক ওয়াছাল্লিম) এবং তিনি (সা.)
আরো বলেন, যে ব্যক্তি আমার প্রতি সকালে দশবার এবং বিকেলে দশবার দুরুদ পাঠ করবে সে ব্যক্তি
কিয়ামতের দিন আমার শাফায়াত পাবে । [তাবারানী, মাজময়াউজ জাওয়াঈদ-১০/১২০, সহীহ আত-তারগীব
ওয়াত তারহীব-১/২৭৩]
তাহলে হাদীসে বর্ণিত এসব জিকির আপনি ১০০ বার করে
পড়তে পারেন, বেশী বেশী দরুদ শরীফ পড়বেন
এরপর নিজ ভাষায়ও দোয়া করবেন, নিজের জন্য নিজের পরিবার
পরিজন ও দেশবাসীর জন্য দোয়া করতে পারেন।
কোন মন্তব্য নেই