পরমাণু হামলা হলে বাঁচার উপায় কী
পরমাণু হামলা হলে বাঁচার উপায় কী
ভূমিকা:
এই মুহূর্তে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রী
তাদের নিজ নিজ নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেছেন। ভারত স্পষ্ট জানিয়েছে,
তাদের বিরুদ্ধে যেকোনো সন্ত্রাসী কার্যকলাপকে
আর হালকাভাবে নেওয়া হবে না। এমতাবস্থায়, দুটি পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে আঞ্চলিক
অস্থিরতার একটি উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
উদ্বেগের কারণ:
উভয় দেশের কাছেই পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে, যা এই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য
একটি বড় হুমকি।
পাকিস্তানের পারমাণবিক সক্ষমতা ও ভারতের প্রস্তুতি:
পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র: পাকিস্তানের কাছে বিভিন্ন পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে,
যা আঞ্চলিকভাবে কিছু দূরত্ব পর্যন্ত আঘাত
হানতে সক্ষম।
ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র: ভারতের নিজস্ব উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র শক্তি রয়েছে,
যা প্রতিপক্ষের যেকোনো আগ্রাসন মোকাবিলায়
প্রস্তুত। ভারতের নিজস্ব উন্নত এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমও রয়েছে,
যা শত্রুর ক্ষেপণাস্ত্র আকাশেই ধ্বংস করতে
সক্ষম।
পরমাণু হামলার সম্ভাবনা:
যদিও উভয় দেশের কাছেই বিপুল সংখ্যক পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে,
একটি সরাসরি পরমাণু যুদ্ধের সম্ভাবনা কম।
কারণ, উভয়
দেশই জানে যে এই ধরনের সংঘাত শুরু হলে উভয় পক্ষই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হবে। কোনো
দেশই সম্পূর্ণ ধ্বংসের ঝুঁকি নিতে চাইবে না। তবে, আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট উত্তেজনা
জিইয়ে রেখেছে।
পরমাণু হামলা হলে আমাদের করণীয়:
পরমাণু হামলার চারটি পর্যায় রয়েছে:
প্রথম পর্যায় (০-২ মিনিট): বোমা বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে তীব্র তাপ,
আগুনের গোলা,
তেজস্ক্রিয়তা এবং শক ওয়েভ তৈরি হবে।
দ্বিতীয় পর্যায় (২-১০ মিনিট):
বোমা যেখানে পড়েছে, তার কাছাকাছি থাকা ব্যক্তিদের বাঁচা কঠিন।
যারা তুলনামূলকভাবে দূরে আছেন, তাদের অবিলম্বে "ড্রপ,
কভার ও ডোন্ট লুক" পদ্ধতি অনুসরণ করতে
হবে: মাটিতে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন, মুখ মাটির দিকে রাখুন,
চোখ বন্ধ করুন এবং কোনো শক্ত কিছুর আড়ালে
আশ্রয় নিন। দাঁড়ানো অবস্থায় থাকলে শক ওয়েভের ধাক্কায় উড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
সরাসরি বোমার দিকে তাকালে চোখের ক্ষতি হতে পারে।
তুলনামূলকভাবে দূরবর্তী স্থানে থাকা ব্যক্তিদের বাঁচার সম্ভাবনা কিছুটা বেশি,
যদি তারা দ্রুত পদক্ষেপ নেন এবং কাঠামোগত
ক্ষতি থেকে বাঁচতে পারেন।
তৃতীয় পর্যায় (১০-৬০ মিনিট):
বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট তেজস্ক্রিয় কণা ধুলো, ছাই বা বৃষ্টির আকারে নিচে নেমে আসতে পারে।
এই সময় বেসমেন্ট বা সিল করা বিল্ডিংয়ে আশ্রয় নেওয়া জরুরি।
বাইরের পোশাক খুলে ফেলতে হবে, কারণ তাতে তেজস্ক্রিয় কণা লেগে থাকতে পারে।
অবিলম্বে সাবান ও শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে স্নান করতে হবে,
বিশেষ করে চুল পরিষ্কার করতে হবে। কন্ডিশনার
ব্যবহার করা উচিত নয়। নাক, কান ও চোখ ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে।
চতুর্থ পর্যায় (৪৮ ঘণ্টা পর):
প্রথম ঘণ্টায় তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা যা থাকে, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে
আসে।
এই সময়ও যতটা সম্ভব বাড়ির ভেতরে থাকা উচিত।
প্যাকেজ করা খাবার ও সিল করা জল পান করতে হবে।
যদি সম্ভব হয়, পটাশিয়াম আয়োডাইড ট্যাবলেট খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
প্রস্তুতি:
একটি জরুরি অবস্থার জন্য নিম্নলিখিত জিনিসপত্র প্রস্তুত রাখা যেতে পারে:
তিন দিনের ওষুধ, জল ও খাবার।
আলো (টর্চ)।
বাঁশি (দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য)।
প্রাথমিক চিকিৎসার কিট।
স্যানিটেশন কিট (সাবান ও অন্যান্য)।
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা:
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত আঞ্চলিক উত্তেজনা প্রশমনে গঠনমূলক ভূমিকা রাখা।
উভয় দেশের উচিত পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করা এবং শান্তির পথে
অগ্রসর হওয়া।
আশার বাণী:
ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, একটি পূর্ণাঙ্গ পরমাণু যুদ্ধের সম্ভাবনা কম,
কারণ এর ধ্বংসাত্মক পরিণতি উভয় পক্ষই উপলব্ধি
করে। আন্তর্জাতিক নজরদারি এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা
বজায় রাখা সম্ভব।
উপসংহার:
আঞ্চলিক উত্তেজনা একটি উদ্বেগের বিষয়, তবে দায়িত্বশীল আচরণ এবং কূটনৈতিক পদক্ষেপের
মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। জনগণের উচিত শান্ত থাকা এবং যেকোনো জরুরি
অবস্থার জন্য প্রস্তুত থাকা।
কোন মন্তব্য নেই