ইসলামিক প্রশ্নোত্তর। নামাজের মাসায়ালা। তালাকের মাসায়ালা। দোয়া কুনুতের মাসায়ালা

 ইসলামিক প্রশ্নোত্তর। নামাজের মাসায়ালা। তালাকের মাসায়ালা। দোয়া কুনুতের মাসায়ালা



প্রশ্ন-১) ইমাম সাহেব কেরাত শুরু করে দিলে মুক্তাদি কখন ছানা পড়বে?

উত্তর: মুক্তাদির ছানার সময় ইমামের কেরাত শুরু করার আগে আগে হয়। যদি আপনি এই সময়ে ছানা পড়তে পারেনতো ঠিক, যদি ইমাম সাহেব কেরাত শুরু করে দেন তাহলে চুপ থাকা ওয়াজিব

যদিও আপনি ছানা পড়তে না পারেন তবুও চুপ থাকবেন। কেননা কেরাতের সময় চুপ থাকা ওয়াজিব আর ছানা পড়া সুন্নত। যদি ছানা পড়তে না পারেন তাতে ছাওয়াব কম হবে তবে গুনাহগার হবেন না।

তেমনি ভাবে অনেকে প্রশ্ন করেন যোহর ও আসরে ইমাম চুপে চুপে কেরাত পড়ে তখন কি ছানা পড়া যাবে? এর উত্তর হবে যদি আপনি ধারনা করেন ইমাম কেরাত শুরু করে দিয়েছেন তাহলে আপনি ছানা না পড়ে চুপ থাকবেন আর যদি ধারনা হয় ইমাম কেরাত শুরু করেনি তখন আপনি ছানা পড়তে পারবেন।

প্রশ্ন-২) এক লোক তার সন্তানদেরকে নিজের কাছে রেখে স্ত্রীকে বের করে দেয়, ১২ বছর হয়ে গেছে এতে কি বিয়ে ভঙ্গ হয়ে গেছে? অনেকে বলে ৪০ দিন স্ত্রীর সাথে যোগাযোগ না থাকলে তালাক হয়ে যায় এটা কি ঠিক?

উত্তর: বিয়ে ভঙ্গ হওয়ার কয়েকটি তরিকা আছে যেমন যদি তালাক দিয়ে দেয়, যদি স্ত্রী খোলা গ্রহণ করে, কিংবা স্বামী স্ত্রী দুজন থেকে যদি কোন একজন মুরতাদ হয়ে যায় তাহলে বিবাহ ভঙ্গ হয়ে যায়।

এছাড়া স্বামী স্ত্রী একে অপর থেকে ১০০ বছরও পৃথক থাকলে বিবাহ ভঙ্গ হবেনা। যেমন অনেক লোক বিদেশে যায় ৩/৪ বছর পর্যন্ত ছুটি পায়না, অনেকে মনে করে ৪০ দিন অতিবাহিত হলেই বিবাহ ভঙ্গ হয়ে যায়, এটা ভুল ধারনা

সুতরাং ১২ বছর যে লোক তার স্ত্রী থেকে পৃথক আছে তাদের বিবাহ ভঙ্গ হয়নি, বিবাহ ভঙ্গ হওয়ার জন্য তালাক বা খোলা হতে হবে।

প্রশ্ন-৩) দোয়া কুনুত পড়ার সময় কয়েক শব্দ পড়ে ভুলে গেলে করনীয় কি? দোয়া কুনুত মুখস্থ না থাকলে কি পড়ব

উত্তর- দোয়া কুনুত মুখস্থ না থাকলে ৩ বার (রাব্বিগফিরলি) পড়লে ওয়াজিব আদায় হবে, এখন দোয়া কুনুত পড়া শুরু করার পর যদি কয়েক শব্দ পড়ে আর পড়তে না পারে এবং রুকুতে চলে যায় তাহলে তার জন্য সাহু সিজদা দেয়া ওয়াজিব।

প্রশ্ন-৪) শীত কালে অজুর সময় মৌজার উপর মাসেহ করলে কি অজু হয়ে যাবে? মৌজার উপর মাসেহ করার নিয়ম কি?

উত্তর: মৌজার উপর মাসেহ করা এটা আমাদের জ্ঞানে ধরেনা, কারন মাছেহ করলে আর পা ধৌত করতে হবেনা, কিন্তু তবুও শরীয়তে মৌজার উপর মাসেহ করার বিধান আছে যা নবী করিম (দ) শিক্ষা দিয়েছেন, যেহেতু এই আমলটি আমাদের আকলের বিপরীত সেহেতু আমলটি নবীজি যেমনটি করেছেন

আমাদেরকে হুবহু তেমটিই করতে হবে। সে আমলটিতে আমরা নিজেদের থেকে কোন কিছু বর্ধিত করতে পারবনা। সে জন্য নবীজি যে মৌজার উপর মাসেহ করেছেন তা ছিল চামড়ার মৌজা। আর তা টাখনুর উপর পর্যন্ত। সে চামড়ার মৌজা পায়ের সাথে চিপকে থাকে এমন ছিল।

তাছাড়া এত মোটা মৌজা যার উপর পানি ঢাললে সে পানি পায়ের চামড়া পর্যন্ত দ্রুত পৌঁছতে পারেনা। আর এসব কন্ডিশনকে সামনে রেখে ফোকাহায়ে কেরাম অনুমতি দিয়েছেন

যদি আপনি এমন মৌজা পরিধান করেন যা চামড়ার তৈরী, খুবই মোটা যার উপর পানি ঢাললে সে পানি সাথে সাথে চামড়া পর্যন্ত পৌঁছে না। তাছাড়া সে মৌজা পায়ের সাথে চিপকে থাকে তাহলে সে মৌজার উপর মাসেহ করতে পারবেন।

আর এমন মৌজা যদি আপনার থাকে তাহলে আপনি প্রথমে পরিপূর্ণ অজু করে সে মৌজা পরিধান করবেন, এরপর যখন আপনার প্রথম বার অজু ভঙ্গ হবে তখন থেকে আপনি মৌজার উপর মাসেহ করার শুরু করবেন, আর তখনই আপনার টাইম শুরু

এখন যদি আপনি ঘরে থাকেন তাহলে এর পর থেকে ১ দিন ১ রাত আপনি সে মৌজার উপর মাসেহ করতে পারবেন। আর মাসেহ করার নিয়ম অজু করবেন আর পা ধোয়ার সময় দুই হাত পায়ের পাতার উপর রেখে উপরের দিকে মাসেহ করে নিয়ে আসবেন তাহলে মাসেহ হয়ে যাবে।

যখন ১ দিন ১ রাত অতিবাহিত হবে তখন পুনরায় সে মৌজা খুলে অজুর সময় পা ধৌত করে আবার সে মৌজা পড়তে পারবেন। আর যদি সফরে থাকেন তখন ৩ দিন ৩ রাত মাসেহ করতে পারবেন।

প্রশ্ন-৫) ইমাম সাহেব ৪ রাকাত নামাজে ২য় রাকাতে আত্তাহিয়্যা পড়ে দাঁড়িয়ে গেল, মুক্তাদি এখনো আত্তাহিয়্যা শেষ করতে পারেনি, এখন মুক্তাদি কি আত্তাহিয়্যা শেষ না করে দাঁড়িয়ে যাবে? নাকি আত্তাহিয়্যা সম্পূর্ণ পড়ে দাঁড়াবে

উত্তর-  ইমাম সাহেব আত্তাহিয়্যা পড়ে দাঁড়িয়ে গেলে তখনও যদি মুক্তাদির আত্তাহিয়্যা পড়া কমপ্লিট না হয় তাহলে, মুক্তাদি আত্তাহিয়্যা কমপ্লিট করে তারপর দাঁড়াবে।

প্রশ্ন-৬) আমি শুনেছি হাদীসে আছে রাতে দরজা বন্ধ করে ঘুমাতে হয়, রাতে কি জানালাও বন্ধ করে ঘুমাতে হবে?

উত্তর রাতে দরজা বন্ধ করে ঘুমানোর হকুম নাই,  বরং নবী করিম (দ) ফরমায়েছেন যখন মাগরিবের ওয়াক্ত হয় তখন ছোট ছোট বাচ্চাদেরকে ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে ফেল, কেননা সে সময় এমন এক মখলুক ছড়িয়ে পরে,  যাদেরকে তোমরা দেখতে পাওনা,

আর ২য় হকুম হল যখন দরজা জানালা বন্ধ করবে বিসমিল্লাহ বলে বন্ধ করবে, তাহলে শয়তান সে ঘরে প্রবেশ করতে পারেনা, সুতরাং যদি খুব গরম যদি হয় আর চুরিরও যদি সম্ভাবনা না থাকে,

আর কেহ যদি তখন দরজা জানালা খোলা রেখে ঘুমায়, তাহলে এটা বলা যাবেনা যে সে হাদিসের বিরোধীতা করছে, এবং সে গুনাহগার হয়েছে। সুতরাং যদি দরজা জানালা বন্ধ করেন তখন বিসমিল্লাহ পড়ে বন্ধ করবেন যাতে শয়তান প্রবেশ করতে না পারে, আর জানালা খোলা রাখাতে কোন সমস্যা নাই।

কোন মন্তব্য নেই

borchee থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.