জুমার খুতবা। কুরবানী নিয়ে সকল অভিযোগের জবাব।
জিলহজ্ব মাসের ১ম খুতবা
কুরবানী কি হিংস্রতা?
কুরবানী কি পশু হত্যা?
কুরবানী কি টাকার অপচয়?
কেহ বলেন কুরবানীর টাকা দিয়ে কোন গরীবের মেয়েকে বিয়ের ব্যবস্থা করে দেয়া উচিত।
এসব প্রশ্ন যারা করে তাদের উদ্দেশ্যে পবিত্র কুরানের বানী (মা কানা মুমিনিন ওয়ালা মুমিনাতিন ইজা কাদাল্লাহু ওয়া রাসুলুহু আমরান আইয়্যাকুনা লাহুমুল খিয়ারাতু মিন আমরিহিম) কোন মুমিন পুরুষ ও নারীর জন্য এটা জায়েজ নাই যে যখন আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (দঃ) কোন হকুম এরশাদ করে দেন তখন সে হকুমের সামনে নিজের রায় পেশ করে।
মানুষের কোন রায়ের সামনে অপূর্ণতা থাকতে পারে কিন্তু আল্লাহ ও রাসুলের রায়ের মধ্যে সামান্যতম অপূর্ণতার সম্ভাবনাও নাই।
ঘটনা: এক ইহুদী ও এক মুসলমান (মুনাফিক) এর মধ্যে কোন বিষয়ে ঝগড়া লাগল, সে ঝগড়ার বিচার নিয়ে তারা হুযুর (দঃ) এর সমীপে উপস্তিত হল, ন্যায় বিচারের পায়কর হযুর (দঃ) উভয়ের কথা শুনে ইহুদীর পক্ষে রায় দিলেন, এ রায় শুনে মুনাফিক মুসলমান ইহুদীকে বলল আমি এ রায় মানি না চল হযরত ওমর এর কাছে যাওয়া যাক হযরত ওমর যে রায় দিবে তাই মেনে নিব, মুনাফিক মনে করেছিল হযরত ওমর লেবাছধারী সে মুসলমানের পক্ষে রায় দিবে, হযরত ওমর উভয়ের কথা শুনলেন এবং ইহুদী এটাও বলে দিল যে আমাদের এ মামলার বিচার আপনাদের নবী করেছেন এবং তিনি আমার পক্ষে ফয়সালা দিয়েছেন, কিন্তু আপনার এ মুসলমান ভাই আপনাদের নবীর সে ফয়সালা না মেনে পুনরায় আপনার কাছে বিচার দিতে এসেছে, এ কথা শুনে হযরত ওমর (রাঃ) এক মুহুর্ত দেরী না করে তরবারী দিয়ে সে লেবাছধারী মুসলমানকে হত্যা করে দিল এবং বলল যে হুযুর (দঃ) এর ফয়সালাকে অমান্য করে তার একমাত্র ফয়সালা হল তরবারী।
সুতরাং মুসলমান মাত্রই আল্লাহ তায়ালা যা এরশাদ করেছেন এবং মহানবী (দঃ) যা কিছু শরীয়ত দিয়েছেন তা চক্ষু বন্ধ করে মানার নামই হল ঈমান।
ঘটনা: (এয়া আইয়্যুহাল্লাজিনা আমানু উদখুলু ফিস ছিলমি কাফফা) হে ঈমানদারগন তোমরা ইসলামে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ কর।
এ আয়াতখানি নাযিল হওয়ার শানে নুযুল হল হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রাঃ) ইসলাম কবুলের পূর্বে ইহুদী ছিলেন তিনি ইহুদীদের বড় আলেম ছিলেন আর ইহুদী ধর্মে উটের গোস্ত দুধ খাওয়াকে অপছন্দ করা হত, তিনি যখন ইসলাম কবুল করলেন দেখলেন ইসলামে উটের গোস্ত খাওয়া বৈধ, ফরয নয়, ওয়াজিব নয়, সুন্নত নয়, মুস্তাহাব নয়, মুস্তাহাসান নয় বরং মুবাহ উটের গোস্ত খেলে কোন নেকি নাই, না খেলে কোন গুনাহ নাই, কিন্তু আবদুল্লাহ ইবনে সালাম যেহেতু ইহুদী ধর্মে থাকাকালীন এটিকে ঘৃণা করত সে জন্য তিনি ইসলাম কবুলের পরও মনের মাঝে উটের গোস্তের প্রতি সে ঘৃণাটি রয়েগেছে, তখন আল্লাহ তায়ালা এ আয়াত নাজিল করলেন (হে ইমানদারগন তোমরা ইসলামে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ কর)
সুতরাং আজকাল যারা কুরবানীকে অতি হালকা ভাবে নিচ্ছেন এর গুরুত্বকে খাটো মনে করছেন তাদের জন্য এ হকুম প্রযোজ্য। (হে ঈমানদারগন ইসলামে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ কর।)
সব নেক আমল করা উচিত
অনেক সময় আমরা কোন নেক আমলকে হালকা মনে করে ছেড়ে দিয়ে থাকি, এটা উচিত নয় কারন আল্লাহ তায়ালা কোন নেক আমলে সন্তুষ্ট তা লুকায়িত যেমন এক হাদীসের মফহুম হল বান্দা যখন গুনাহ করতে করতে দোযখের কিনারায় পৌঁছে যায় তখন শেষ মুহুর্তে সে এমন একটি নেক আমল করে বসে যা তাঁকে জান্নাতে পৌঁছে দেয়, তাই ছোট হউক বড় হউক সব ধরনের নেক আমলই গুরুত্বের সাথে করা উচিত।
সদা আল্লাহর রাস্তায় কুরবানী দিতে হবে
কুরবানীর সময় শুধু ১টি পশু কুরবানী করাটাই যথেষ্ট নয় বরং ইসলামের জন্য আমাদেরকে সদা উত্তম জিনিষ, সদা প্রিয় জিনিষ কুরবানী দেয়ার মন মানসিকতা থাকতে হবে।
মুসলমান মাত্রই প্রতিনিয়ত কুরবানী দেয়
ঘুম কুরবানী: ফজরে নামাজের জন্য ভোরে ভোরে উঠে যাওয়া যখন সবচেয়ে বেশী আরামের ঘুমের সময় তখন বিছানা ছেড়ে তাহাজ্জুদের জন্য দাঁড়িয়ে যাওয়াও কুরবানী।
হারাম রুজি কুরবানী: হারাম কামাই শর্টকার্ট ইনকামের সুযোগ সামনে এসে গেল কিন্তু আল্লাহর ভয় মুসলমানকে বাধ্য করল এমন রোজগার থেকে বেঁচে থাকতে।
*** মনে রাখবেন আসমান জমিন সৃষ্টির ৫০ হাজার বছর আগে আল্লাহ তায়ালা তকদীর লিখে রেখেছেন সেখানে লিখিত রয়েছে আপনি কত টাকা রোজগার করবেন কতটাকা খরচ করবেন, আর সে রোজগার যতদিন আপনার কব্জায় না আসবে ততদিন আপনার মৃত্যুর হবে না। সুতরাং আমাদের সামনে ২টি রাস্তা ১টি হল হালাল বা বৈধ রাস্তা অন্যটি হল অবৈধ রাস্তা।
ঘটনা: এক সাহাবী উটে চড়ে মসজিদে গেল বাহিরে একজন দাঁড়িয়ে রইল সে সাহাবীকে বলল হুযুর আপনি মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ে আসুন আমি আপনার উটটি দেখা শুনা করব, সাহাবী মসজিদে নিশ্চিন্তে প্রবেশ করেন, সেখানে নামাজ শেষ করে বাহিরে এসে দেখেন, সে ছেলেটি নাই বরং সে উটের জিন তথা সিটটি নিয়ে চলে গেছে, পাশে ছিল একটি দোকান সে দোকানে গিয়ে সাহাবী দেখেন উনার উটের সিটটি সে দোকানে , সাহাবী দোকানদারকে প্রশ্ন করলেন আপনি এক উটের সিটটি কোথায় পেলেন দোকানদার জবাব দিল আমি এক ছেলে থেকে কিছুক্ষন আগে ২ দিনার দিয়ে কিনে নিয়েছি, তখন সাহাবী বললেন সে ছেলেটি আমার উট পাহাড় দিবে বলায় আমি মসজিদে প্রবেশ করলাম, নামাজ শেষে আমি যখন বাহিরে আসছিলাম তখন হাতে ২ দিনার নিলাম তাকে বখশিশ দেয়ার জন্য কিন্তু দেখলাম সে নাই আর সে তা ২ দিনার দিয়ে আপনার কাছে বিক্রী করে দিয়েছে, আল্লাহ তায়ালা তার রিযিকে ২ দিনার রেখেছিল কিন্তু সে হারাম পন্থা অবলম্বন করেছে।
তাই আমাদের উচিত একটু দেরী হলেও হালাল পথে যেন আমাদের পকেটে টাকা পয়সা আসে, হারাম পথে একটু আগে আসতে পারে কিন্তু তা আপনার জন্য কখনো কল্যান বয়ে আনবে না।
ব্যবসায় কুরবানী: আপনি ব্যবসা করছেন সেখানে সত্য বলে আপনি ফায়দা করতে পারছেন না এটাও এক প্রকার কুরবানী।
ঘটনা: ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) কাপড়ের ব্যবসায়ী ছিলেন, তিনি নিজের দোকানে যে কর্মচারী রেখেছেন তাকে বলেছেন দেখ এ কাপড়ের থানে সামান্য ত্রুটি আছে তা কাষ্টমারকে বলে দিও, কর্মচারী কাষ্টমারকে সে ত্রুটির কথা না বলেই সে থান বিক্রী করে দিল, বিকালে ইমাম আবু হানিফা যখন এ কথা জানতে পারলেন তিনি সেদিনের বিক্রীর সব টাকা সদকা করে দিলেন।
মসজিদে দানের কুরবানী: মসজিদে এসেছেন পকেটে বড় নোটও আছে ছোট নোটও আছে আগামী জুমায় আসতে পারবেন কিনা সেটা চিন্তা করে বড় নোটটাই মসজিদের দানবাক্সে দিয়ে দিলেন এটাও কুরবানী।
দাঁড়ির কুরবানী: আপনি ক্লিন সেইভ করলে আপনাকে সুন্দর লাগে, কিন্তু দাঁড়ি রাখা সুন্নত, তাই আপনি দাঁড়ি রেখে সুন্নত পালন করেছেন এটাও একটা কুরবানী।
আত্মীয়তার বন্ধনে কুরবানী: আপনার আত্মীয় আপনাকে যথাযথ সম্মান দেননি, আপনাকে যথাযোগ্য মর্যাদা দেননি সে জন্য আপনি খুবই দুঃখ পেয়েছেন কিন্তু আত্মিয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীকে আল্লাহ ও রাসুল পছন্দ করেন নাই তাই আপনি নিজের ইগোকে কুরবানী করে সে বন্ধন অটুট রাখলেন।
রাগ দমন: আমাদের খুব অল্পতেই রাগ আসে সে রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে আমরা অনেক অপরাধ করে বসি। অথচ ইসলামে রাগ হারাম, তাই আমাদেরকে রাগকে পান করতে বলা হয়েছে (ওয়াল কাজিমিনাল গাইজ)
ঘটনা: হযরত মালেক বিন দিনার উনার পাশে এক ইহুদী প্রতিবেশী ছিল সে প্রতিবেশী ঘরের সব ময়লা মালেক বিন দিনারের ঘরের সামনে রেখে যেত বেশ কয়েক বছর এমন অত্যাচার করার পরও মালেক বিন দিনার যখন এ অন্যায়ের কোন প্রতিবাদ করেননি তখন ইহুদী মালেক এর কাছে প্রশ্ন করল আপনার ঘরের সামনে আমি যে ময়লা ফেলি তাতে আপনার রাগ লাগে না? মালেক বললেন রাগ লাগে তবে ইসলাম ধর্মে রাগ দেখানো হারাম তাই আমি রাগকে পান করে ফেলি, আর আপনি ময়লা ফেলে যাওয়ার পর সে ময়লা আমি নিজ হাতে পরিস্কার করে ফেলি। এ কথা শুনে সে ইহুদী ইসলাম কবুল করে নিলেন। সুবহানাল্লাহ।
এভাবে প্রতি মুহুর্তে একজন মুসলমান ইসলামের বিধানের সামনে নিজের সকল অনৈসলামিক খায়েশকে কুরবানী করেন।
আপনার যা মন চাই তাই আপনি করতে পারবেন না, আপনি যেহেতু মুসলমান আপনার প্রতিটি কর্মকান্ড হতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।
*বন্ধুরা বলছে মদ পান করতে যেহেতু হারাম তাই কড়া ব্রেক লাগাতে হবে
*মন চাইছে ইভটিজিং করতে আল্লাহর অপছন্দ তাই বাদ দিয়ে দিন
*মন বলছে বেগানা নারী দেখতে আর আল্লাহ বলছে (কুল লিল মুমিনিনা আইয়্যাগুদ্দু আবছারাহুম) সুতরাং দেখা যাবে না।
এখলাসের ফজিলত
ওয়ামা উমিরু ইল্লা লিয়াবুদুল্লাহা মুখলিসিনা লাহুদ্দীন (অথ্যাৎ- তারা তো কেবল আদিষ্ট হয়েছিল খাঁটিভাবে আল্লাহর এবাদত করতে।
হযরত হাসান থেকে বর্ণিত এক হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তায়ালা বলেন। এখলাস আমার রহস্য। আমি যাকে ইচ্ছা এই রহস্য অবগত করি। হযরত আলী (রাঃ) বলেন আমলের স্বল্পতার জন্যে চিন্তিত হয়ো না, বরং কবুল হওয়ার ব্যাপারে চিন্তিত হও। কেননা রাসুলে কারীম (দঃ) একবার মুয়ায বিন জাবালকে বলেন- এখলাস সহকারে আমল কর এরূপ আমল অল্পই তোমার জন্য যথেস্ট হবে।
সর্বপ্রথম ৩ ব্যক্তিকে দিয়ে জাহান্নামে আগুন জ্বালানো হবেঃ
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (দঃ) এরশাদ করেন কিয়ামতের দিন ৩ ব্যক্তিকে প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে (১) যাকে ইলম দান করা হয়েছে তাকে প্রশ্নকরা হবে তুমি তোমার এলম দিয়ে কি করেছ? সে বলবে ইলাহী দিবারাত্রি আমি এরই খেদমত করেছি। আল্লাহ বলবেন তুমি মিথ্যা বলছ। তোমার বাসনা ছিল যেন মানুষ তোমাকে আলেম বলে। তোমাকে দুনিয়াতে আলেম বলা হয়েছে। (২) যাকে ধন সম্পদ দান করেছেন---- দানবীর বলে (৩) জিহাদ করে শহীদ হয়েছে---- মানুষ শহীদ বলে।
আবু হুরায়রা বলেন এরপর রাসুলুল্লাহ (দঃ) আমার উরুতে ১টি রেখা টেনে বলভেন হে আবু হুরায়রা সর্বপ্রথম এ ৩ ব্যক্তিকে দিয়েই জাহান্নামের আগুন জ্বালানো হবে। এ হাদীস শুনে হযরত মুয়াবিয়া কাঁদতে কাঁদতে মৃতপ্রায় হয়ে গেলেন। অতপর বলেন আল্লাহ ঠিকই বলেছেন
(মান কানা ইউরিদুল হায়াতাদ্দুনিয়া ওয়াজিনাতাহা নুয়াফফি ইলায়হিম আমালাহুম ফিহা ওয়াহুম ফিহা লা ইউবখাছুন) অথ্যাৎ যারা পার্থিক জীবন ও তার সাজসজ্জা কামনা করে আমি দুনিয়াতেই তাদের আমলের প্রতিদান পুরুপুরি দিয়ে দিই। তারা এতে ঠকে না।
ঈদুল আযহায় বজনীয় কাজ
১. গোশত খাওয়ার নিয়তে কুরবানী
২. হারাম উপাজনের টাকায় কুরবানী
৩. ভাগে কুরবানীতে একজনের নিয়তও যদি সমস্যা থাকে বাকীদের কুরবানীও হবে না
৪. এবার গরুটা কিনে ঠকছি এমনতর কথা বলা
৫. পশুর ওজন পরিমাপ করে প্রতি কেজির মূল্য নির্ধারন করা
৬. পশুর বয়স যাচাই না করা, গরু মহিষ ২ বছরের কম হলে কুরবানী হবে না, ছাগল ১ বছরের কম হলে কুরবানী হবে না।
৭. কম দামে কিনে বেশী দাম বলা বেশী দামে কিনে কম দাম বলা
৮. লোক দেখানোর নিয়তে ফেইসবুকে কুরবানীর পশু ছবি দেয়া।
৯. জিলহজ্ব মাসের চাঁদ উঠলে কোন হালাল প্রাণী যেমন মুরগী জবেহ করা যাবে না বলে ধারনা করা
১০. কুরবানীর পশুর রক্ত বাড়ীর চারদিকে ছিটানো, যাতে জ্বিন না আসে।
১১. মা বাবা মৃত্যুর আগে অছিয়ত করে গেলে তাঁদের পক্ষ থেকে কুরবানী করা যাবে, তবে সে কুরবানীর গোস্ত গরীবদেরকে সদকা করে দিতে হবে।
১২. সন্তান নিজে নেসাবের মালিক সম্পদের মালিক সে নিজের কুরবানী না করে মা বাবার পক্ষ থেকে কুরবানী করা, যদি মা বাবা নেসাবের মালিক না হন তখন সন্তানের উচিত আগে নিজের ওয়াজিব কুরবানী করা এবং মা বাবার জন্য নফল হিসেবে কুরবানী করা।
ইদানিং কিছু টাটকা ভূল ফতোয়া শুনা যায় যেমন
১৩. কুরবানীর সাথে আকিকা করা যাবে না বলে মনে করা
১৪. গরুতে ৭ ভাগ দেয়া যাবে না এটাও একটি টাটকা ভুল ফতোয়া
১৫. মৃতদের পক্ষ থেকে কুরবানী করা যাবে না
#তাশরীকের তাকবীর ইবরাহিম বলল আল্লাহুআকবর আল্লাকবর, জিবরাইল বলল লা ইলহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবর, ইসমাইল বলল ওয়ালিল ল্লাহিল হামদ।
☞ প্রশ্নঃ-
তাকবীরে তাশরীক কি?
তাকবীরে তাশরীকের ইতিহাস কি? তাকবীর বলা ফরয না ওয়াজিব? তাকবীর কত তারিখ থেকে কত তারিখ পর্যন্ত বলতে হবে? আর যদি কোন নামাযের পর তাকবীর বলতে ভুলে যাই তখন করনীয় কি??? প্রশ্নগুলোর সমাধান দিলে আমলে নিয়োজিত হবো!
☞ উত্তরঃ
তাকবীরে তাশরীক হলোঃ
ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻛﺒﺮ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻛﺒﺮ .
ﻻﺍﻟﻪ ﺍﻻ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺍﻛﺒﺮ .
ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻛﺒﺮ ﻭﻟﻠﻪ ﺍﻟﺤﻤﺪ .
তাকবীরে তাশরীকের ইতিহাস"
তাকবীরে তাশরীক কোন ঘটনা থেকে শুরু হয়েছে, তা একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন৷ তবে যতদুর জানা যায় তা হলোঃ হযরত ইবরাহীম (আঃ) যখন তার পুত্র হযরত ইসমাঈল (আঃ) কে কুরবানী করার জন্য মাটিতে শুয়ায়ে তার গলায় ছুড়ি চালাচ্ছিলেন, ঠিক এমনই মূহুর্তে আল্লাহ তায়ালা হযরত জিবরাইল (আঃ) কে নির্দেশ দিলেন,একটি জান্নাতী দুম্বা নিয়ে দ্রুত হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর কাছে পোঁছার জন্য৷ তখন হযরত জিবরাইল (আঃ) খুবদ্রুত আসছিলেন৷ কিন্তু দূর থেকেই দেখতে পেলেন হযরত ইবরাহীম (আঃ) তার পুত্রের গলায় ছুরি চালাচ্ছেন৷ তখন জিবরাইল আঃ আশংকা করলেন যে,তিনি পৌঁছার পূর্বেই বুঝি ইসমাইল আঃ জবাই হয়ে যাবেন৷ তাই তিনি ঘাবড়ে গিয়ে উচ্চস্বরে বলে উঠলেনঃ
ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻛﺒﺮ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻛﺒﺮ
হযরত জিবরাইল (আঃ) এর তাকরীর পাঠ শুনে হযরত ইবরাহীম (আঃ) বলে উঠলেনঃ
ﻻﺍﻟﻪ ﺍﻻ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺍﻛﺒﺮ .
আর হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর তাকবীর শুনে এবং দুম্বা জবাই হতে দেখে হযরত ইসমাঈল (আঃ) বলে উঠলেনঃ
ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻛﺒﺮ ﻭﻟﻠﻪ ﺍﻟﺤﻤﺪ
এভাবে তিনজনের যিকিরকে একত্রিত করে হয়েছে তাকবীরে তাশরিক৷
(কুরবানীর ইতিহাস ২২)
.
"তাকবীরে তাশরীকের বিধান"
※ যিলহজ্জ মাসের ৯-তারিখ ফজর থেকে ১৩-তারিখ আসর পর্যন ৫-দিনে মোট ২৩-ওয়াক্ত ফরয নামাযের পর একবার করে তাকবীরে তাশরীক পাঠ করা ওয়াজিব৷ অর্থাৎ প্রত্যেক বালিগ পুরুষ-মহিলা, মুকীম-মুসাফির, গ্রামবাসী-শহরবাসী, জামাতে নামায আদায়কারী-একাকী নামায আদায়কারী প্রত্যেকের উপর একবার করে তাকবীরে তাশরীক পাঠ করা ওয়াজিব৷ আর ওয়াজিব তরক করা গোনাহে কবীরা৷ তাই আইয়্যামে তাশরীকের দিনসমূহে প্রতি ফরয নামাযের পর ইচ্ছাকৃতভাবে তাকবীরে তাশরীক পাঠ না করা কবীরা গুনাহ৷ (ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১/১৮৬)
※ তাকবীরে তাশরীক একবার করে পাঠ করা ওয়াজিব৷ (আলমগীরী ১/১৮৬)
※ পুরুষদের জন্য উচ্চস্বরে এবং মহিলাদের জন্য নিম্নস্বরে তাকবীরে তাশরীক পাঠ করা ওয়াজিব৷ সুতরাং কোন পুরুষ যদি নিম্নস্বরে এবং মহিলা উচ্চস্বরে তাকবীরে তাশরীক পাঠ করে,তবে তা আদায় হবেনা৷
(তাহতাবী ২৯৫)
※ ফরয নামাযের সালাম ফিরানোর সাথে সাথেই তাকবীরে তাশরীক পাঠ করা ওয়াজিব৷ যদি এ সময় তাকবীরে তাশরীক পাঠ করতে ভুলে যায়,তবে যতক্ষন সে মসজিদে থাকবে ও নামায ভঙ্গ হয় এমন কোন কাজ না করবে,
ততক্ষন পর্যন্ত তার উপর তাকবীরে তাশরীক পাঠ করা ওয়াজিব৷ আর যদি নামায ভঙ্গ হয় এমন কোন কাজ করে ফেলে,তবে তার উপর তাকবীরে তাশরীক পাঠ করা ওয়াজিব নয়৷
কিন্তু এ অবস্থায় ভুলে যাওয়ার কারনে ওয়াজিব তরক করার কোন গোনাহ হবেনা এবং তার উপর কোন জিম্মাদারীও থাকবে না৷কেননা, তাকবীরে তাশরীকের কোন কাযা নেই৷ (তাহতাবী ২৯৫)
※ ইমাম তাকবীরে তাশরীক পাঠ করতে ভুলে গেলেও মুক্তাদীর তাকবীর বলা ওয়াজিব। ইমাম আবু ইউসুফ রহঃ বলেন,আমি আইয়্যামে তাশরীকের মধ্যে একবার নামাযের ইমামতি করছিলাম৷ সালাম ফিরানোর পর তাকবীরে তাশরীক বলতে আমার খেয়াল ছিলনা৷ তখন আমার মুহতারাম উস্তাদ হযরত ইমাম আজম আবু হানিফা রহঃ উচ্চস্বরে তাকবীর বললেন৷ তাঁর তাকবীর শুনে আমরা সবাই তাকবীর পাঠ করলাম৷(তাহতাবী ২৯০)
※ মাসবুকের জন্যও তার নামায আদায় করে তাকবীর বলা ওয়াজিব।(ফতোয়ায়ে শামী ১/৭৮৬)
※ একাকী নামায আদায়কালে যদি ফরয নামাযের পর তাকবীর বলতে ভুলে যায়। এবং এমন কিছু কাজ করে ফেলে, যার দ্বারা নামায নষ্ট হয়ে যায় যেমন, নামাযের স্থান থেকে উঠে যাওয়া,অথবা ভূলে বা ইচ্ছায় কথা বলা অথবা ইচ্ছা করে অজু ভঙ্গ করা ইত্যাদি, তবে তার উপর থেকে তাকবীর বলা রহিত হয়ে যাবে। (ফতোয়ায়ে শামী ১/৭৮৬)
※ যিলহজ্জ মাসের উল্লেখিত পাঁচ দিনের ছুটে যাওয়া ফরয নামায উক্ত পাঁচ দিনের মধ্যেই কাযা আদায় করলে,কাযা নামায আদায়ের পর তাকবীরে তাশরীকও পাঠ করাও ওয়াজিব।
(ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১/১৮৭)
※ তাকবীরে তাশরীক শুধু ফরয নামাযের পর পাঠ করা ওয়াজিব৷
তাছাড়া,ঈদের নামায,বিতর নামায, জানাযার নামায ইত্যাদি নামাযের পর তাকবীরে তাশরীক পাঠ করা ওয়াজিব নয়৷ (ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১/১৮৬)
০৫]
কোন মন্তব্য নেই