এলমে দ্বীন ও আলেমের মর্যাদা
এলমে দ্বীন ও আলেমের মর্যাদা
(ইকরা
বিইসমি রাব্বিকাল্লাজি খালাক)
হে রাসুলে আকরাম!
আপনি রবের নামে পড়ুন যিনি সৃষ্টি করেছ
এলেম ২ প্রকার: (১) এলমে দ্বীন (২) এলমে দুনিয়া
এলমে দুনিয়া শুধুমাত্র দুনিয়াতে লাগে,
এলমে দ্বীন দুনিয়াতেও লাগে কবরে, হাশরে,
জান্নাতেও লাগে।
এলমে দুনিয়া এক সময় দুনিয়াতেও কাজে লাগেনা,
যেমন একজন ব্যাংকার বৃদ্ধ অবস্থায় আর ব্যাংকে চাকরী করতে পারেনা অবসরে চলে যান, তখন
তার আর হিসাব নিকাশের কোন কিছুই কাজে আসেনা, তখন চিন্তা করে সুরা ফাতেহাটা একটু শিখা
দরকার, সুরা এখলাসটা শিখা দরকার, নামাজটা শিখা দরকার, কুরআনটা শিখা দরকার, কিন্তু তখন
আর সম্ভব হয়ে উঠেনা। ফলে আফসোস করতে করতে কবরে চলে যেতে হয়।
এলমে দ্বীনের মুলমন্ত্রL আকাশ টিকিয়ে রাখার জ্ঞান এলমে দ্বীনের
মুলমন্ত্র হল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ, দেখুন পৃথিবী একদিন ধ্বংস
হয়ে যাবে আসমান সমুহ ভেঙ্গে ভেঙ্গে পড়বে, পাহাড় সমুহ তুলার মত উড়বে যেমন আল্লাহ বলেন
সুরা ইনফিতার
بِسْمِ
اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ إِذَا السَّمَاء انفَطَرَتْ
যখন আকাশ বিদীর্ণ হবে, [সুরা ইনফিতার - ৮২:১]
وَإِذَا
الْكَوَاكِبُ انتَثَرَتْ
যখন নক্ষত্রসমূহ ঝরে পড়বে, [সুরা ইনফিতার - ৮২:২]
وَإِذَا
الْبِحَارُ فُجِّرَتْ
যখন সমুদ্রকে উত্তাল করে তোলা হবে, [সুরা ইনফিতার - ৮২:৩]
وَإِذَا
الْقُبُورُ بُعْثِرَتْ
এবং যখন কবরসমূহ উম্মোচিত হবে, [সুরা ইনফিতার - ৮২:৪]
এখন পৃথিবীর সকল ইঞ্জিনিয়ার মিলে যদি দুনিয়ার
সকল সম্পদ ব্যয় করে আসমানকে টিকিয়ে রাখার জন্য পিলার বানাতে থাকে এই আসমানকে কি কেয়ামতের
দিন টিকিয়ে রাখতে পারবেন? পারবেন না,
আর হাদীস শরীফে আসে ততদিন পযন্ত কিয়ামত
হবেনা যতদিন দুনিয়াতে একজন বান্দাও লা ইলা ইল্লাল্লাহ বলবে, তাহলে বুঝা যায় দুনিয়াতে
একজনও যদি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলার লোক বাকী থাকে সে বান্দার জন্যই আসমান জমিন পাহাড়
সব টিকে থাকবে, দেখুন একদিকে দুনিয়ার সকল ইঞ্জিনিয়ারের দুনিয়াবি জ্ঞানের শক্তি অপরদিকে
দ্বীনি এলম এর মুল মন্ত্র লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর শক্তি।
প্রশ্ন: ডাক্তারের সেবার সাওয়াব
কি কবরে হাশরে পাবেনা?
আমি বলেছি দুনিয়ার জ্ঞান কবরে কোন কাজে
আসবেনা, কিন্তু এখন যদি কেহ প্রশ্ন করে ডাক্তারি পড়ার পর সে ডাক্তার যে রোগীর সেবা
করছে সে ডাক্তারকি সে সেবার সাওয়াব ও প্রতিদান কবরে হাশরে পাবেনা? এর উত্তর হল হ্যাঁ
অবশ্যই পাবে, তবে এই সেবা অনেক বিধর্মীরাও করেন, অনেক ইহুদী, খ্রিষ্টান, হিন্দু, বৌদ্ধরাও
করেন তারা তাদের সেবার প্রতিদান কবরে হাশরে পাবেনা কারন তার কাছে দ্বীনের মুলমন্ত্র
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর নুর নাই, পক্ষান্তরে যে লোকের কাছে এই কলমার নুর থাকবে তার সেবা
তার ডাক্তারি দুনিয়াতেও কাজে আসবে কবরে হাশরেও কাজে আসবে।
আর সে দ্বীনের জ্ঞান আমদের কাছে এসেছে অহির মাধ্যমে নবীর রাসুলের মাধ্যমে
আসমানি কিতাবের মাধ্যমে।
অহি নাজিলের ঘটনা: হযরত আয়শা (রা) বয়ান করেন, রাসুলুল্লাহ
(দ) এর উপর অহির সুচনা হয় সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে। তিনি রাতে যা স্বপ্ন দেখতেন তা দিনে
হুবহু সংগঠিত হয়ে যেত। এরপর তিনি একাকি নিজনে থাকা পছন্দ করতেন, সে সুবাধে মক্কার গারে
হেরাতে তিনি ধ্যান মগ্ন থাকতেন। এভাবে একদিন ধ্যান মগ্ন থাকা অবস্থায় হযরত জিবরাইল
অহি নিয়ে হাজির হলেন, ফেরেশতা এসে বললেন (পড়ুন! হুজুর (দ) বললেন আমি পড়ুয়া নই, এরপর
ফেরেশতা জোরে গলায় লাগালেন আর চাপ দিয়ে আমাকে ছেড়ে দিলেন, আবার বললেন পড়ুন আমি বললাম
আমি পড়ুয়া নই। ফেরেশতা পূর্ণ শক্তি দিয়ে আবার চাপ দিয়ে ছেড়ে দিলেন আর বললেন পড়ুন আমি
আবার বললাম আমি পড়ুয়া নই। এভাবে ৩ বার চাপ দেয়ার পর ফেরেশতা বললেন
সুরা
আলাক
بِسْمِ
اللهِ
الرَّحْمنِ
الرَّحِيمِ
اقْرَأْ
بِاسْمِ
رَبِّكَ
الَّذِي
خَلَقَ
পাঠ করুন
আপনার পালনকর্তার নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন [সুরা আলাক - ৯৬:১]
خَلَقَ
الْإِنسَانَ
مِنْ
عَلَقٍ
সৃষ্টি
করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে। [সুরা আলাক - ৯৬:২]
اقْرَأْ
وَرَبُّكَ
الْأَكْرَمُ
পাঠ করুন,
আপনার পালনকর্তা মহা দয়ালু, [সুরা আলাক - ৯৬:৩]
الَّذِي
عَلَّمَ
بِالْقَلَمِ
যিনি কলমের
সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন, [সুরা আলাক - ৯৬:৪]
عَلَّمَ
الْإِنسَانَ
مَا
لَمْ
يَعْلَمْ
শিক্ষা
দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না। [সুরা আলাক - ৯৬:৫]
প্রথম
অহি নাজিলের পর রাসুলুল্লাহ (দ) কাঁপতে কাঁপতে খদিজার কাছে সে ওহি নিয়ে হাজির
হলেন। আর বললেন আমাকে কম্বল আবৃত কর, কম্বল আবৃত কর, ফলে হুজুর (দ) এর ভয় দুর হয়ে
গেল। অতঃপর খদিজা (রা)কে হুজুর (দ) সব
ঘটনা শুনালেন আর বললেন আমি আমার প্রাণের ভয় করছি, তখন হযরত খদিজা (রা) সান্তনা দিয়ে
বললেন আল্লাহ আপনাকে বিমুখ করবেন না কারন আপনি আত্মিয়তার সম্পক ছিন্ন করেননা, দুর্বলদের সাহায্য করেন, সদা সত্য
বলেন। মেহমানদারী করেন। এরপর খদিজা রাসুলুল্লাহ (দ) কে তার চাচাত ভাই ওরাকা বিন
নওফেল এর কাছে নিয়ে গেলেন। ওরাকা বিন নওফেল যিনি জাহেলি যুগে আরবীতে ইনজিল কিতাব
লিখতেন, তিনি খুব বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন আর দৃষ্টিশক্তিও চলে গিয়েছিল, তিনি
রাসুলুল্লাহ (দ) এর অহি নাজিলের সকল ঘটনা শুনে বললেন ভয়ের কোন কারন নাই আগত ব্যক্তি
হলেন ফেরেশতা যিনি হযরত মুসা (আ) এর কাছেও আসতেন। যদি আমি
যুবক হতাম সে সময় আমি যদি জীবিত থাকতাম যে সময় আপনার গোত্রের লোকেরা আপনাকে আপনার
জন্মভুমি থেকে বের করে দিবে। হুজুর প্রশ্ন করলেন সত্যিই কি আমার গেত্রের
লোকেরা আমাকে বের করে দিবে? ওরাকা বললেন হ্যাঁ যাদের কাছেই ওহি নাজিল হয়েছে
তাদেরকেই তাদের গোত্রের লোকেরা শত্রুতামি করত, যদি সত্যিই আমি সে সময় জীবিত থাকি
তাহলে আমি আপনাকে যথাসাধ্য সহযোগিতা করব।
#
সুতরাং দেখা যাচ্ছে রসুলুল্লাহ (দ) এর কাছে প্রথম অহি নাজিল হয়েছে (ইকরা- পড়ুন)
শব্দ দিয়ে।
#
আবার প্রথম ৫ আয়াত নাজিল হয়েছে তাতে ৪থ আয়াতে লেখার কথাও আল্লাহ তায়ালা বয়ান
করেছেন
#
আল্লাহ তায়ালা কলম সৃষ্টি করেছেন আর কলমকে হকুম দিলেন লিখ। কলম বললঃ হে প্রভূ! কি লিখবো? আল্লাহ
বললেনঃ লিখ ইতিপূর্বে যা হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত যা কিছু হবে।
তবে
কলম কে যেহতু আগে যা হয়েছে তাও লিখতে বলা হয়েছে সেহেতু বুঝা যায় কলমের আগেও আল্লাহ
আরো কিছু সৃষ্টি করেছেন।
তবে
কলম আল্লাহর অনেক বড় আজিমুশশান একটি সৃষ্টি,
# আর এ যুগের সবচেয়ে বড় কলম হল কম্পিউটার
#
এখন হাতে লিখতে হয়না মুখে বললেই লেখা হয়ে যায়।
যারা
জ্ঞান এবং যারা মুর্খ তাদের মধ্যে আল্লাহ পাথ্যক বননা করেছেন:
যেমন
আল্লাহ তায়ালা সুরা যুমারের ৯ নং আয়াতে এরশাদ করেন
قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ
وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُوْلُوا الْأَلْبَابِ
বলুন,
যারা জানে এবং যারা জানে না; তারা কি সমান হতে পারে? চিন্তা-ভাবনা কেবল তারাই করে,
যারা বুদ্ধিমান। [সুরা যুমার - ৩৯:৯]
আবার আলেমদেরকে আল্লাহ তায়ালা উচ্চ মর্যাদা দেয়ার ঘোষনা দিয়েছেন
সুরা মাজাদালাহ ১১ নং আয়াতে এরশাদকরেন
يَرْفَعِ اللَّهُ
الَّذِينَ آمَنُوا مِنكُمْ وَالَّذِينَ أُوتُوا
الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ
তোমাদের
মধ্যে যারা ঈমানদার এবং যারা জ্ঞানপ্রাপ্ত, আল্লাহ তাদের মর্যাদা উচ্চ করে
দিবেন। [সুরা মুজাদালাহ - ৫৮:১১]
জান্নাতে ৭০০ স্তর মর্যাদা পাবেন আলেমগণ
হযরত
ইবনে আব্বাস (রা) বয়ান করেন জান্নাতে সাধারণ লোকের তুলনায় ওলামায়ে কেরামকে ৭০০ স্তর
উঁচু মর্যাদা দেয়া হবে।(এহিয়াউল উলুম ওয়কুতুল কুলুব)
আল্লাহ
বলেন আলেমরাই আল্লাহকে বেশী ভয় পায়: সে
ব্যপারে আল্লাহ তায়ালা সুরা ফাতিরের ২৮ নং আয়াতে এরশাদ করেন-
إِنَّمَا يَخْشَى اللَّهَ مِنْ عِبَادِهِ
الْعُلَمَاء
আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানীরাই কেবল তাঁকে ভয় করে। [সুরা ফাতির - ৩৫:২৮]
হাদিস
শরীফে আছে: যার কল্যান চান আল্লাহ তাকেই জ্ঞান দেন
বুখারীর
৭১ নং হাদিস- হযরত মুয়াবিয়া (রা) বয়ান করেন নবী করিম (দ) এরশাদ করতে শুনেছি- আল্লাহ
তায়ালা যার জন্য কল্যাণের ইচ্ছা করেন তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন।
হাদিস: মুনাফিক দ্বীনের জ্ঞান থেকে বঞ্চিত
তিরমিজির
২৬৮৪ নং হাদিস আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
خَصْلَتَانِ لاَ تَجْتَمِعَانِ
فِي مُنَافِقٍ حُسْنُ سَمْتٍ وَلاَ فِقْهٌ فِي الدِّينِ
দুটো বিষয় এমন আছে কোন মুনাফিকের মাঝে
যার একত্রিত হওয়া সম্ভব নয়। সুন্দর চরিত্র আর দীনের জ্ঞান।
হাদিস: ফকিহ বা বিজ্ঞ আলেম শয়তানের কাছে বিপজ্জনক
তিরমিজির ২৬৮১ নং হাদিস- হযরত ইবনে আব্বাস
(রা) হতে বর্ণিত
قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى
الله عليه وسلم " فَقِيهٌ أَشَدُّ عَلَى الشَّيْطَانِ مِنْ أَلْفِ عَابِدٍ
"
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ একজন ফকীহ (বিজ্ঞ আলিম) শাইতানের জন্য হাজার (মূর্খ) আবিদ অপেক্ষা বিপজ্জনক।
উদাহারণ ঘটনা: এক বুযুগ মসজিদের বাহিরে এক লোককে দেখলেন তার চেহেরা
সুরত দেখে বুযুগ সে যে শয়তান চিনতে পারলেন তাকে জিজ্ঞেস করলেন তুমি মসজিদের বাহিরে
কি করছ, শয়তান উত্তর দিল মসজিদে এক লোক নামাজ পড়ছে তাকে ওয়াস ওয়াসা দেয়ার জন্য মসজিদে
প্রবেশ করতে চাচ্ছি কিন্তু ভয় লাগছে কারন মসজিদে একজন বিজ্ঞ আলেম ঘুমাচ্ছে। ঘুমন্ত
বিজ্ঞ আলেমের ভয়ে শয়তান মসজিদে এক আবেদকে ওয়াসওয়াসা দেয়ার জন্য প্রবেশ করতে ভয় পাচ্ছে।
হাদিস:
আলেমের মর্যাদার অতুলনীয় আলেম এর জন্য কারা কারা দোয়া করেন জানলে অবাক হবেন
তিরমিজির ২৬৮৫ নং হাদিস
فَضْلُ الْعَالِمِ عَلَى الْعَابِدِ كَفَضْلِي عَلَى أَدْنَاكُمْ
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেনঃ একজন আবদের উপর একজন আলিমের ফযীলত। তোমাদের মধ্যে নিকৃষ্টতম ব্যক্তির তুলনায়
আমার ফযীলতের ন্যায়।
ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ
صلى الله عليه وسلم " إِنَّ اللَّهَ وَمَلاَئِكَتَهُ وَأَهْلَ السَّمَوَاتِ
وَالأَرْضِ حَتَّى النَّمْلَةَ فِي جُحْرِهَا وَحَتَّى الْحُوتَ لَيُصَلُّونَ عَلَى
مُعَلِّمِ النَّاسِ الْخَيْرَ
রাসূলুল্লাহ্
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বললেনঃ আল্লাহ্ তাআলা নিজে এবং তাঁর ফিরিশতাগণ,
আসমান ও যমীনের সব অধিবাসী এমনকি গর্তের পিপীলিকা ও (পানির) মাছ পর্যন্ত মানুষকে কল্যাণপ্রসূ
শিক্ষকের (আলিমের) জন্য অবশ্যই দু’আ করে থাকেন।
১টি হাদিসের জন্য মদীনা থেকে দামেস্কে সফর:
ইবনে মাজার ২২৩ নং হাদিস এবং তিরমিজি শরীফের
২৬৮২ নং হাদিস কাসীর ইবনু ক্বায়স (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি দামিশকের মসজিদে
আবূ দারদা -এর কাছে বসা ছিলাম। তখন এক ব্যাক্তি তার নিকট উপস্থিত হয়ে বললো, হে আবূ
দারদা! আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর শহর মদিনা থেকে আপনার নিকট
একটি হাদীস শোনার জন্য এসেছি। আমি জানতে পেরেছি যে, আপনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
থেকে তা বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, তুমি কোন ব্যবসায়িক উদ্দেশে আসোনি তো? সে বললো, না।
তিনি বলেন, অন্য কোন উদ্দেশেও তুমি আসোনি? সে বললো, না। তিনি বলেন, আমি অবশ্যই রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছিঃ
" مَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَلْتَمِسُ فِيهِ عِلْمًا سَهَّلَ اللَّهُ لَهُ طَرِيقًا إِلَى الْجَنَّةِ
যে ব্যাক্তি জ্ঞানার্জনের কোন পথ অবলম্বন করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের দিকে একটি
পথ সুগম করে দেন।
وَإِنَّ الْمَلاَئِكَةَ لَتَضَعُ أَجْنِحَتَهَا رِضًا لِطَالِبِ الْعِلْمِ
ফেরেশতাগণ জ্ঞান অন্বেষীর সন্তুষ্টির জন্য তাদের পাখাসমূহ অবনমিত করেন।
وَإِنَّ طَالِبَ الْعِلْمِ يَسْتَغْفِرُ لَهُ مَنْ فِي السَّمَاءِ وَالأَرْضِ حَتَّى الْحِيتَانِ فِي الْمَاءِ
আর জ্ঞান অন্বেষীর জন্য আসমান ও যমীনবাসী আল্লাহ্র নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে, এমনকি
পানির মধ্যের মাছও।
وَإِنَّ فَضْلَ الْعَالِمِ عَلَى الْعَابِدِ كَفَضْلِ الْقَمَرِ عَلَى سَائِرِ الْكَوَاكِبِ
নিশ্চয় ইবাদাতকারীর উপর আলিমের মর্যাদা তারকারাজির উপর চাঁদের মর্যাদার সমতুল্য।
إِنَّ الْعُلَمَاءَ هُمْ وَرَثَةُ الأَنْبِيَاءِ
আলিমগণ নবীগণের ওয়ারিস।
إِنَّ الأَنْبِيَاءَ لَمْ يُوَرِّثُوا دِينَارًا وَلاَ دِرْهَمًا إِنَّمَا وَرَّثُوا الْعِلْمَ فَمَنْ أَخَذَهُ أَخَذَ بِحَظٍّ وَافِرٍ " .
আর নবীগণ দ্বীনার ও দিরহাম (নগদ অর্থ) ওয়ারিসী স্বত্ব হিসাবে রেখে যাননি, বরং তাঁরা
ওয়ারিসী স্বত্বরূপে রেখে গেছেন ইলম (জ্ঞান)। যে ব্যাক্তি তা গ্রহণ করলো, সে যেন একটি
পূর্ণ অংশ লাভ করলো।
আত তারগিব ওয়াত
তারহিব এর ৭১ নং হাদিস
، إنَّ طَالِبَ الْعِلْمِ تَحُفُّهُ الْمَلائِكَةُ بِأَجْنِحَتِهَا، ثُمَّ يَرْكَبُ بَعْضُهُم بَعْضًا حَتَّى يَبْلُغُوا السَّمَاءَ الدُّنْيَا مِنْ مُحَبَّتِهِمْ لِمَا يَطْلُبُ.
নিশ্চয় ফেরেশতাগণ জ্ঞানাম্বেষণকারীকে ঘিরে রাখেন এবং ডানাগুলো দ্বারা তাকে ছায়া দান
করেন। অতঃপর সে যা অম্বেষণ করে তার ভালবাসায় তাঁরা একে অপরের উপর সওয়ার হয়ে দুনিয়ার
আসমান পর্যন্ত পৌঁছে যায়।
হাদিস:
কোন আমল সবচেয়ে উত্তম এর জবাবে নবী (দ) কি বললেন?
জামে বয়ানুল এলম এর হাদিস নং ২১৪- হযরত
আনাস বিন মালেক (রা) বয়ান করেন এক লোক রাসুলুল্লাহ (দ) এর খেদমতে এসে আরজ করল এয়া রাসুলাল্লাহ
কোন আমল সবচেয়ে আফযল? নবী করিম (দ) এরশাদ করলেন আল্লাহর এলম, সে আবার প্রশ্ন করল হুজুর
(দ) আবার জবাব দিলেন আল্লাহর এলম, সে আবার প্রশ্ন করল হুজুর আবার জবাব দিলেন আল্লাহর
এলম, তখন সে বলল এয়া রাসুলাল্লাহ আমি আপনাকে আমল সম্পর্কে প্রশ্ন করছি আর আপনি আমাকে
এলম এর খবর দিচ্ছেন কেন? তখন রাসুলুল্লাহ (দ) ফরমালেন কম আমল
যদি এলমের সাথে করা হয় তাই উপকার দিবে, আর বেশী আমল অজ্ঞতার সাথে করলে তা উপকার দিবেনা।
জ্ঞান অর্জন করতে লজ্জা করা যাবেনা (মুসা/খিজির)
অনেকে জ্ঞান অজনে লজ্জা করে, অথচ জ্ঞান
অজন করতে লজ্জা করা যাবেনা, যেমন হযরত মুসা (আ) একজন নবী হওয়া সত্বেও একজন অলির কাছে
জ্ঞান অজন করতে লজ্জাবোধ করেননি।
فَوَجَدَا عَبْدًا مِّنْ عِبَادِنَا آتَيْنَاهُ
رَحْمَةً مِنْ عِندِنَا وَعَلَّمْنَاهُ مِن لَّدُنَّا عِلْمًا
অতঃপর তাঁরা আমার বান্দাদের মধ্যে এমন
একজনের সাক্ষাত পেলেন, যাকে আমি আমার পক্ষ থেকে রহমত দান করেছিলাম ও আমার পক্ষ থেকে
দিয়েছিলাম এক বিশেষ জ্ঞান। [সুরা কা’হফ - ১৮:৬৫]
قَالَ
لَهُ مُوسَى هَلْ أَتَّبِعُكَ عَلَى أَن تُعَلِّمَنِ مِمَّا عُلِّمْتَ رُشْدًا
মূসা তাঁকে বললেনঃ আমি কি এ শর্তে
আপনার অনুসরণ করতে পারি যে, সত্যপথের যে জ্ঞান আপনাকে শেখানো হয়েছে, তা থেকে আমাকে
কিছু শিক্ষা দেবেন? [সুরা কা’হফ - ১৮:৬৬]
সুরা কাহাফে হযরত মুসা ও খিজির (আ) এর মোলাকাতের ঘটনা বিস্তারিত বননা
করা হয়েছে
খিজির (আ) যে মাঝি নৌকা দিয়ে পার করালেন
সে নোকা ফুটা করে দিলেন, তারপর ১টি ছেলেকে হত্যা করে ফেললেন, এরপর এক এলাকায় খাদ্য
পানি চাইলে তারা খাদ্য পানি দিল না কিন্তু তিনি সে এলাকার একটি ঘরের দেওয়াল মেরামত
করে দিলেন, এসব বিষয়ে হযরত খিজির (আ) এর কাছে জ্ঞান ছিল কিন্তু মুসা (আ) এর কাছে জ্ঞান
ছিলনা তাই তিনি হযরত খিজির (আ) এর ৩টি কাজ সম্পর্কে এতেরাজ করলেন, তখন খিজির ৩টি কাজের
ব্যাখ্যা দিয়ে দিলেন
খিজির বললেন আমাদেরকে যে মাঝি বিনা পয়সায়
নদী পার করেছেন সে এলাকায় এক জালিম রাজা ছিল যার নাম হল (হুদাদ
ইবনু বুদাদ) সে ভালো ভালো নৌকা গুলি জোড় করে ছিনিয়ে নিয়ে যায়, যদি নৌকা ত্রুটি
যুক্ত হয় তা আর নেয়না, তাই আমি ইচ্ছাকৃত তার নৌকা ত্রুটিযুক্ত করে মুলত তার নৌকাটি
জালেম রাজার হাত থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছি।
আর হত্যা কৃত বালকটির নাম ছিল জাইসুর। “তার পিতা মাতা ছিল মুমিন। আর সে বালকটি ছিল কাফের। আমি আশংকা করলাম
যে সে বিদ্রোহচরন ও কুফরির দ্বারা তাদের বিব্রত করবে। অর্থাৎ তার স্নেহ ভালবাসায় তাদের
তার ধর্মের অনুসারী করে ফেলবে। এরপর আমি চাইলাম যে তাদের প্রতিপালক যেন তাদের ওর পরিবর্তে
এক সন্তান দান করেন, যে হবে পবিত্রতায় মহত্তর ও ভক্তি ভালবাসায় ঘনিষ্টতর। পরবর্তীতে
তাদের ১টি কন্যা সন্তান হল।
খিযির (আলাইহিস সালাম) যে বালকটিকে হত্যা করেছিলেন, সে বালকটির চেয়ে পরবর্তী
বালকটির প্রতি তার পিতামাতা অধিক স্নেহশীল ও দয়াশীল হবেন।
আর প্রাচীরের দেওয়াল মেরামত
করার ব্যাপার এই যে, সেটি ছিল নগরের দুজন ইয়াতীম বালকের। এর নীচে ছিল তাদের
গুপ্তধন। তাদের পিতা ছিলেন সৎকর্ম পরায়ণ। সুতরাং আপনার পালনকর্তা দয়াপরবেশ হয়ে ইচ্ছা
পোষণ করলেন যে, তারা যৌবনে পদার্পণ করে নিজেদের গুপ্তধন উদ্ধার করুক। আমি নিজ ইচ্ছায়
এসব করিনি।
হযরত খিজির কে? (পিতা হযরত মালতান, উপাধি আবুল আব্বাস, আসল নাম বালিয়া)
হযরত খিজির হলেন একজন আল্লাহ অলি, অনেক
নবী বলেন, তার পিতার নাম হযরত মালতান, তার আসল নাম হল বালিয়া,আর তার উপাধি হল আবুল
আব্বাস। তিনি খিজির নামে প্রসিদ্ধ হওয়ার কারন তিনি যেখানে পা রাখতেন সেখানে সবুজ ঘাস
উৎপন্ন হয়ে যেত। তাই তাঁর নাম খিজির।
খিজিরের নামের ফজিলত : ঈমানের সাথে মৃত্যু: আমাদের কোন কোন
বুযুগ লিখেছেন যে ব্যক্তি হযরত খিজির আ এর নাম তার পিতার নাম ও তার উপাধি মনে রাখবে
তার খাতেমা বিলখাইর হবে। তার নাম হল বালিয়া, পিতার নাম মালতান তার উপাধি হল আবুল আব্বাস।
কোন এলম শিখতে হবে? সাহাবাদের সাবজেক্ট ছিল ১টি আর তা হল কুরআন
নিঃসন্দেহে কুরআন হাদিসের এলম এর মর্যাদা
ও ফজিলতের কথাই কুরআন হাদীসে বয়ান করা হয়েছে, আল্লাহর নবীর যুগ হলো সবশ্রেষ্ট যুগ আর
সে যুগে সাহাবাদের শিক্ষক ছিলেন আল্লাহর নবী আর সাহাবাগন আমার নবীর কাছে শুধুমাত্র
একটি বিষয় পড়েছেন তা হল কুরআন।নিঃসন্দেহে কুরআন হল (তিবিয়ানান লিকুল্লি শাই) এতে সবকিছুই
আছে। আর এই একটি সাবজেক্ট পড়েই তারা জগৎশ্রেষ্ঠ মানুষ অনুস্মরনীয় অনুকরনীয় মানুষ হয়ে
গেলেন। সমাজ নীতি, রাজনীতি, অথনীতি, রাষ্ট্রনীতিতে তাদের নাম
আজে ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিখা আছে। তাহলে নিঃসন্দেহে যার কাছে কুরআনের
এলম থাকবে সেই আলেম হবে। আর কুরআনের এলম মানে শুধু দেখে দেখে পড়ব, মৃত্যুর পর লাশের
পাশে পড়ব, এমন নয় বরং জীবনের সকল ক্ষেত্রেই এই কুরআন আমাদের জন্য পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান।
কুরআনের তফসির:
কুরআন বুঝার জন্য তফসির পড়তে হবে,
১) তফসিরে রুহুল মায়ানী ২০ খন্ড, হানাফি
তফসীর
২) তাফসিরে ইবনে কাসির ১৫ খন্ড, এই তফসীরটি
হাদীস দ্বারা তফসির করা হয়েছে
৩) হাদিস দিয়ে আরো ১টি প্রসিদ্ধ তফসির
তফসিরে দুররে মনসুর যা ইমাম সুয়ুতি (রহ) লিখেছেন
যত বেশী পড়বেন তত আপনার জ্ঞানের ভান্ডার
বাড়তে থাকবে।
হযরত আদম (আ) এর মর্যাদার ১টি
কারণ হল জ্ঞান
ফেরেশতাকুলের
ওপর হজরত আদমের (আ.) যে শ্রেষ্ঠত্ব তা মূলত জ্ঞানের কারণে- আল্লাহ এরশাদ করেন 'ওয়া আল্লামা আদামাল আসমাআ কুল্লাহা' অর্থাৎ আমি আদমকে শিক্ষা দিয়েছি বস্তুজগতের সব জ্ঞান।
# এলম
হল নুর (আল এলমু নুরুন) এই জ্ঞান
হল নুর
# আমাদের
জ্ঞান নগন্য, আল্লাহর জ্ঞান অসীম
'ওয়ামা উতিতুম
মিনাল ইলমে ইল্লা কালিলা' অর্থাৎ আমার পক্ষ থেকে
মানবমন্ডলীর জন্য খুব সামান্যতম জ্ঞান এসেছে।
# আল্লাহর
জ্ঞানের সমুদ্র থেকে আল্লাহ সৃষ্টিকুলকে যে জ্ঞান দিয়েছেন তার উদাহার হল সমুদ্রের পানিতে
পাখি ঠোট দিয়ে যতটুকু পানি নিতে পারে শুধুমাত্র ততটুকু জ্ঞানই আল্লাহ সৃষ্টিকুলকে দি’য়েছেন।
# জ্ঞান
অর্জনে প্রয়োজনে বিদেশে যাওয়া যাবে- আল্লাহর রাসূল (দ) এরশাদ করেন
'উতলুবুল ইলমা
ওয়ালাও কানা বিশ্চিন' অর্থাৎ জ্ঞান আহরণ করো,
এমনকি তার জন্য যদি সুদূর চীনেও যেতে হয় তবুও তা অর্জন করতে হবে।
চীন দেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য বাংলাদেশ স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে
পড়ার জন্য প্রচুর ছাত্র যায়, সেখানে পড়ালেখার মান ভালো তবে খরচ কম।
# এই জ্ঞান
অজনের কোন বয়স নাই নবী করিম (দ) এরশাদ করেন 'উতলুবুল ইলমা
লাহদি ইলাল মাহদি' অর্থাৎ জ্ঞানার্জন করো
দোলনা হতে কবর পর্যন্ত।
প্রাণীদের মধ্যেও জ্ঞানী ও মুখ আছে
#প্রাণীদের
মধ্যেও প্রশিক্ষিত ও অশিক্ষিত আছে, যদি অশিক্ষিত
কুকুর ১টি প্রাণী শিকার করে আনে সেটা খাওয়া যায়েজ নাই, কিন্তু প্রশিক্ষিত কুকুর যদি
শিকার করে আনে সেটা জায়েজ না। এর কারন কি? কারন হল যেটা প্রশিক্ষিত কুকুর আর যেটা অশিক্ষিত
কুকুর দুইটার শিকারে পার্থ্যক্য আছে। তাই কুকুরও যদি শিখে যায় সেটা বাকী কুকুর থেকে
মর্যাদাবান হয়।
# ইমাম রাজি
লিখেন সুলাইমান (আ) ও পিপড়ার জ্ঞান: হযরত
সুলাইমান (আ) এর যুগে একটি পিপড়ার কথা আল্লাহ কুরআনে বয়ান করেছেন, সে পিপড়া তার দলের
পিপড়াদের বলল তোমরা নিরাপদ জায়গায় চলে যাও কারন সুলাইমান নবীর লস্করেরা তাদের অজান্তে
তোমাদেরকে পিষ্ট করবে, একটি পিপড়ার জ্ঞান হল একজন নবীর লস্কর কখনো ইচ্ছাকৃত ১টি পিপড়াকেও
অন্যায়ভাবে হত্যা করেনা,
ইমাম রাজি
(রহ) লিখেন সে পিপড়ার এই জ্ঞানের কারনে আল্লাহ তায়ালা কেয়ামত পযন্ত সে পিপড়াকে সকল
পিপড়ার উপর মর্যাদা দান করলেন, এই পিপড়ার নামে কুরআনে ১টি সুরা নাজিল করলেন সুরা নমল,
অথচ কুরআনে বড় বড় নবী ও আলে নবীদের নামে সুরা আছে সুরা
মরিয়ম, সুরা ইউনুস, সুরা ইউসুফ, সুরা মুহাম্মদ, সুরা ইবরাহিম, আর এদিকে সুরা নমল এর কারন সে পিপড়ার জ্ঞান।
মুসলমানরা জ্ঞান বিজ্ঞানে পিছিয়ে কেন?
যখন কুরআনের
সাথে মুসলমানদের গভীর গবেষনা ছিল গভীর জ্ঞান ছিল সে যুগে মুসলমানরা সারা পৃথিবীর উপর
জ্ঞান বিজ্ঞানে রাজত্ব করেছিল, আজ মুসলমানরা কুরআন থেকে দুরে সরে যাওয়ার কারনে কুরআনকে
শুধুমাত্র চুমু খেয়ে জুজদান বেঁধে আলমিরা বা বুক সেল্ফ এ রেখে দেয়ার কাজ ছাড়া আর কিছুই
করিনা। তাই আজ সারা বিশ্বে মুসলমানরা পিছিয়ে গেছে। আজো যদি মুসলমানরা কুরআনকে বুকে
নিয়ে আল্লাহর উপর ভরসা করে সকল প্রযুক্তি বিজ্ঞানে হাত বাড়ায় মুসলমানরা আবার জ্ঞান
বিজ্ঞানে বাদশাহী করতে পারবে।
মুসলিম বিজ্ঞানীরা ছিল
গণিতবীদ- মুহাম্মদ ইবনে মুসা আল খোয়ারিজমি
তাঁকে গণিতশাস্ত্রের জনক বলা হয়। মূলত
বীজগণিতের আবিষ্কারক হলেন তিনি। এ বিষয়ে তাঁর রচিত হিসাব আল
জাবর ওয়াল মুকাবালাহ গ্রন্থের নামানুসারে বীজগণিত শাস্ত্রকে পরবর্তীকালে ইউরোপীয়রা
আল-জেবরা নামকরণ করেন।
চক্ষুবিজ্ঞানী- হাসান ইবনে হাইসাম, ইউক্লিড আর টলেমি যেখানে
বলেছিলেন যে, আলো চোখ থেকে বস্তুতে পড়ে বলেই আমরা দেখতে পাই; সেখানে একজন মুসলিম চক্ষুবিজ্ঞানী
তাদের থিওরি হাতে কলমে ভুল প্রমাণ করলেন। তিনি প্রমাণ করলেন,বাহ্যবস্তু থেকেই আলো আমাদের
চোখে প্রতফলিত হয় বলে বস্তু দৃষ্টিগোচর হয়। চক্ষুবিজ্ঞান বিষয়ক মৌলিক গ্রন্থ ‘কিতাবুল মানাযির’ তাঁকে ইতিহাসে অমর করে রেখেছে।
চিকিৎসা: ইবনে সিনার লিখা চিকিৎসাশাস্ত্রের বই আল- কানুন ফিত-তিবব একটি অমর গ্রন্থ। ড.
ওসলার এ গ্রন্থটিকে চিকিৎসাশাস্ত্রের বাইবেল বলে উল্লেখ করেন।
অস্ত্রপাচারে মুসলিম বিজ্ঞানী
আল রাযি প্রসিদ্ধ
জোতিবিজ্ঞানি- আর বেরুনি, তিনিই
প্রথম প্রমাণ করেন পৃথিবী গোলাকার।
এভাবে আগের যুগে প্রতিটি জ্ঞান
বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে মুসলমানরাই ছিল শ্রেষ্ঠ, সকল জ্ঞান বিজ্ঞানের দ্বার মুলত মুসলমান
জ্ঞানি ও বিজ্ঞিানিরা উম্মোচন করে গেছেন
আমাদেরও উচিৎ বেশী বেশী পড়ালেখা করা, গেবষনা
করা, জ্ঞান অজন করা, জ্ঞান বিজ্ঞানের দ্বার উম্মোচনে চেষ্টা করা। কুরআন হাদীস ও দ্বীনের
মুলমন্ত্রকে ধারন করে জ্ঞান বিজ্ঞান নিয়ে গবেষনা করা।
একজন অমুসলিম ফেসবুক আবিস্কার করেছে আর
আমরা মুসলমানরা সে ফেসবুক নিয়ে ২৪ ঘন্টা ব্যস্ত, কলেজ ইউনিভাসিটির ছাত্র/ছাত্রীরা রাত
দিন পড়ালেখার চেয়ে মিডিয়াতে সময় বেশী ব্যয় করে, ফলে আস্তে আস্তে আগামী কয়েক বছর পর
আমাদের ছাত্র ছাত্রীরা মেধাশুন্য হয়ে যাবে। আমাদের মুসলমান ছাত্রদের বেশী বেশী পড়ালেখা
করতে হবে, জ্ঞান বিজ্ঞান নিয়ে গবেষনা করতে হবে, ডাক্তার হব আর চেম্বার খুলে বসব এক
এক রোগী থেকে হাজার হাজার টাকা ফিস নিব, আর এই পরীক্ষা সেই পরীক্ষা দিয়ে সেখান থেকেও
আনলিমিটেড ইনকাম করে বাড়ী গাড়ীর মালিক হব, এই চিন্তা ভাবনা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।দেশ
জাতির জন্য কল্যাণকর কিছু আবিস্কার করে যাওয়ার চিন্তা ফিকির করতে হবে। দ্বীনী শিক্ষার
মুল মন্ত্র লা ইলাহা ইল্লাহল্লাহকে ধারন করে যদি আপনি দুনিয়ার এলমে জ্ঞান বিজ্ঞানে
সাফল্য লাভ করেন আপনার কল্যাণকর আবিস্কার আপনার দুনিয়াতেও ফায়দা দিবে আপনার জন্য কবরে
হাশরেও কল্যাণ বয়ে আনবে।
আসুন আমরা মুসলমান হিসেবে আগের যুগের মুসলমানদের
মত কুরআনকে বুকে ধারন করে, দ্বীনী জ্ঞানের মুলমন্ত্রকে ধারন করে জ্ঞান বিজ্ঞানে অবদান
রাখার চেষ্টা করি, আবার বিশ্বের বুকে ইবনে খালদুন, আল রাজি, ইবনে সিনা, আল খাওয়ারিজমির
মত ইতিহাস সৃষ্টি করি। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তৌফিক দান করুন আমিন।
কোন মন্তব্য নেই