গাজওয়াতুল হিন্দ নিয়ে একগুচ্ছ প্রশ্নোত্তর || মুফতি কাজী ইব্রাহিম
গাজওয়াতুল হিন্দ নিয়ে একগুচ্ছ প্রশ্নোত্তর || মুফতি কাজী ইব্রাহিম || Mufti Kazi Ibrahim
ভূমিকা:
এই আলোচনায় গাজওয়াতুল হিন্দ যুদ্ধ, আগত মালহামা (মহাযুদ্ধ),
মুসাফিরের নামাজ ও রোজার নিয়ম,
এবং সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে কোরআন ও হাদিসের
আলোকে আলোকপাত করা হয়েছে।
১. গাজওয়াতুল হিন্দ ও বাংলাদেশ:
গাজওয়াতুল হিন্দ যুদ্ধে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা মুশরিকদের দখলের বিষয়ে প্রশ্ন
করা হয়েছে এবং এটি কি বাংলাদেশ কিনা জানতে চাওয়া হয়েছে।
এর উত্তরে বলা হয়েছে, এই ঘটনায় কাশ্মীর হারানোর পর মুশরিকরা ক্ষণকালের জন্য বাংলাদেশের
উপর চড়াও হতে পারে এবং কিছু অঞ্চল দখলও করতে পারে। তবে,
তারা তা ধরে রাখতে পারবে না। পাল্টা আক্রমণে
হিন্দুস্তান মুসলমানদের দখলে চলে আসবে ইনশাআল্লাহ।
বাংলাদেশের দুর্বলতা হিসেবে অপ্রতুল প্রস্তুতিকে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে,
আক্রান্ত হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই বিশ্ব
মুসলিমদের সহায়তায় বাংলাদেশ শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলবে এবং ইন্ডিয়ার উপর বিজয়
লাভ করবে ইনশাআল্লাহ।
২. ভারতের মুসলিমদের ভূমিকা:
বর্তমানে পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধে ভারতের মুসলিমরা কার পক্ষ নেবে,
এই প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়েছে,
তারা বাহ্যিকভাবে বাধ্য হলেও মানসিকভাবে মুসলিমদের
(পাকিস্তান ও বাংলাদেশের) পক্ষে থাকবে।
যদি তারা মনোগতভাবে ভারতের পক্ষ নেয়, তবে তাদের ঈমানের উপর আঘাত আসবে। কাফেরের
পক্ষ নিলে ঈমান থাকে না।
অতএব, অন্তরজগতে
তারা অবশ্যই মুসলিমদের সমর্থন করবে, যদিও বাহ্যিকভাবে তাদের সাথে থাকতে বাধ্য
থাকতে পারে।
৩. মালহামার প্রস্তুতি:
আগত মালহামায় সরকার সহযোগিতা না করলে কিভাবে প্রস্তুতি নেওয়া যায়,
এই প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়েছে,
বর্তমান সরকার সহযোগিতা করছে এবং প্রস্তুতি
নিচ্ছে।
তবে, এই যুদ্ধের
ব্যাপকতা উপলব্ধি করতে না পারার কারণে প্রস্তুতির ত্রুটি থাকতে পারে।
আক্রমণের অল্প সময়ের মধ্যেই বিশ্ব মুসলিমদের সহায়তায় প্রয়োজনীয় অস্ত্রশস্ত্র
এসে পৌঁছাবে এবং সম্মিলিতভাবে শত্রুর মোকাবিলা করা হবে ইনশাআল্লাহ।
৪. হিন্দুস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কি সকল মুসলিমের উপর ফরজ?
হিন্দুস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সকল মুসলিমের উপর যুদ্ধ ফরজ কিনা,
এই প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়েছে,
যদি কিছু মুসলিমের যুদ্ধে বিজয় সম্ভব না
হয়, তবে পুরো
জাতির উপর এটা ফরজে আইন হয়ে যাবে (নাফিরে আম)।
প্রয়োজনে বিশ্বের ৫৭টি মুসলিম দেশকেও এই যুদ্ধে অংশ নিতে হবে।
এই যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের জন্য জাহান্নাম মাফের সুসংবাদ রয়েছে,
তাই ইরান, আফগানিস্তান,
পাকিস্তান, সিরিয়া, ফিলিস্তিনসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে
মুসলিমরা জিহাদে অংশ নেবে।
৫. মুসাফিরের নামাজ ও রোজার নিয়ম:
মুসাফিরের নামাজে যোহর, আসর ও এশা দুই রাকাত করে পড়তে হবে। শুধু এশার বিতর পড়বেন,
সুন্নত পড়া লাগবে না। মাগরিব তিন রাকাত এবং
ফজরের দুই রাকাত সুন্নত ও দুই রাকাত ফরজ আদায় করতে হবে।
মুকিম ইমামের পেছনে নামাজ পড়লে ইমামের অনুসরণ করে পুরো নামাজ পড়তে হবে। মুসাফির
ইমামের পেছনে পড়লে উভয়ই কসর করে নামাজ পড়বেন ইনশাআল্লাহ।
৬. গাজওয়াতুল হিন্দ আগে না ইমাম মাহদীর আগমন আগে?
গাজওয়াতুল হিন্দ আগে অনুষ্ঠিত হবে। তবে, এটি ইমাম মাহদীর আত্মপ্রকাশের কাছাকাছি সময়ে
হতে পারে।
হাদিসে ভারতীয় রাজাদেরকে লোহার শিকলে বেঁধে বাইতুল মুকাদ্দাসে নিয়ে যাওয়ার কথা
উল্লেখ আছে, যেখানে ঈসা (আঃ)-এর আগমন ঘটবে। এতে বোঝা যায় এটি মাহদীর যুগেই
সংঘটিত হবে ইনশাআল্লাহ।
ইমাম মাহদীর আগমন নিকটবর্তী এবং ধারণা করা হচ্ছে তিনি বর্তমানে ত্রিশোর্ধ্ব বা
চল্লিশের কোঠায় রয়েছেন।
৭. যুব আন্দোলন ও ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠা:
বিশ্বের যুব আন্দোলন ও ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে জড়িতদের বিরুদ্ধে কিছু
তথাকথিত ভাইদের বিপরীত ফতোয়া ও অপব্যাখ্যার সমালোচনা করা হয়েছে।
বলা হয়েছে, কোনো একক দলের পক্ষে এত বড় যুদ্ধ (বিশ্ব বেঈমানদের বিরুদ্ধে)
সম্ভব নয়। এর জন্য গোটা মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
মুসলিমদেরকে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে, কাছে টেনে এবং একসাথে বসে আলোচনার মাধ্যমে
এই জাতীয় সমস্যা সমাধান করা উচিত। দূরে বসে সমালোচনা করা ফলপ্রসূ নয়।
৮. দাড়ি রাখা সম্পর্কে ইসলাম:
দাড়ি ছেড়ে দেওয়া উচিত, কারণ হাদিসে দাড়ি বড় করার কথা বলা হয়েছে। বেশি লম্বা হলে
তা পরিপাটি করে ছাঁটা যায়।
হজের সময় ইবনে ওমর (রাঃ) এক মুষ্টি পরিমাণ দাড়ি রাখার মাসলাক অনুসরণ করতেন,
তবে এটি হজ্বের বাইরের সময়ের জন্য প্রযোজ্য
নয়।
৯. ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ কি গাজওয়াতুল হিন্দের অংশ?
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ গাজওয়াতুল হিন্দের সূচনা এবং এটি পূর্ণ ইসলামী যুদ্ধে রূপ
নেবে।
উপমহাদেশের বিভক্তি ধর্মের কারণেই হয়েছিল।
এই যুদ্ধ খাঁটি ঈমানদারদের সাথে পরিণত হবে এবং সেনাবাহিনীসহ ঈমানদারদের ঈমান আরও
বৃদ্ধি পাবে ইনশাআল্লাহ।
১০. খোরাসানের কালো পতাকাবাহী মুজাহিদ কারা?
খোরাসানের কালো পতাকাবাহী মুজাহিদদের তালেবান হিসেবে মনে করা হয়।
তাদের কালো পতাকা এবং সুন্নি সঠিক ইসলামী বিশ্বাস রয়েছে।
তাদের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো বাহ্যিক শরীয়ার পাশাপাশি আধ্যাত্মিক প্রশিক্ষণ
(এহসান) যা দেওবন্দ ও হাটহাজারী মাদ্রাসার মতো প্রতিষ্ঠানে বিদ্যমান।
অন্তরে ইসলাম না থাকলে বাহ্যিক আমল ফলপ্রসূ হয় না। তালেবানদের আধ্যাত্মিক দৃঢ়তাই
হয়তো তাদের আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ সাহায্য এনে দিয়েছে।
১১. মালহামায় সরকারের সহযোগিতা না করলে প্রস্তুতি:
বর্তমান সরকার সহযোগিতা করছে এবং প্রস্তুতি নিচ্ছে।
তবে, আমেরিকা
ও ইসরাইলের প্রভাবে কিছু দুর্বলতা থাকতে পারে।
ভারত সরাসরি আক্রমণে না এলেও তাদের তৃতীয় শক্তি আমেরিকা পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবিক
সহায়তার নামে প্রবেশ করতে পারে, যা বাংলাদেশের জন্য মারাত্মক হতে পারে।
অতএব, গোড়ায়
হাত দিয়ে এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে।
১২. ২০২৫ সালে ভারত-পাকিস্তান পারমাণবিক যুদ্ধ:
২০১৯ সালের বিবিসি বাংলার একটি গবেষণা প্রতিবেদনের উল্লেখ করা হয়েছে,
যেখানে ২০২৫ সালে ভারত-পাকিস্তান পারমাণবিক
যুদ্ধের সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছিল।
বক্তা এটিকে শয়তানের পরিকল্পনা হিসেবে উল্লেখ করেছেন,
যারা বিশ্বকে তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিভিন্ন
সময় বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করে থাকে।
মুসলমানদের উচিত তাদের ভবিষ্যৎবাণী বা পরিকল্পনার বিপরীতে আল্লাহর উপর ভরসা রাখা।
উপসংহার:
আলোচনায় গাজওয়াতুল হিন্দ, মালহামা এবং সমসাময়িক প্রেক্ষাপটের বিভিন্ন দিক কোরআন ও হাদিসের
আলোকে তুলে ধরা হয়েছে। মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ থাকার,
আল্লাহর উপর ভরসা রাখার এবং যেকোনো পরিস্থিতির
জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই