আদর্শবান স্ত্রীর ১০টি গুন স্বামীকে উন্নতির সুউচ্চতায় পৌঁছাতে পারে। আদর্শ...
স্ত্রীর ১০টি গুণে স্বামীর উন্নতি হয়
একজন সৎ ও নেককার স্ত্রী স্বামীর জন্য রহমত, অনেক বড় নিআমত। আজ এমন ১০ প্রকার স্ত্রীর পরিচয় তুলে ধরব যারা স্বামীর প্রকৃত ক্যল্যানকামী, স্বামীর উন্নতির সোপান এবং স্বামীর জন্য সবশ্রেষ্ঠ সম্পদ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাকে দুনিয়ার সবচেয়ে উত্তম সম্পদ হিসেবে ঘোষনা করেছেন।
হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত, যখন এই আয়াতটি নাযিল হল-
وَالَّذِينَ يَكْنزونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلا يُنْفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ الله.
(যারা স্বর্ণ-রৌপ্য জমা করে এবং তা আল্লাহ্র রাস্তায় খরচ করে না, তাদেরকে কষ্টদায়ক মর্মন্তুদ আযাবের সুসংবাদ দিন।) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন বার বললেন, ‘স্বর্ণ-রূপার বিনাশ হোক’ কথাটি সাহাবায়ে কেরামের জন্য কিছুটা ভারী মনে হল। তাই তারা জিজ্ঞেস করলেন, তাহলে আমরা কোন্ বস্তুকে সম্পদ হিসেবে গ্রহণ করব? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-
لِسَانًا ذَاكِرًا، وَقَلْبًا شَاكِرًا، وَزَوْجَةً تُعِينُ أَحَدَكُمْ عَلَى دِينِهِ.
যিকিরকারী যবান, শোকরকারী অন্তর, এবং এমন স্ত্রী, যে তার স্বামীকে দ্বীনের কাজে সহযোগিতা করবে। -তাফসীরে ইবনে কাসীর ২/৫৪৮ (দারুল ফিকর); মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৩১০১, ২২৩৯২
স্ত্রী হিসেবে একজন নেককার নারী তালাশ করা সকল পুরুষের কর্তব্য। আর প্রতিটি নারীর কর্তব্য, স্বামীকে দ্বীনের কাজে পরিপূর্ণ সহযোগিতা করা।
১। সে স্ত্রীই স্বামীর প্রকৃত কল্যানকামী যে তাঁর স্বামীর দুনিয়াবি উন্নতি কামনার সাথে সাথে স্বামীকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাতে মন প্রাণ দিয়ে চেষ্টা করে। যেমন আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন-
(কু আনফুছাকুম ওয়া আহলিকুম নারা) অথ্যাৎ তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও তোমাদের পরিবারকে বাঁচাও।
অতএব স্বামী যদি নামাজ রোজা ও ফরয এবাদতের ধার না ধারে তখন একজন প্রকৃত কল্যাণকামী স্ত্রী নিজের ধার্মিকতা ও ভালোবাসা দিয়ে স্বামীকেও ধার্মিক বানাতে সক্ষম হতে পারে। এবং নিজেও বাঁচতে পারে স্বামীকেও বাঁচাতে পারে অনন্তকালের জাহান্নামের সাজা থেকে।
২। অধিকাংশ পুরুষ অবৈধ পন্থায় উপার্জন করে স্ত্রীকে খুশী করার জন্য স্ত্রীর অপুরনীয় চাহিদা পুরণ করার জন্য, সে ক্ষেত্রে যে স্ত্রী সত্যিকারের স্বামীর উন্নতি চায়, স্বামীর কল্যান চায় সে স্ত্রী অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সাথে নরমে-কঠোরে যেভাবেই হোক হারাম থেকে স্বামীকে মুক্ত করতেই হবে। হারামের অভিশাপ থেকে নিজেদেরকে বাচাঁতে হবে। হালাল রিযিকের প্রতি উৎসাহ দিতে হবে এবং হালাল রিযিকের জন্য যত কষ্টই হোক, তার উপর সবর করার দৃঢ় মনোভাব পেশ করতে হবে। তাতেও যদি স্বামী বিরত না হয়, তাহলে স্বামীকে বুঝাতে হবে যে, না খেয়ে মরে যাব, তবুও হারামের কোনো অংশ পেটে যেতে দিব না। কিন্তু স্ত্রী যদি স্বামীর অবৈধ উপার্জনে আরো উৎসাহ দেয় অল্প কিছুদিন রাজাল হালতে চলা যায় কিন্তু পরবর্তীতে নেমে আসে তাদের জীবনে দুর্ভিষহ যন্ত্রনা। জেল জরিমানার ভয়, সন্তান বিগড়ে যাওয়ার ভয়, বড় বড় দুরারোগ্য ব্যধীর ভয়, পরকালীন আযাবের ভয়।
৩। অল্পেতুষ্ট স্ত্রী- যদি ও ইসলামী বিধান মোতাবেক স্ত্রীর যাবতীয় ভরন-পোষণের দায়িত্ব স্বামীর উপর অরপিত, তথাপিও স্ত্রীকে স্বামীর সমার্থের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখা তার দায়িত্ব। যে স্ত্রী স্বামী অল্প দিলেই তাতে খুশী থাকে সে স্ত্রীর স্বামী কখনো বিপদগামী হয় না। তাই অল্পেতুষ্ট স্ত্রী স্বামীর জন্য অনেক বড় আশির্বাদ ও নিয়ামত, এবং স্বামীর প্রকৃত বুদ্ধ ও কল্যানকামী।
৪। স্বামীর সম্পদের হেফাজতকারী - আদর্শ স্ত্রী অবশ্যই স্বামীর সম্পদ কে নিজের সম্পদ মনে করে রক্ষণা-বেক্ষণ করে থাকে। রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন_যে ব্যক্তিকে চারটি
নেয়ামত দেওয়া হয়েছে সে ইহকালে ও পরকালের মঙ্গলের অধিকারী হয়েছে। যথা-১)কৃতজ্ঞ হৃদয়, ২)আল্লাহকে স্মরণকারী জিহ্বা, ৩)বিপদে ধৈর্যধারণ শরীর ও মন, ৪)বাধ্য গত স্ত্রী যে তার স্বামীর দেহ ও তার সম্পদের ব্যাপারে বিশ্বাস ঘাতকতা না করে। (বায়হাকী)।
৫। সন্তানদের_উত্তম_শিক্ষাদানঃ সন্তানের প্রথম পাঠশাল হল মায়ের কোল, একজন আদর্শ মা তাঁর সন্তানকে ছোট থেকে যে শিক্ষায় শিক্ষিত করবে সেটাই তার সারা জীবনের জন্য পাথেয় হয়, তাই একজন সুশিক্ষিত মায়ের সন্তানও সুশিক্ষিত হবে, যা একজন স্বামীর জন্য অনেক বড় পাওয়া।
৬। স্বামীর অনুগত স্ত্রী- স্বামী স্ত্রী একই দেহে ২ টি অঙ্গ। ২জনের সমন্নয়ে ১টি নতুন সংসারের সুত্রপাত হয়। প্রত্যেকেই প্রত্যেকের নিকট অধিকার প্রাপ্য। তবুও স্বামী স্ত্রীর উপর কৃর্তৃত্বশীল। কুরআনের ভাষায়ঃ (আররিজালু কাওয়্যামুনা আলাননিসা) “পুরুষ নারীর উপর কৃর্তৃত্বশীল”। সূরা নিসা-৩৪। আল্লাহ পাকের এ নির্দেশ স্ত্রীর নতশির মেনে নিতে হবে। তার বিপরীত কাজ করলে পারিবারিক শান্তি-শঙ্খলা প্রতিষ্ঠা অসম্ভব। যদি কোন মহিলা অহংকার বশতঃ স্বামীর কৃর্তৃত্ব মেনে নিতে অস্বীকার করে তা হলে এই পরিবারে কোন শান্তি প্রতিষ্টিত হবে না। স্বামীর কৃর্তৃত্বের ব্যাপারে রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন-যদি নির্দেশ দিতাম তা হলে স্ত্রী কে নির্দেশ দিতাম স্বামীকে সিজদা করতে। (তিরমিযী)
রাসূল (সাঃ) অন্যত্র ইরশাদ করেন- কোন মহিলা যেন তার স্বামীর উপস্থিতিতে তার অনুমতি ব্যতিত ফরজ রোজা ছাড়া অন্য কোন রোজা না রাখে। (তিরমিযী)
সুতরাং একজন অনুগতা নারী সত্যিকার অর্থেই স্বামীর জন্য বড় নিআমত।
৭। ধর্য্যশীলতাঃ ধর্য্য একটি মহৎ গুণ। ধর্য্য সাফল্যের সোপান। একজন ধর্য্যশীলা স্ত্রীই পরিবারের সকল কে যে কোনো ধরনের মারাক্তক বিপর্যয় রক্ষা করতে পারে প্রবাদে বলে, যে সহে সে রহে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়,স্বামী যদি কোনো কারণে ক্রোধের বশবর্তী হয়ে স্ত্রী কে কোন কটু কথা বলে ফেলে এবং স্ত্রী তাৎক্ষণিক ভাবে উত্তপ্ত জবাব না দিয়ে একটু ধর্য্যধারন করে এবং স্বামীর ক্রোধ প্রশমিত হলে মিষ্টি স্বরে প্রতিবাদ জানায়, তা হলে স্বামী তার কৃ্তকর্মের জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হবে। এতে স্ত্রী নিজে যেভাবে একটি আসন্ন অঘটন থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে, তেমনি পরিবার কে একটা ধংসাত্নক পরিণতি থেকে বাঁচাতে পারে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন-(ইন্নাল্লাহা মায়াস সোয়াবিরিন) নিশ্চয়ই আল্লাহ ধর্য্যশীলদের সাথে আছেন।(সূরা বাকারা)
৮। সত্যবাদীতা_ও_কোমলতাঃ সত্যবাদী ও মিষ্টিভাষী মানুষ সর্বত্রই সমাদৃত। একজন সত্যবাদী ও মিষ্টিভাষী স্ত্রী পরিবারের জন্য নেয়ামত স্বরূপ। পক্ষান্তরে কর্কভাষী স্ত্রী দ্বারা কেউ শান্তি পায়না, তাই সে সকলের কাছেই অসহনীয় ও ঘৃণিত।
হাদিস অনুসারে সত্যবাদী ও উত্তম আচরনকারি আল্লাহ ও তার রাসূলের নিকট খুবই প্রিয়। রাসূল(সাঃ) ইরশাদ করেন-নিশ্চয় অহংকারী ও কর্কষভাষী কখনো বেহেস্তে প্রবেশ করতে পারবেনা। (আবু দাউদ) রাসূল (সাঃ) মেরাজের রাত্রে কিছু সংখ্যক মহিলাকে জিহ্বার সাথে লটকানো দেখতে পেয়ে হরযত জিব্রাইল (আঃ)-এর মাধ্যমে জানতে পারলেন এরা ঐ সকল মহিলা যারা কথা বার্তায় সংযত ছিল না। এরা কথা বার্তায় স্বামী সহ আশ পাশের লোকদের কে কষ্ট দিত।
৯। পর্দাশীলতা_ও_লজ্জাশীলতাঃ আল্লাহ পাক মুমিন নারী পুরুষের প্রতি পর্দা ফরজ করেছেন। বেপর্দা স্ত্রীর কারনে একজন স্বামী দুনিয়াতেও যেমন বিপদের সম্মুখিন হবেন, আখেরাতেও আযাবের সম্মুখিন হবেন, সুতরাং একজন স্ত্রী পর্দা করে সে নিজেকে রক্ষা করে না বরং সে তাঁর স্বামীকে দুনিয়া ও আখেরাতের বিপদ থেকে রক্ষা করে।
১০। চোগলখোর ও গীবত- যে নারী চোগলখোরী করে না, স্বামীর গীবত করে না সে স্বামীর কল্যানকামী স্ত্রী, যে স্ত্রী সব সময় স্বামীর দোষ ত্রুটি তালাশ করে ফিরে, বাহিরে স্বামীর দোষ চর্চায়লিপ্ত থাকে সে নিজেও জাহান্নামে যাওয়ার মত আমল করছে সাথে সাথে তাঁর স্বামীকেও সমাজে হেয় করছে।
একজন আদর্শ স্ত্রী অবশ্যই এ থেকে বেচে থাকবে। উপরোক্ত গুণাবলী যে নারীর মধ্যে থাকে? সেই একজন উত্তম আদর্শ স্ত্রী হিসেবে মর্যাদার আসন অলংকৃত করতে পারে এবং বয়ে আনতে পারে স্বামীর সংসারে বেহেশতের শান্তি। আর স্বামীকে দুনিয়াবি ও আখেরাতের জন্য পরাতে পারে সাফল্যের ও মর্যাদার মুকুট।
কোন মন্তব্য নেই