দুনিয়াতে কাফেররা ধনী মুমিন মুসলমানরা গরীব হয় কেন?

 

দুনিয়াতে কাফেরদেকে ধন সম্পদ বেশী দেয়ার কারন কি?

দুনিয়াতে মুসলমানদেরকে ধন সম্পদ কম দেয়ার কারন কি?



দুনিয়ার কাফের বেদ্বীন খোশহাল জিন্দেগী অতিবাহিত করতে দেখা যায়, ধন সম্পদে, প্রভাব প্রতিপত্তিতে,শিক্ষা দিক্ষায়, জ্ঞানে গুনে তারা মুসলমানদের থেকে হাজার ভাগ এগিয়ে, এর কারন কি? আজ কুরআনের আয়াত ও হাদীসের আলোকে আমরা এর কারন জানার চেষ্টা করব।

আল্লাহ তায়ালা সুরা হুদের ৩ নং আয়াতে এরশাদ করেন

وَأَنِ اسْتَغْفِرُواْ رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُواْ إِلَيْهِ يُمَتِّعْكُم مَّتَاعًا حَسَنًا إِلَى أَجَلٍ مُّسَمًّى وَيُؤْتِ كُلَّ ذِي فَضْلٍ فَضْلَهُ وَإِن تَوَلَّوْاْ فَإِنِّيَ أَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ كَبِيرٍ

আর তোমরা নিজেদের পালনকর্তা সমীপে ক্ষমা প্রার্থনা কর। অনন্তর তাঁরই প্রতি মনোনিবেশ কর। তাহলে তিনি তোমাদেরকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত উৎকৃষ্ট জীবনোপকরণ দান করবেন এবং অধিক আমলকারীকে বেশী করে দেবেন আর যদি তোমরা বিমুখ হতে থাক, তবে আমি তোমাদের উপর এক মহা দিবসের আযাবের আশঙ্কা করছি। [সুরা হুদ - ১১:৩]

এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা যারা অধিক আমল করবেন তাদেরকে দুনিয়াতে উৎকৃষ্ট জীবন উপকরণ বেশী বেশী দেয়ার ঘোষনা দিয়েছেন,

আবার সুরা যুহরুফ এর ৩৩-৩৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে ভিন্ন কথা যেমন

وَلَوْلَا أَن يَكُونَ النَّاسُ أُمَّةً وَاحِدَةً لَجَعَلْنَا لِمَن يَكْفُرُ بِالرَّحْمَنِ لِبُيُوتِهِمْ سُقُفًا مِّن فَضَّةٍ وَمَعَارِجَ عَلَيْهَا يَظْهَرُونَ

যদি সব মানুষের এক মতাবলম্বী (কাফের) হয়ে যাওয়ার আশংকা না থাকত, তবে যারা দয়াময় আল্লাহকে অস্বীকার করে আমি তাদেরকে দিতাম তাদের গৃহের জন্যে রৌপ্য নির্মিত ছাদ সিঁড়ি, যার উপর তারা চড়ত। [সুরা যূখরুফ৪৩:৩৩]

وَلِبُيُوتِهِمْ أَبْوَابًا وَسُرُرًا عَلَيْهَا يَتَّكِؤُونَ

এবং তাদের গৃহের জন্যে দরজা দিতাম এবং পালংক দিতাম যাতে তারা হেলান দিয়ে বসত। [সুরা যূখরুফ৪৩:৩৪]

وَزُخْرُفًا وَإِن كُلُّ ذَلِكَ لَمَّا مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةُ عِندَ رَبِّكَ لِلْمُتَّقِينَ

এবং স্বর্ণনির্মিতও দিতাম। এগুলো সবই তো পার্থিব জীবনের ভোগ সামগ্রী মাত্র। আর পরকাল আপনার পালনকর্তার কাছে তাঁদের জন্যেই যারা ভয় করে। [সুরা যূখরুফ৪৩:৩৫]

 

সুরা হুদের আয়াতে বলা হয়েছে যারা অধিক আমল করবে তাদেরকে দুনিয়াতে উৎকৃষ্ট জীবন উপকরন দান করবেন আবার সুরা যুখরুফ এর এই ৩টি আয়াত দ্বারা বুঝা যায় দুনিয়ার সোনা রুপা ঘর দালান টাকা পয়সা এসব উপকরণ হল কাফেরদের জন্য। আল্লাহ কাফেরদেরকে এসব উপকরণ বেহিসাব দিচেছন না কারন কাফেরদের এসব ধন দৌলত দুনিয়ার আরাম আয়েশ দেখে আবার মুসলমানরাও ঈমানহারা হয়ে যাবে। নাহয় আল্লাহ কাফেরদেকে এত অধিক দিতেন তাদের ঘর বাড়ী দরজা সিড়ি সব সোনা রুপার হয়ে যেত।

 

হযরত আবু হুরায়রা (রা) বয়ান করেন রাসুলুল্লাহ (দ) ফরমান- দুনিয়া হল মুমিনের জন্য কয়েদখানা আর কাফেরদের জন্য জান্নাত। (তিরমিজি ২৩২৪, মুসলিম ২৯৫৬, ইবনে মাজা ৪১১৩, ইবনে হিব্বান ৬৮৭, মসনদে আবু এয়ালা ৬৪৬৬,

হযরত সঈদ বিন আবি ওয়াক্কাস (রা) বয়ান করেন, নবী করিম (দ) এরশাদ করেন- সবচেয়ে বেশী মসিবত আসে আম্বিয়াদের উপর, তারপর বেশী মসিবত আসে ওলামায়েকেরাম এর উপর যারা নবীদের বেশী অনুসারী,  তারপর যারা সেসব ওলামাদের বেশী নিকটবর্তী তাদের উপর বেশী মসিবত আসে। (কানযুল উম্মাল ৬৭৮)

 

প্রত্যেক লোক তার দ্বীনদারী মোতাবেক মসিবতে মুবতালা হবে, যে কেহ কঠোরভাবে দ্বীনের উপর কায়েম থাকে তার উপর মসিবতও আসবে কঠিনভাবে। আর যদি সে মামুলিভাবে দ্বীনদারী পালন করে তাহলে তার উপর তার দ্বীনদারী মোতাবেক মসিবত আসবে। বান্দার উপর মসিবত আসতে থাকবে আর সে এই অবস্থায় জমিনে চলাফেরা করবে যে তার কাছে আর কোন গুনাহ থাকবেনা। (তিরমিজি ২৩৯৮, আবু দাউদ ২১৫, দারেমি ২৭৮৬)

উপরের কুরআনের আয়াত ও হাদীস সমুহ দ্বারা বুঝা যায় যে ব্যক্তি আল্লাহর এবাদত বেশী করবে তার উপর মসিবত দুঃখ বেশী আসবে,

আর সুরা হুদ এর ৩নং আয়াতে দেখা যায় যে আল্লাহর এবাদতে বেশী লিপ্ত থাকবে সে আরাম আয়েশ ও সুখ স্বচ্ছলতায় দিন কাটাবে।

এখন এই ব্যপারটি মুফাসসিরিনে কেরাম খোলাসা করেছেন কয়েকটি জবাবের মাধ্যমে

১) সুরা হুদু এর আয়াত এর মুরাদ হল আল্লাহ তায়ালা মুসলমাদের উপর সে রুপ আযাব নাজিল করবেন না যেরুপ আগের যুগের নবীদের উম্মতের উপর নাফরমানি করার কারনে আযাব নাজিল করেছিলেন।

২) আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদেরকে এমন রিজিক দিবেন যার ফলে তারা ক্ষুধা, পিপাসা, দুর্ভিক্ষের আযাবে মুবতালা হবেনা।

৩)মুমিন মুসলমানের সব কিছুতে সন্তুষ্টি থাকে, তাদের উপর কোন মসিবত আসলে তাতে তারা দুঃখি হয়না বরং এই মসিবত আল্লাহর তরফ থেকে এসেছে মনে করে তাতে খুশি হয় এই ভেবে যে এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে তার জন্য পরীক্ষা এসেছে, আর এই মসিবতের কারনে আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করে দিবেন। এবং সে বেগুনাহ হয়ে আখেরাতে পাক সাফ হয়ে আল্লাহর সাথে মিলিত হবেন। যেমন আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন

مَا عِندَكُمْ يَنفَدُ وَمَا عِندَ اللّهِ بَاقٍ وَلَنَجْزِيَنَّ الَّذِينَ صَبَرُواْ أَجْرَهُم بِأَحْسَنِ مَا كَانُواْ يَعْمَلُونَ

তোমাদের কাছে যা আছে নিঃশেষ হয়ে যাবে এবং আল্লাহর কাছে যা আছে, কখনও তা শেষ হবে না। যারা সবর করে, আমি তাদেরকে প্রাপ্য প্রতিদান দেব তাদের উত্তম কর্মের প্রতিদান স্বরূপ যা তারা করত। [সুরা নাহল - ১৬:৯৬]

আর কাফেরেরা দুদিনের দুনিয়ায় অনেক আরাম আয়েশ করে ঠিক কিন্তু সব সময় এই চিন্তায় পেরেশান থাকে যে কখন না কখন এই সম্পদ শেষ হয়ে যায়, তাছাড়া এসব কাফেরেরা দুনিয়াতে যদিও মাল ও দৌলতের মালিক হয় কিন্তু সব সময় একটা ভয় তাদের মধ্যে কাজ করে, যার কারনে মানসিকভাবে শান্তিতে থাকেনা। তাছাড়া তারা এটাও ভাবে তার কাছে যা কিছু আছে সব দুনিয়ার জন্য আখেরাতে তার জন্য কোন হিস্সা নাই। সে জন্য সে সব সময় মৃত্যুকে ভয় পায়। কোটি টাকার সম্পদের মালিক হওয়া সত্বেও কাফের বেদ্বীনেরা প্রতিটি মুহুতে আতংকে থাকে, নানা ধরনের ভয় ও পেরেশানিতে থাকে, আর এই সব কারনে তারা বড় বড় রোগে রোগাক্রান্ত হয়ে যায়।বেশী বেশী মদ পানের কারনে তারা ক্যান্সারের সম্মুখিন হয়ে যায়। এসব কারনে তারা দুনিয়াতেও এক সময় মানসিকভাবে বিপযস্ত হয়ে পড়ে। তাদের ঘুমের বড়ি ছাড়া ঘুম আসেনা, মানসিক শান্তি উধাও হয়ে যায়, প্রচুর ধন দৌলত থাকা সত্বেও তাদের জিন্দেগী এক সময় বিষাক্ত হয়ে উঠে।

যেমন আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন

وَمَنْ أَعْرَضَ عَن ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنكًا وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَى

এবং যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব। [সুরা ত্বা-হা - ২০:১২৪]

সেজন্য বেদ্বীন কাফেরের অট্টালিকা, কোটি কোটি টাকা, বিলাসবহুল গাড়ি, এসব দেখে মনে করার কিছু নাই যে তারা অনেক সুখি, অবশ্যই এত কিছু থাকার পরও তাদের জীবন জিবিকা সংকীর্ণ হয়ে যাবে। তাদের মানসিক পেরেশানি থাকে, মৃত্যুর ভয় থাকে, পরকালে তাদের জন্য কোন কিছুই বাকী থাকেনা।

পক্ষান্তরে মুমিনগন দুনিয়াকে তুচ্ছজ্ঞান করে; দুনিয়ার সকল মসিবতকে আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা মনে করে তাতে ধৈর্য্য ধারন করে, দুনিয়ার সকল দুঃখ বিপদকে গুনাহ মাফের জরিয়া মনে করে, আর আখেরাতে অফুরন্ত নাজও নেয়ামত লাভের আশায় মৃত্যুর ভয়ও তাদের থাকেনা ফলে তারা হাসতে হাসতে মৃত্যুকে বরণ করে, আর মৃত্যুর পর অনন্ত জীবনে তাদের জন্য রয়েছে সুখ আর শান্তি।

মুলকথা হল কাফেররা দুনিয়াতে প্রচুর ধন সম্পদের মালিক হলেও প্রকৃত সুখ থেকে প্রকৃত প্রশান্তি থেকে বঞ্চিত। পক্ষান্তরে মুসলমানরা ধন সম্পদের দিক থেকে কাফেরের তুলনায় দরিদ্র হলেও মানসিকভাবে মুসলমানরা কাফেরদের চেয়ে হাজার গুন সুখি ও প্রশান্তিতে থাকে, সবচেয়ে বড় কথা আখেরাতের মহা পুরস্কারের আশায় মুমিন মুসলমানরা দুনিয়ার কোন কষ্টকে কষ্টই মনে করেনা। 

 

কোন মন্তব্য নেই

borchee থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.