তাহাজ্জুদে ২ ফেরেশতা। তাহাজ্জুদের ফজিলত। All Bangla/ Nizam Uddin
তাহাজ্জুদের ফজিলত
তাহাজ্জুদের ওয়াক্তে 2 ফেরেশতা কি করে
হযরত সুফিয়ান সওরী (রহঃ) বলেন একবার আমার পক্ষ থেকে একটি গুনাহ হয়ে গেল সে জন্য ৫ মাস পযন্ত আমি তাহাজ্জুদ নামাজ থেকে মাহরুম হয়ে গেলাম, কোনভাবেই আমি তাহাজ্জুদের সময় উঠতে পারতাম না। আর আপনারা কি জানেন সে গুনাহ কি ছিল? এক যুবক মুনাজাত করছিল আর কাঁদছিল আমি তাঁর কান্না দেখে মনেমনে ভাবলাম এ যুবকটি কাঁদছেনা বরং রিয়া করছে, লোক দেখানো কান্না করছে। এই কু ধারনার গুনাহের কারনে আল্লাহ তায়ালা ৫ মাস পর্যন্ত আমাকে তাহাজ্জুদ থেকে মাহরুম করে দিলেন। এখন দেখুন আমরা সবকিছুতেই কু ধারনা, কেহ সত্যিকারের ভালকাজ করলেও বলি সে লোকে দানবীর বলার জন্য এসব করছে, কিংবা আপনি যদি সত্যিকার ভাবেই মসজিদের খেদমত করেন তখন মানুষ আপনার ব্যপারে কু ধারনা পোষন করে বলবে কি ব্যাপারে সামনে চেয়ারম্যন ইলেকশনে দাঁড়াবে মনে হয়, এ ধরনের বাজে কমেন্টের কারনে এখন মানুষ আর ভাল কাজ করতেও চায় না।
আমরা সাহাবাগনের জীবনী দেখলে তাতে দেখতে পায় তারা সারাদিন পরিশ্রম করত কিন্তু তারপরও তাদের তাহাজ্জুদ নামাজ ছুটত না, সারাদিন জিহাদের ময়দানে ঘোড়ার পিঠে থাকত আর সারা রাত মুসল্লার পিঠে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আল্লাহকে রাজি করত। কিন্তু আমাদের নফস আমাদেরকে তাহাজ্জুদের মত েএত মহান নেয়ামত থেকে এ বলে ধোকা দেয় এটা নফল এবাদত কি দরকার রাত জেগে এ নামাজ পড়ার?
অথচ আল্লাহ তায়ালা রাতের যে সব ফেরেশতা তাদের ২টি দল বানিয়ে দেন তাদের ১ দলকে আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দেন তোমরা অমুক অমুক আমার বান্দাদের কাছে যাও এবং তাদেরকে নিজের পাখা দিয়ে মেরে ঘুম থেকে জাগিয়ে দাও, সে তাহাজ্জুদে উঠবে আমার সামনে গিরগির করে কেঁদে কেঁদে দোয়া করবে আমি তার ঝুলি ভরে দিব। তাই এসব লোক কোন এলাম কোন ঘড়ি ছাড়া ঘুমিয়ে পড়ে শেষ রাতে তাহাজ্জুদের সময় হঠাৎ করে তাদের চোখ খুলে যায়, এটা আল্লাহ প্রেরিত ফেরেশতা তাদের ডেকে দেন।
আর ফেরেশতাদের ২য় গ্রুপকে আল্লাহ তায়ালা বলেন যাও অমুক অমুক আমার অপছন্দনীয় বান্দা আমি তাদের পছন্দ করি না তোমরা যাও আর তাঁদেরকে গভির ঘুমে আচ্ছন্ন করে দাও, এটা আমার নেক ও মকবুল বান্দাদের এবাদতের সময় আর আমি চাইনা এ কমবকত এ সময় তার চেহেরা ছুরত আমাকে দেখাক।তাই এসব লোক দেখবেন রাতের ১টা ২টা ৩টা পযন্ত জেগে থাকবে, টিভি দেখবে, গল্প করবে, চেটিং করবে, কিন্তু যখন তাহাজ্জুদের সময় হবে তার নিদ্রা এসে যাবে। সে গভির ঘুমে লুটিয়ে পড়বে, কারন এটা অত্যন্ত বরকতময় সময়, আল্লাহর রহমত নাযিলের সময়, আল্লাহর প্রিয় বান্দানের সাথে আল্লাহর সাক্ষাতের সময়, আর েএমন সময় নাফরমান কমবখত লোক গুলিকে আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের দ্বারা ঘুমে আচ্ছন্ন করে দেন।
আমরা মনে করি আমরা তাহাজ্জুদ পড়ি না, এটা ভুল ধারনা বরং আমাদের দ্বারা এমন কিছু গুনাহ হয়ে যায় ফলে আল্লাহ তায়ালা সে বরকতময় ওয়াক্তে আমাদের চেহেরা দেখতে পছন্দ করেন না।
আমরা যখন গুনাহ করি এর ফলে কলবে একটি কালো ফোটা বা দাগ লাগে, এভাবে কেহ যখন বার বার গুনাহ করতে থাকে তখন এ গুনাহের ফলে প্রতিনিয়ত কালো কালো ফোটা পরতে পরতে তার কলব সম্পূর্ণ কালো হয়ে যায় তখন আর তার অন্তরে ভাল কাজ ভাল লাগে না, ভাল কথা ভাল লাগে না, ভাল কথা শুনার ধৈর্য্য থাকে না, ৩ ঘন্টার মুভি এক বসায় শেষ করতে পারে কিন্তু একটা ইসলামীক ভিডিও যদি ২ মিনিট থেকে ৩ মিনিট হয় তা আর দেখে না, এসব লোক কমেন্টে পরামশ ঢালতে থাকে, অনেক সময় হুমকিও দেয়, এত লম্বা ভিডিও হলে আপনার ভিডিও আর দেখব না, কিন্তু আপনি কি জানেন সব মানুষ এক সমান নয়, কিছু মানুষ আছে অতি সংক্ষেপে বুঝে ফেলে আর কিছু মানুষ আছে তাঁদেরকে বিস্তারিত বুঝিয়ে বলতে হয়, আর আমাদের ভিডিওগুলি শুধুই বিচক্ষনদের জন্য নয় বরং যারা কম বুঝে তাদের জন্যও বটে।
যাক সে কথা মানুষের অন্তর যদি মৃত্যু বরণ করে তখন সে অন্তর জীবিত করার একটি উপায় হল সুন্নতের উপর আমল করা। সমস্ত কাজ নবী করিম (দঃ) এর সুন্নত মোতাবেক করতে হবে খাওয়া দাওয়া, উঠা বসা, চলা ফেরা লেনদেন, কথাবার্তা, দায়িত্ব কর্তব্য সবই সুন্নত সম্মত পন্থায় করতে হবে। ছোট থেকে ছোট বড় থকে বড় কোন আমলই সুন্নতের খেলাফ যাতে না হয়।সদা এ জিনিষ জানার আগ্রহ থাকতে হবে। আর এর সবচেয়ে উত্তম উপায় হল মাসনুন দোয়ার যে ছোট ছোট বই আছে তা সাথে রাখবেন যে জায়গায় যে দোয়া পড়তে হয় সে দোয়া সে বই থেকে দেখে দেখে পড়বেন কিছুদিন পর দেখবেন সবগুলি মসনুন দোয়া আপনার মুখস্থ হয়ে গেছে।
মসনুন দোয়া যারা পড়তে থাকে তার ফলে মানুষ সদা আল্লাহর প্রতি মনযোগী থাকে।
খাবার আগে দোয়া, খাবার পর দোয়া, ঘুমানোর আগে দোয়া, ঘুম থেকে উঠে দোয়া, কারো সাথে সাক্ষাতের দোয়া, ঘরে প্রবেশের দোয়া, এসব মসনুন দোযার বরকতে আল্লাহ তায়ালা বান্দার অন্তরকে আল্লাহর প্রতি আকৃষ্ট রাখেন। আপনি নিজেই পরীক্ষা করে দেখবেন যদি সব সময় এসব মসনুন দোয়া পড়েন তখন অটোমেটিক আপনার মন আল্লাহর দিকে সদা আবদ্ধ থাকবে।
অন্তরকে পরিস্কার কিংবা কলবের কালিমা দুর করার আরো একটি পদ্ধতি হল রাতের শেষ প্রহরে কয়েক রাকাত নফল তথা তাহাজ্জুদ নামাজ নিয়ে আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে যাওয়া, আল্লাহ তায়ালা ফরমান (ওয়াল্লাজিনা এয়াবিতুনা লি রাব্বিহিম সুজ্জাদাও ওয়া কিয়ামা)
হাদীসে পাকে আছে (আফযালুস সালাতে বাদাল মাকতুবাতে কিয়ামুল লাইল) ৫ ওয়াক্ত ফরয নামাজের পর সবচেয়ে আফযল নামাজ হল তাহাজ্জুদ নামাজ।
হযরত হাসান রহঃ কে একজন প্রশ্ন করল হুযুর বলেন কি কারনে তাহাজ্জুদ নামাজ যারা পড়ে তাদের চেহেরা খুবই নুরানী হয়? (কালা লিআন্নাহুম খালাও লির রাহমান ফা আলবাছাহুম নুরুম মিন নুরীহি) হযরত হাসান জবাব দেন, সে একাকী নির্জনে রহমানের সাথে সময় কাটায়, আল্লাহ নিজের নুরকে সে বান্দার চেহেরায় পলিশ করে দেন।
এক লোক এসে এক বুযুগকে প্রশ্ন করল হযরত আমি রাতে তাহাজ্জুদ পড়তে উঠতে পারি না কোন আমল থাকলে বলে দিন, বুযুর্গ খুবই সহজ জবাব দিলেন, বললেন ভাই আপনি নিজের দিনের আমলসমুহের হেফাজত করুন তাহলে আল্লাহ তায়ালা আপনাকে রাতের আমলের তৌফিক দান করবেন।
আমরা দিনে আল্লাহর নাফরমানি করি আর সে জন্যই রাতের এবাদত থেকে আল্লাহ আমাদেরকে মাহরুম করে দেন।
(ফাকালা লা তা’ছিহি বিন নাহার ) তুমি দিনে আল্লাহর নাফরমানি করিও না (ওয়া হুয়া ইউকিমাকা বায়না এয়াদায়হি বিল লাইল) তাহলে তিনি তোমাকে রাতে কিয়ামের তৌফিক দান করে দিবেন।
অতএব আমরা যদি আমাদের কালো অন্তরকে সাদা করতে চাই তাহলে আমাদেরকে তাহাজ্জুদের গুরুত্ব দিতে হবে, প্রতিটি ক্ষেত্রে সুন্নতের গুরুত্ব দিতে হবে।
কোন মন্তব্য নেই