স্বামী ২ বছর পর বিদেশ থেকে ঘরে এসে স্ত্রীকে গর্ভবতী পেল, স্ত্রী বলল খোদার কসম এ বাচ্চা তোমার |

 স্বামী ২ বছর পর বিদেশ থেকে ঘরে এসে স্ত্রীকে গর্ভবতী পেল,

স্ত্রী বলল খোদার কসম এ বাচ্চা তোমার |



বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

আসসালামু আলাইকুম

ইবনে আবি শায়বাতে সুনানে কুবরায় এই ঘটনা আছে সহিহ সনদের সাথে। দর্শকবৃন্দ এই কায়েনাতে হযরত আবু বকর ছিদ্দিক (রা) এর পর যিনি সবচেয়ে উত্তম ব্যক্তি তিনি হযরত ওমর ফারুক (রা)। আর হযরত ওমর (রা) সে মোবারক ব্যক্তি যার ব্যপারে নবী করিম (দ) ফরমায়েছেন, (লাউ কানা বাদি নাবিয়্যান লাকানা ওমর ) যদি আমার পর কেহ নবী হত, তাহলে ওমর হত। আর হযরত ওমর (রা) সে মোবারক ব্যক্তি।যার ব্যপারে রহমতে দোআলম (দ) এরশাদ করেন, যে রাস্তা দিয়ে ওমর চলাফেরা করে শয়তান সে রাস্তা দিয়ে চলাচল করেনা।

আজব ঘটনাটি হল>

হযরত ওমর (রা) এর কাছে এক লোক আসল, আর এসে বলতে লাগল হে আমিরুল মুমিনিন, আমি পুরা ২ বছর পর আমার ঘরে আসি (হতে পারে কোন কাজে এই লোক বাহিরের দেশে ছিল) সে বলল ঘরে আসার আগে আমি অনেক খুশি ছিলাম, আজ ২ বছর পর আপন ঘরে ফিরে যাচ্ছি, নিজের স্ত্রী ও পুত্র কন্যাদের সাথে সাক্ষাৎ হবে।

কিন্তু ঘরে গিয়ে যখন আমার স্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করলাম, আমার সকল খুশি মুহুর্তে মাটি হয়ে গেল, আমার পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে গেল, আমি অত্যন্ত আনন্দচিত্ত্বে আমার স্ত্রীর সাথে যখন সাক্ষাৎ করতে গেলাম গিয়ে দেখি আমার স্ত্রী গর্ভবতী। ২ বছর পর ঘরে এসে আমি আমার স্ত্রীকে গর্ভবতী অবস্থায় দেখে পেরেশান হয়ে গেলাম। মুহুর্তে আমার সকল খুশি দুঃখে পরিণত হয়ে গেল।

যখন আমি আমার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলাম তোমার পেটে এটা কার সন্তান? আমিতো ২ বছর পর ঘরে এসেছি, তখন আমার স্ত্রী জবাব দিল আমি আল্লাহর কসম করে বলছি আমার গর্ভের সন্তান আপনার। হে আমিরুল মুমিনিন আপনি আমাকে বলুন ২ বছর যাবৎ আমি আমার স্ত্রীকে দেখিও নাই ধরিও নাই। ২ বছর পর আমি সফর থেকে ঘরে আসলাম আর আমার স্ত্রী গর্ভবতী। আর আমার স্ত্রী দাবী করছে তার গর্ভের সন্তানটি আমার । এখন আমি কি করব কোথায় যাব?

দর্শক মন্ডলী এই ঘটনাটি সহিহ সনদের সাথে বর্ণিত এই হাদীসের সনদে কোন ধরনের সন্দেহ নাই।

হযরত ওমর ফারুক (রা) চিন্তা করলেন সে নারীকে জেনার শাস্তি দেয়ার। হকুম দেয়া হল এই নারীকে রজম (পাথর নিক্ষেপে) হত্যা করা হউক। দেখুন এমন একজন রজম এর হকুম দিচ্ছেন যার জ্ঞানের ব্যপারে সারা দুনিয়া সাক্ষি দিয়ে থাকে। আর তিনি সে ওমর যিনি জমিনে কোন পরামর্শ দিলে আল্লাহ তায়ালা সে পরামর্শকে কুরআন বানিয়ে নিজের হাবিবের উপর নাজিল করেন। আর কুরআনে পাকে ২২টি স্থান এমন আছে যাতে হযরত ওমর (রা) মতামত দিয়েছেন আর আল্লাহ তায়ালা সে মতামতকে কুরআনের আয়াত বানিয়ে নাজিল করে দিলেন।

কিন্তু যে সময় হযরত ওমর (রা) এই নারীকে রজমের হকুম দিলেন সে সময় সেখানে সাহাবী হযরত মুয়াজ বিন জবল (রা) উপস্থিত ছিলেন। তিনি বললেন হে আমিরুল মুমিনিন আমি আপনার এই হকুমকে চ্যালেঞ্জ করছি। আপনার এই ফয়সালা সঠিক হয়নি, আপনি আপনার ফয়সালা দুরস্ত করুন। হযরত মুয়াজ বিন জাবল (রা) ফরমালেন হে আমিরুল মুমিনীন (লাইছা লাকা আলা মা ফি বাতনিহা ছাবিল) হে ওমর যা এই নারীর পেটে আছে তা আপনার জন্য নয়। আপনি এই নারীকে শাস্তি দিতে চান কারন সে অপরাধী, কিন্তু তার পেটে যে বাচ্চা আছে তার কি অপরাধ? তার পেটের বাচ্চাটিকে কোন অপরাধের কারনে আপনি মৃত্যুদন্ড দিচ্ছেন? অথচ রাসুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগেও এমন ঘটনা সংগঠিত হয়েছে; শাবিবা নামক এর নারী এসেছিল কিন্তু হুজুর (দ) বাচ্চা প্রসব করা পর্যন্ত তার শাস্তির ব্যপারে অপেক্ষা করেছিল। কেননা পেটে যে বাচ্চা তাও একটি প্রাণ।

আজকাল আমাদের সমাজে কিছু লোক এই জুলুম করেন; যেমন বলে ডাক্তার বলেছেন পেটে যে বাচ্চা আছে তা ঠিক না তার অঙ্গ প্রতঙ্গ পরিপূর্ণ তৈরী হয়নি, তার ব্রেইন পরিপূর্ণ না, সুতরাং বাচ্চা নষ্ট করে ফেল।এই গর্ভ নষ্ট করে ফেল। মনে রাখবেন এটা অনেক বড় কবিরা গুনাহ।

আপনার আশে পাশে দৃষ্টি দিয়ে দেখবেন এমন অনেক লোক পাওয়া যাবে যাদের ব্রেইন ঠিক না, যারা মাজুর। এখন কেহ কি বলবে এই লোকটির ব্রেইন ঠিকনা এই লোকটি মাজুর তাই একে হত্যা করে ফেল? মনে রাখবেন দুনিয়ার জমিনে যেমন কোন রোগীকে মাজুরকে হত্যা করা জায়েজ নাই, ঠিক তেমনি মায়ের পেটে যে বাচ্চা তার ব্রেইন ঠিক হবেনা, তার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ঠিক হবেনা বলে তাকে মায়ের পেটেই হত্যা করা জায়েজ হবেনা।

যাক সে কথা-হযরত মুয়াজ বিন জাবালা (রা) হযরত ওমর (রা) এর ফয়সালার বিরোধীতা করলেন; আর পরামর্শ দিলেন বাচ্চা প্রসব হওয়া পযন্ত অপেক্ষা করুন। হযরত ওমর (রা) মুয়াজ বিন জাবাল এর পরামশ মোতাবেক সে মহিলার রজমের হকুম পরিহার করে নিলেন। আর বললেন বাচ্চা প্রসব পযন্ত অপেক্ষা করার।

সে নারী কিছুদিন পর বাচ্চা প্রসব করল আর সহিহ সনদে মওজুদ যে মুহুর্তে সে নারী বাচ্চা প্রসব করল (কাদ খারাজাত ছানায়াহু) যে সময় সে বাচ্চা মায়ের পেট থেকে প্রসব হল; সে বাচ্চা দেখতে ২ বছর বয়স্ক লাগছিল; তার মুখে দাঁত বের হয়ে গিয়েছিল, আর পিতা যখন তার বাচ্চাকে দেখল সে বলতে লাগল আল্লাহর কসম কাবার প্রভুর কসম এই বাচচাটি হুবহু আমারই মত দেখতে; আমি হলফ করে বলতে পারি এই বাচ্চা নিশ্চয়ই আমার।

হযরত ওমর (রা) এর কাছে যখন সে কথা পৌঁছল। তখন হযরত ওমর (রা) বলে উঠলেন (লাউলা মুয়াজ লা হালাকা ওমর) যদি মুয়াজ না হত তাহলে আজ ওমর ধ্বংস হয়ে যেত। অর্থ্যাৎ মুয়াজ বাঁধা না দিলে আজ ওমর এক নিষ্পাপ নারী ও শিশুকে রজম বা পাথর নিক্ষেপের অপরাধে ধ্বংস হয়ে যেত। 

কোন মন্তব্য নেই

borchee থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.