ইয়াজুজ মাজুজ এর খোঁজ মিলেছে ইয়াজুজ মাজুজের দেওয়াল আবিস্কার
বিসমিল্লাহির
রাহমানির রাহিম
ইয়াজুজ মাজুজ
এর খোঁজ মিলেছে
ইয়াজুজ মাজুজের
দেওয়াল আবিস্কার
প্রিয় বন্ধুরা, আশা করি আপনি ভালো আছেন।বন্ধুরা
সোশ্যাল মিডিয়াতে এটা দাবী করা হচ্ছে। যে দেওয়ালের পিছে এয়াজুজ মাজুজ আছে তা আবিস্কার
হয়ে গেছে। আর সে দেওয়াল এখন ধ্বংসের কাছাকাছি। আজকের আলোচনায় আমি আপনাকে সে দেওয়ালের
ব্যপারে বিস্তারিত জানাব।এই দেওয়াল কোথায় আছে? আর এর ব্যপারে বৈজ্ঞানিকরা কি আবিস্কার
করেছে?
তাছাড়া আমি এটাও জানাব এয়াজুজ মাজুজ কোন
নবীর সন্তান? আর হাদীস শরীফের মধ্যে এয়াজুজ মাজুজের ব্যপারে কি কি রেওয়ায়েত আছে? সকল
প্রকার তফসিল জানার জন্য, এই ভিডিওটি শেষ পযন্ত অবশ্যই দেখবেন।
বন্ধুরা এই ব্যপারে আমি আপনাদেরকে পরিপূণ
ও বিস্তারিত তথ্য দিব। তার আগে আপনাদের কাছে অনুরোধ আপনাদের প্রিয় চ্যানেল আল্লাহ ওয়ালা
মিডিয়া সাবস্ক্রাইব করে নিন আর পাশে থাকা বেল আইকনও ক্লিক করে দিন। যাতে আগত সকল ভিডিওর
নোটিফিকেশন আপনার কাছে সময়মত পৌঁছে যায়।
সব শেষে বলব এয়াজুজ মাজুজের দেওয়ালটি কোথায়
আছে? এর ব্যপারে কি আবিস্কার হয়েছে?
প্রথমত বলব এই দেওয়াল কোন বাদশা এবং কেন
তৈরী করেছেন? এবং এ ব্যপারে পবিত্র কুরআনে কিভাবে বয়ান করা হয়েছে?
কতিথ আছে হযরত জুলকরনাইন এর জামানায় এয়াজুজ
ও মাজুজের হামলা মানব জাতির জন্য অনেক বড় আযাবে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। তাদেরকে প্রতিহত
করার জন্য জুলকরনাইন পাহাড়ের মধ্যে একটি উঁচু মজবুত দেওয়াল তৈরী করেন। জুলকরনাইন এর
আলোচনা কুরআনে করিমের সুরা কাহাফে বর্ণিত আছে।
জুলকারনাই কে? সে ব্যপারে তাফসিরকারকদের
মধ্যে মতানৈক্য আছে
প্রাচীন
তাফসিরবিদদের মধ্যে ইমাম রাজি (রহ.)-এর মতে, জুলকারনাইনের প্রকৃত নাম সিকান্দার,
ইমাম
কুরতুবি (রহ.) ইবনে ইসহাকের বরাতে উল্লেখ করেছেন, ‘জুলকারনাইন
ছিলেন মিসরের অধিবাসী। তাঁর নাম মিরজবান ইবনে মারদুবাহ আল ইউনানি। (তাফসিরুল কুরতুবি
: ১১/৪৫)
‘কিসাসুল
কোরআন’ গ্রন্থে বলেছেন, জুলকারনাইন হলেন ইরানের বাদশাহ খসরু।
তবে
জুল করনাইন এর ব্যপারে পবিত্র কুরআনের ৪টি কথা পাওয়া যায় তা হল
এক.
তাঁর ‘শিংওয়ালা’ উপাধি
সম্পর্কে ইহুদিরা জানত। দুই. তাঁর বিজয়াভিযান পূর্ব থেকে পশ্চিমে পরিচালিত হয়েছিল এবং
উত্তর-দক্ষিণ দিকে বিস্তৃত হয়েছিল। তিন. তিনি ইয়াজুজ মাজুজের হাত থেকে রক্ষার জন্য
কোনো পার্বত্য গিরিপথে একটি মজবুত প্রাচীর নির্মাণ করেন। চার. তিনি আল্লাহর আনুগত্যশীল
ও ন্যায়পরায়ণ শাসক ছিলেন।
বাহারহাল
জুলকারনাইন এর সারা দুনিয়ার সফরের বয়ান স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা কুরআনের সুরা কাহাফে দিয়ে
বলেন
অবশেষে
যখন তিনি দুই পর্বত প্রাচীরের মধ্যস্থলে পৌঁছলেন, তখন তিনি সেখানে এক জাতিকে পেলেন,
যারা তাঁর কথা একেবারেই বুঝতে পারছিল না।
তখন
দোভাষির মাধ্যমে জুলকরনাইন তাদের কথা বুঝতে পারলেন, আর তারা জুলকরনাইনকে বলল
এয়াজুজ
মাজুজ দেশে অশান্তি সৃষ্টি করছে, আপনি তাদের ও আমাদের মাঝে একটি প্রাচির তৈরী করে দিন
তার জন্য আমরা আপনাকে কর দিব।
জুলকরনাইন
তাদেরকে বলল-যা সুরা কাহাফের ৯৬ নং আয়াতে এসেছে
آتُونِي زُبَرَ الْحَدِيدِ حَتَّى إِذَا سَاوَى
بَيْنَ الصَّدَفَيْنِ قَالَ انفُخُوا حَتَّى إِذَا جَعَلَهُ نَارًا قَالَ آتُونِي
أُفْرِغْ عَلَيْهِ قِطْرًا
তোমরা আমাকে শ্রম দিয়ে সাহায্য করো। আমি তোমাদের
ও তাদের মধ্যে একটি সুদৃঢ় প্রাচীর নির্মাণ করে দেবো। তোমরা আমাকে লোহার পাত এনে দাও।
অবশেষে যখন পাহাড়ের মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থান পূর্ণ হয়ে গেল, তখন তিনি বললেন, তোমরা হাঁপরে
দম দিতে থাক। অবশেষে যখন তা আগুনে পরিণত হলো, তখন তিনি বললেন, তোমরা গলিত তামা নিয়ে
এসো, আমি তা এর ওপর ঢেলে দেই।
কুরআনে
মহান আল্লাহ চাইলে শুধু এতটুকু বললেই পারতেন যে, জুলকারনাইন অত্যন্ত মজবুত একটি
প্রাচীর নির্মান করেছিলেন। কিন্তু মজার ব্যপার হচ্ছে জুলকারনাইন কি কি পদার্থ দিয়ে
এবং কিভাবে প্রাচীর নির্মান করেছিলেন সে তথ্যও কুরআনে দেয়া হয়েছে।
প্রাচীর
নির্মানে তিনি ব্যাবহার করেছিলেন লোহার পাত । লোহার পাতকে তিনি ঢেকে দিয়েছিলেন
গলিত তামা দিয়ে।
জুলকারনাইনের
প্রাচীরের রহস্য এখানেই। আমরা সবাই জানি লোহা অত্যন্ত শক্ত আর মজবুত। কিন্তু
লোহা ক্ষয়িষ্ণু । সাধারণ পরিবেশে বাতাসের অক্সিজেনের সংস্পর্শে লোহায়
ক্রাস্ট বা মরিচা পড়ে লোহা ক্ষয় হতে থাকে। অন্যদিকে তামা লোহার মত শক্ত না হলেও,
এটি অত্যন্ত ক্ষয়রোধী, গুগলে তামার গুনাগুন লিখে সার্চ দিলে খুব সহজেই এ
তথ্য পাওয়া যাবে।
যখন
এই দেওয়াল তৈরী হয়ে গেল সাময়িকভাবে এয়াজুজ মাজুজের ফিতনা বন্ধ হয়ে গেল। জুল করনাইন
তাদেরকে বললেন আল্লাহর ফযলে এই শক্তিশালী দেওয়ালের বদৌলতে তোমরা এয়াজুজ মাজুজ থেকে
রেহাই পেয়ে গেলে, কিন্তু এক সময় এমন আসবে এই দেওয়াল ধ্বংস হয়ে যাবে।
যা সুরা
কাহাফের ৯৮ নং আয়াতে এসেছে
قَالَ هَذَا رَحْمَةٌ مِّن رَّبِّي فَإِذَا جَاء
وَعْدُ رَبِّي جَعَلَهُ دَكَّاء وَكَانَ وَعْدُ رَبِّي حَقًّا
যুলকারনাইন
বললেনঃ এটা আমার পালনকর্তার অনুগ্রহ। যখন আমার পালনকর্তার প্রতিশ্রুত সময় আসবে, তখন
তিনি একে চূর্ণ-বির্চূণ করে দেবেন এবং আমার পালনকর্তার প্রতিশ্রুতি সত্য। [সুরা কাহফ
- ১৮:৯৮]
বন্ধুরা
অনেকে প্রশ্ন করেন এয়াজুজ মাজুজ কোন নবীর বংশধর? তারা কোন এলাকায়া আছে? এবং তাদের আকৃতি
কেমন হবে?
ফাতাহুল
বারীর ৬ষ্ঠ খন্ডে হযরত কাতাদা (রাঃ) বলেন কিয়ামতের আগে এয়াজুজ মাজুজ বের হবে, তারা
মানুষের আকৃতি হবে এবং হযরত নুহ (আঃ) এর পুত্র ইয়াকা এর বংশধর থেকে হবে। তাফসীরে
তাবারী গ্রন্থ মতে তারা পৃথিবীর উত্তর পূর্বাঞ্চলের বাসিন্দা হবে, বর্তমানের
আরমেনিয়া ও আযারবাইযানের পাশাতবাগ তাদের আবাসস্থল উল্লেখ্য করা হয়।
ইয়াজুজ-মাযুয
দেখতে মানুষের মত কিন্তু তাদের স্বভাব হবে চতুস্পদ জন্তুর ন্যায়। দেহের সন্মুখ ভাগ
মানূষের ন্যায় কিন্তু পিছনের ও নিম্নভাগ চতুস্পদ জন্তুর ন্যায়। এরা মানুষ বৃক্ষলতা
সব ভক্ষন করে।
বন্ধুরা
এ বিষয়ে আরো একটি প্রশ্ন বেশী হয় তা হল- জুলকরনাইন যে প্রাচীর তৈরী করেছেন তা
কোথায় ?
জুল
করনাইন যে প্রাচীর তৈরী করেছিলেন তা কোথায় আছে তা নিয়ে অনেক মতপাথক্য আছে। এ পযন্ত
এ ধরনের ৫টি দেওয়াল আবিস্কৃত হয়েছে। যা বিভিন্ন বাদশা বিভিন্ন এলাকায় শত্রুদের
হামলা থেকে বাঁচার জন্য তৈরী করেছেন।
এর
মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ দেওয়াল হল চীনের প্রাচীর। যার দৈঘ্য হল ১২শত থেকে ১৫শত মাইল
পর্যন্ত। তবে চীনের প্রাচীর লোহা ও তামার তৈরী নয়, তাই এটাকে জুলকরনাইনের প্রাচীর
বলা যাবেনা।
এক
দলের মতে জুলকরনাইনের তৈরী প্রাচির ইয়েমেনে অবস্থিত। তবে ইয়েমেনের প্রাচীরটি মুলত
বানের পানিকে বাঁধা দেয়ার জন্য এবং পানি সংরক্ষনের জন্য বানানো হয়েছিল। তাছাড়া
ইয়েমেনের প্রাচিরও লোহা ও তামার তৈরী নয়।
মুহাক্কিক
ওলামায়ে কেরামের মতে কৃষ্ণ সাগর ও কাস্পিয়ান সাগরের মধ্যবর্তী পর্বত প্রাচীর
দুটি যে পর্বতমালায় অবস্থিত তা হল সুবিখ্যাত ককেশাস পর্বতমালা। পর্বত প্রাচীর দুটির
মাঝে অবস্থিত একমাত্র বহির্পথটি ডারিয়াল গোর্জ (Darial Gorge) যেখানে জুলকারনাইন দেয়ালটি
তৈরি করে দিয়েছিলেন। জায়গাটার অবস্থান হল রাশিয়ার সীমান্ত সংলগ্ন দেশ জর্জিয়াতে। এখানে
অনেক পুরানো যুগের লোহার দেওয়াল পরিলক্ষিত হয় তাই অনেকের মতে জুল করনাইনের দেওয়াল এটাই।
প্রিয় বন্ধুরা যদিও হাজার
হাজার বছর আগে এয়াজুজ মাজুজকে ঠেকানোর জন্য সেকান্দর জুলকরনাইন এই মজবুত দেওয়াল তৈরী
করেছিল, কিন্তু যেদিন আল্লাহর হকুম হবে সেদিন এই দেওয়াল ধ্বংস হয়ে যাবে।
হাদীস
শরীফে আছে বতমানে এয়াজুজ মাজুজ জুলকরনাইনের তৈরী প্রাচীরটি জিহ্বা দ্বারা প্রতিদিন
চাটতে থাকে আবার সন্ধ্যার সময় উক্ত প্রাচীর আবার পূর্বের অবস্থায় ফেরত যায় মানে
পূর্নাঙ্গ অবস্থা লাভ করে। এভাবে কিয়ামতের আগ পর্যন্ত চলতে থাকবে। কিন্তু আল্লাহ
হকুম হলে হঠাৎ একদিন এ দেয়াল নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে, তখনই ইয়াজুজ-মাযুযের দল স্রোতের
ন্যায় মানুষের এলাকায় ডুকে পড়বে। তারা সব কিছু খেয়ে ফেলবে। পানির পিপাসায় তারা
দুনিয়ার সব সাগর মহাসাগরের পানি খেয়ে
ফেলবে।
ঐ
প্রাচীর ভেঙ্গে তারা যেদিন বেরিয়ে আসবে সামনে যা পাবে সব খেয়ে ফেলবে। এমনকি তাদের
প্রথম দলটি নদীর পানি খেয়ে শেষ করে ফেলবে এবং শেষদলটি এসে বলবে ‘হয়ত এখানে কোন একসময় নদী ছিল’ । তাদের সাথে কেউ লড়াই করতে পারবে না।
এক
সময় তারা বায়তুল মুক্বাদ্দাসের এক পাহাড়ে গিয়ে বলবে,“দুনিয়াতে যারা ছিল তাদের হত্যা করেছি। এখন আকাশে যারা আছে তাদের
হত্যা করব।” তারা আকাশের দিকে তীর
নিক্ষেপ করবে। আল্লাহ তাদের তীরে রক্ত মাখিয়ে ফেরত পাঠাবেন।
এসময়
ঈসা (আঃ) তাদের জন্য বদদো‘আ করবেন। এতে স্কন্ধের
দিক থেকে এক প্রকার পোকা সৃষ্টি করে আল্লাহ্ তাদেরকে ধ্বংস করবেন। তারা সবাই মারা
যাবে ও পঁচে দুর্গন্ধ হবে। সারা পৃথিবী জুড়ে তাদের লাশ থাকবে । আল্লাহ শকুন
পাঠাবেন। লাশগুলোকে তারা নাহবাল নামক স্থানে নিক্ষেপ করবে। মুসলিমরা তাদের তীর ও
ধনুকগুলো ৭ বছর জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করবে। ( বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৪৭৫)
।
যায়নাব
বিনতে জাহাশ (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
”একবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় তাঁর নিকট আসলেন এবং বলতে লাগলেন, লা- ইলাহা
ইল্লাল্লাহ। আরবের লোকেদের জন্য সেই অনিষ্টের কারণে ধ্বংস অনিবার্য যা নিকটবর্তী
হয়েছে। আজ ইয়াজুজ ও মাজুজের প্রাচীর এ পরিমাণ খুলে গেছে। এ কথা বলার সময় তিনি তাঁর
বৃদ্ধাঙ্গুলির অগ্রভাগকে তার সঙ্গের শাহাদাত আঙ্গুলির অগ্রভাগের সঙ্গে মিলিয়ে
গোলাকার করে ছিদ্রের পরিমাণ দেখান। যায়নাব বিনতে জাহাশ (রাঃ) বলেন, তখন আমি বললাম,
হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মধ্যে পুণ্যবান লোকজন থাকা সত্ত্বেও কি আমরা ধ্বংস হয়ে
যাব? তিনি বলেন, হ্যাঁ যখন পাপকাজ অতি মাত্রায় বেড়ে যাবে।”
বন্ধুরা
এয়াজুজ মাজুজ সংক্রান্ত সকল নির্ভুল তথ্যসমুহ আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা
করেছি, এ ধরনের ইসলামিক ইনফরমেটিভ ভিডিও পেতে হলে কি বিষয়ে পরবর্তী আলোচনা নিয়ে
আসব তা কমেন্ট বক্সে লিখে জানাবেন। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
কোন মন্তব্য নেই