বিসমিল্লাহর ফজিলত ও আমল। বিসমিল্লাহর আমল ও ওজিফা

 

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম



আপনার জীবনের প্রতিটি কাজে, প্রতিটি পদক্ষেপে, প্রতিটি ক্ষেত্রে বরকত কিভাবে আনবেন, পবিত্র কুরআনের পরতে পরতে হিরা মনি মুক্তার মত বরকতময় দোয়া ও ওজিফা আছে, যে দোয়া ওজিফা আপনি যদি জীবনে এপ্লাই করেন তাহলে আপনার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অফুরন্ত বরকত হবে, আপনার লাইফটা বরকত ময় হয়ে উঠবে। আপনার ঘরটা স্বগ সুখে ভরে যাবে, আপনার সন্তান সন্তুতি নেককার হবে, তারা পড়া লেখায় মনোযোগি হবে, আপনার কথা শুনবে, আপনার জীবনে শয়তান জিন কোন ক্ষতি করতে পারবেনা, রাস্তা ঘাটে নানান ধরনের বিপদ মসিবত থেকে বেঁচে যাবেন, এক্সিডেন্ট থেকে বেঁচে যাবেন, নানা ধরনের দুরারোগ্য রোগ ব্যধী থেকে আল্লাহ হেফাজত করবেন।

 

আজ পবিত্র কুরআন ও হাদিস থেকে কোটি কোটি হিরা মনি মুক্তার চেয়ে দামী ওজিফা আপনাদের সামনে উপস্থাপন করব, কখন কিভাবে পড়বেন কতবার পড়লে কিরুপ লাভবান হবেন? কোন কোন স্থানে পড়বেন প্রিয় নবীজি কিভাবে পড়তেন, জিবরাইল ফেরেশতা কিভাবে পড়েছেন,  এ টু জেড আজ আলোচনা করব ইনশা আল্লাহ। আপনি নিশ্চিত কুরআনের এমন বরকতময় ওজিফার এতগুলি ফজিলত ও বরকত আপনি আর আগে একসাথে শুনেননি, তাই এই আলোচনাটি আপনার জন্য খুবই কল্যাণকর হবে।

 

শেষ পযন্ত না শুনলে আপনি জানতে পারবেন না বুঝতে পারবেন না, তাই অনুরোধ করব অল্প সময় ব্যায় করে আজকের আলোচনাটি শেষ পর্যন্ত শুনবেন। যদি ভালো না লাগে আমাকে কমেন্টে খারাপ মন্তব্য করে যাবেন তাতে আমি কিছু মনে করবনা।

 

প্রত্যেক কাজ শুরু করবেন বিসমিল্লাহ দিয়ে, আল্লাহর নামে করবেন, কুরআনে মজিদের শুরুও আল্লাহ তায়ালা বিসমিল্লাহ দিয়ে করেছেন।

 

প্রথম অহির সুচনাও আল্লাহর নাম দিয়ে হয়েছে। জিবরাইল আমিন যখন প্রথম আয়াত পড়লেন তখন ফরমালেন (ইকরা বিইসমি রাব্বিকাল্লাজি খালাক) পড়ুন আপনার প্রভুর নামে ‍যিনি সৃষ্টি করেছেন।

 

সুতরাং এবাদত হউক আর দুনিয়ার সকল কাজ হউক তাতে আল্লাহর নাম নিতে হবে। তাহলে বরকত হবে নিশ্চিত।

 

কুরআনে মজিদে এসেছে (তাবারাকাসমু রাব্বিকা জুল জালালে ওয়াল ইকরাম) কত বরকতময় তোমার পালন কর্তার নাম, যিনি মহিমাময় ও মহানুভব! [সুরা আর রহমান,আয়াত ৭৮]

 

তাছাড়া আল্লাহর নাম নিয়ে কোন কাজ সুচনা করলে তাতে নিয়তও শুদ্ধ থাকে এবং তাতে এখলাছও থাকে। এমনকি বিসমিল্লাহ দিয়ে আল্লাহর কোন নেয়ামত ভোগ করলে সে নেয়ামতের শোকরও আদায় হয়ে যায়, যেমন আপনি পানি পান করছেন পানি পানের আগে যখন আপনি আল্লাহর নাম নিবেন বিসমিল্লাহ বলবেন তখন আপনার মনে পানি যে আল্লাহর দেয়া একটি নেয়ামত তা স্মরণ হয়ে যাবে। এবং শোকর চলে আসবে। আর যারা শোকর করে তাদের জন্য আল্লাহ নেয়ামত আরো বাড়িয়ে দেন, যেমন আল্লাহ বলেন (লাইন শাকারতুম লা আজিদান্নাকুম) তোমরা যদি নেয়ামতের শোকর আদায় কর আমি নেয়ামত আরো বাড়িযে দিব। নেয়ামত যখন বেড়ে যাবে তখন আপনার জীবনটা বরকতময় হয়ে যাবে।

 

নুহ (আ) এর প্লাবনের সময় তিনি যখন কিস্তিতে আরোহন করেন তখন তিনি যে দোয়া পড়েছেন তার সুচনাও বিসমিল্লাহ দিয়ে করেছেন। যেমন

বিসমিল্লাহি মাজরেহা ওয়া মুরসাহা ইন্না রাব্বি লাগাফুরুর রাহিম। (সুরা হুদ : আয়াত ৪১)

 

তেমনি ভাবে হযরত সুলায়মান (আ) যখন সাবা শহরের রানি বিলকিসকে চিঠি লিখেছেন তার সুচনাও করেছেন বিসমিল্লাহ দিয়ে (ইন্নাহু মিন সুলাইমান ওয়া ইন্নাহু বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম) অর্থ্যাৎ নিশ্চয় এটা সুলাইমানের পক্ষ থেকে। আর নিশ্চয় এটা আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময় পরম দয়ালু  (সুরা নমল ৩০)

 

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম এর মধ্যে প্রথমে রহমান শব্দটি আছে যার অথ হল করুনাময়, আর আল্লাহ তায়ালা নিজেকে এই রহমান দিয়ে পরিচয় দিয়েছেন যেমন আল্লাহ বলেন (আর রাহমান আলাল আরশিস তাওয়া) রহমান যিনি আরশের উপর বুলন্দ হয়েছেন।

 

আল্লাহর ১০০% রহমত থেকে মাত্র ১% দুনিয়ার সকল মাখলুকের জন্য নাজিল করেছেন বাকী ৯৯ অংশ আখেরাতের জন্য রেখেছেন, আর এই ১ অংশ রহমত হল সকলের জন্য যেটাকে রহমান দ্বারা বুঝানো হয়েছে আর বাকী ৯৯ অংশ রহমত আখেরাতে একমাত্র মুমিনদের জন্য বরাদ্দ আছে। যা রহিম দ্বারা বুঝানো হয়েছে।

 

আবু হুরায়রা (রা) বলেন রাসুলুল্লাহ (দ) এরশাদ করেন যখন আল্লাহ মাখলুককে পয়দা করেছেন তখন তিনি লওহে মাহফুজে লিখেন,  আমার রহমত আমার গজবের উপর প্রভাবশালী। আর আল্লাহর রহমত অনেক বড় বিস্তৃত। যেমন আল্লাহ বলেন (ওয়া রাহমাতি ওয়াসিয়াত কুল্লা শাই) অর্থ্যাৎ আমার রহমত সকল কিছুকে বেস্টন করে রেখেছে। তিনি হলেন রহমান তাই কেউ তাকে মানে বা না মানে কেউ এবাদত করে বা না করে, যত লোক দুনিয়াতে চলাফেরা করে, নাফরমানি করে, কুফুরি করে, শিরিক করে তবুও আল্লাহ তাদেরকে ছাড় দেন, রিজিক দেন, কারন আল্লাহ হলেন দুনিয়ার জন্য রহমান।

 

সুতরাং কেহ যদি পড়েন বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম এখানে যে রহমান আছে সে রহমানের মধ্যে আল্লাহর রহমত যে কত বিস্তৃত তা যদি মানুষ বুঝে নিতে পারে তাহলে তার আর কোন অশান্তি পেরেশানি থাকবেনা। তিনিই সকল মশকিল দুরকারী, রহমত দানকারী। সে জন্য আমাদের প্রত্যেক কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পড়া দরকার। কেননা আল্লাহর নাম নিলে কামিয়াবি আসে। যেমন আল্লাহ এরশাদ করেন (কাদ আফলাহা মান তাজাক্কা, ওয়া জাকারাসমা রাব্বিহি ফাসাল্লা) নিশ্চয় কামিয়াব হয়ে গেছে যারা পবিত্র হয়েছে, আর তারা নিজ রবের নাম স্মরণ করেছে। এবং নামাজ পড়ে। অর্থ্যাৎ আল্লাহর নাম নেয়াই হল কামিয়াবির আলামত। নামাজ পড়া কামিয়াবির আলামত।

 

সকাল সন্ধ্যায় বিশেষ করে আল্লাহর নাম নেয়া উচিত সুরা ইনসানে আছে (ওয়াজকুর ইসমা রাব্বিকা বুকরাতাও ওয়া আছিলা) সুতরাং আল্লাহর নাম নেয়া বরকতের কারন। যেমন এক ব্যক্তি নবী (দ) কে বলল আমি খাবার খাই কিন্তু আমার পেট ভরে না, নবী করিম (দ) পরামশ দিলেন খাবার সময় বিসমিল্লাহ বল আল্লাহর নাম নাও তাহলে তিনি তোমার জন্য সে খাবারে বরকত দান করবেন। তখন অল্প খেলেও পেট ভরে যাবে।

 

তেমনি ভাবে আল্লাহর নাম নিলে মানুষ সব ধরনের নিরাপত্তা লাভ করে যেমন জাবের বিন আবদুল্লাহ (রা) হতে বর্ণিত নবীর করিম (দ) এরশাদ করেন যখন সন্ধ্যা নেমে আসে তোমরা তোমাদের বাচ্চাদেরকে ঘর থেকে বাহিরে বের হতে দিও না,  কেননা সে সময় শয়তান ছড়িয়ে পরে, আর যখন সন্ধ্যার পর ১ ঘন্টা অতিবাহিত হয় তখন বের হতে দাও,

নবীজি আরো বলেন রাতে দরজা বন্ধ করার সময় আল্লাহর নাম নাও কেননা শয়তান বন্ধ দরজা খুলতে পারেনা।

 

আল্লাহর নাম নিয়ে পানির পাত্র সমুহ ঢেকে রাখ, আল্লাহর নাম নিয়ে থালা বাসন ঢেকে রাখ , ঢাকতে না পারলে অন্তত আড়াআড়ি ভাবে কিছু রেখে দিবে, আর চেরাগ নিভিয়ে দাও।

এর থেকে বুঝা যায় রাতের শেষ মুহুর্তের কাজ যা প্রত্যেক ঘরে মানুষ করে দরজা বন্ধ করা,খাবার, পানি ঢেকে রাখা, এই সব কাজে বিসমিল্লাহ পড়ার জন্য প্রিয় নবীজি (দ) নির্দেশ দিয়েছেন। এর ফলে নানা ধরনের দুরারোগ্য রোগ ব্যধী যা শয়তান আধোয়া থালা বাসনে ছড়িয়ে দেয় তা থেকে বাঁচা যায়।

 

তেমনি ভাবে আল্লাহর নাম নিলে মানুষ হঠাৎ আসা যে কোন মসিবত থেকে বেঁচে যায়, ওসমান বিন আফফান (রা) বলেন আমি রাসুলুল্লাহ (দ) কে বলতে শুনেছি যে সন্ধ্যা বেলায় ৩ বার এই দোয়া পড়বে সকাল পর্যন্ত তার কাছে কোন হঠাৎ মসিবত আসবেনা, আর যে সকালে ৩ বার পড়বে সন্ধ্যা পর্যন্ত কোন হঠাৎ মসিবত আসবেনা। আর সে দোয়া হল


بِسْمِ اللَّهِ الَّذِى لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَىْءٌ فِى الأَرْضِ وَلاَ فِى السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ

* বাংলা উচ্চারণ : বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়া দুররু মাসমিহি শাইয়ূন ফিল আরদি ওয়ালা ফিসসামায়ি ওয়া হুয়াস সামিউল আলিম।

* অর্থ : [আমি আমার দিন বা রাতের সূচনা করছি] ওই আল্লাহর নামে যার নামের সঙ্গে আসমান জমিনের কোনো কিছু কোনো ধরণের ক্ষতি করতে পারে না। তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বাজ্ঞ।

 

বিসমিল্লাহ না বলার ক্ষতি কি জানেন? ইবনে আব্বাস (রা) বলেন; ইবলিস আল্লাহকে বললেন হে আল্লাহ আপনি সকল সৃষ্টির জন্য রিজিক প্রসস্থ করেছেন, আমার রিজিক কিসের মধ্যে রেখেছেন? তখন আল্লাহ ইবলিসকে জবাব দিলেন যে সব জিনিষে আমার নাম নেয়া হয়না সে সব কিছু হল তোমার রিজিক। সুতরাং যদি আমরা কোন খাবারে, কাজে আল্লাহর নাম না নিই সেটা শয়তানের কব্জায় চলে যায়। শয়তানের রিজিক হয়ে যায়, শয়তানের পেটে চলে যায়।

 

কেয়ামতের দিনও আল্লাহর নামের চেয়ে ওজনদার কোন কিছু হবেনা,

তাই আমাদের বিসমিল্লাহ পড়া উচিত, সকল কাজ শুরুর আগে, খাবারের আগে, নবী করিম (দ) এরশাদ করেন যদি কেহ খাবারের প্রথমে বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে যায় খাবারের মাঝে মনে পরলে তখন পড়বে বিসমিল্লাহি আউয়্যালাহু ওয়া আখেরাহু।

 

তেমনি ভাবে পোষাক খোলার সময়ও বিসমিল্লাহ পড়া উচিত। আনাস (রা) হতে বর্ণিত নবী (দ) এরশাদ করেন জিনের চোখ এবং বনি আদমের লজ্জাস্থানের মধ্যে পর্দা হল বিসমিল্লাহ, সুতরাং কেহ যখন কাপড় খুলে তখন তার উচিত বিসমিল্লাহ পড়া।

 

তেমনি বাথরুমে প্রবেশের আগেও বিসমিল্লাহ পড়বেন, হযরত আলী (রা) বলেন নবী করিম (দ) এরশাদ করেন জিনের চোখ ও মানুষের লজ্জাস্থানের মধ্যে পর্দা হল যখন তাদের কেহ বাথরুমে যায় সে যেন বিসমিল্লাহ পড়ে,

 

সুতরাং আপনি যদি বাথরুমে যাওয়ার আগে বিসমিল্লাহ পড়ে যান সেখানে কাপড় খুললেও শয়তান আপনার লজ্জাস্থান দেখতে পাবেনা। তাছাড়া মানুষের সাথে তার হেফাজতের ফেরেশতা বাথরুমে ঢুকেনা, তখন আপনি যে বিসমিল্লাহ পড়ে ঢুকেছেন সে বিসমিল্লাহ আপনাকে শয়াতন ও দুষ্টু জিন থেকে হেফাজত করবে।

 

তেমনি ভাবে অজুর শুরুতেও বিসমিল্লাহ পড়বেন, কেননা নবী করিম (দ) বলেন যে অজুর শুরুতে আল্লাহর নাম নিলনা তার অজু হলনা। ওলামায়ে কেরাম বলেন বিসমিল্লাহ ছাড়া অজু করলে তার অজু পরিপূর্ণ হবেনা। তার এই অজু দিয়ে নামাজ হবে, তবে আল্লাহর নাম ছাড়া অজু করার কারনে তাতে যে বরকত তা থেকে বঞ্চিত হবে।

 

তেমনি ভাবে কুরআন তেলাওয়াতের শুরুতেও বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পড়বেন।

ঘরে প্রবেশের সময়ও বিসমিল্লাহ পড়তে হবে, বিসমিল্লাহ পড়া ছাড়া ঘরে প্রবেশ করলে আপনার সঙ্গে ঘরে শয়তান প্রবেশ করবে, আর শয়তান যদি ঘরে প্রবেশ করে সে আপনার ঘরে অশান্তি সৃষ্টি করবে, আপনার শান্তির ঘরকে সে তছনছ করে দিতে সক্ষম।

 

তেমনি ভাবে রাতের ঘুমানোর আগে বিসমিল্লাহ পড়ে বিছানা ঝেড়ে নেয়া উচিত। এটাও সুন্নত আমল। বিছানা ঝাড়লে তা থেকে ক্ষতিকর পোকা মাকড় থেকে বাঁচতে পারবেন, আর বিসমিল্লাহ পড়ার ফলে বিছানায় যদি দুষ্ট জিন থাকে তারা পালিয়ে যাবে, অনেকে অভিযোগ করে রাতে ঘুমালে ভয় লাগে, ভয়ংকর স্বপ্ন দেখি, তারা যদি বিসমিল্লাহ পড়ে বিছানা ঝাড়ে তাহলে আর ভয়ও লাগবেনা, ভয়ংকর স্বপ্নও দেখবেনা। ঘুমানোর দোয়ার মধ্যেও আছে আল্লাহর নাম (আল্লাহুম্মা বি ইসমিকা আমুতু ওয়া আহিয়া)

 

তেমনি যানবাহন বা গাড়ির উপর আরোহনের সময়ও বিসমিল্লাহ বলা উচিত। তাহলে আপনার সফর নিরাপদ হবে।

উহুদ যুদ্ধে এক সাহাবীর আঙ্গুল কেটে গেল তিনি উফ শব্দ বললে হুজুর (দ) ফরমালেন যদি তুমি বিসমিল্লাহ বলতে তাহলে ফেরেশতারা তোমাকে তুলে নিত আর লোকজন তোমাকে দেখতে পেত, তাই কোন ব্যথা পেলে সাথে সাথে আল্লাহর নাম নেয়া উচিত

তেমনি ভাবে শরীরের কোন জায়গায় ব্যথা হলেও বিসমিল্লাহ পড়া উচিত, যেমন হযরত ওসমান বিন আবুল আস সাকাফি বলেন আমি রাসুলুল্লাহ (দ) এর কাছে নিজের শরীরে ব্যথার অভিযোগ করলাম তখন রাসুল (দ) ফরমালেন তোমার হাত সে স্থানে রাখ যে স্থানে তুমি ব্যথা অনুভব কর, আর ৩ বার বিসমিল্লাহ পাঠ কর,  তারপর ৭ বার পড় (আউজুবিল্লাহি ওয়া কুদরাতিহি মিন শাররি মা আজিদু ওয়া উহাজির)

 

নবী করিম (দ) যা কিছু এরশাদ করেন তা আল্লাহ তায়ালার অহির মাধ্যমে জেনেই বলেন, তাই এই সব আমল মানব জাতির জন্য রহমত বরকত কল্যাণের জরিয়া, একে আকঁড়ে ধরলে অফুরন্ত বরকত লাভ করা সম্ভব।

 

তেমনি ভাবে ইবনে মাজার ৩৫২৩ নং হাদিস

আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। জিবরাঈল (আ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে বলেনঃ হে মুহাম্মাদ! আপনি কি রোগাক্রান্ত হয়েছেন? তিনি বলেনঃ হ্যাঁ। জিবরীল (আ) বলেন, ’’বিছমিল্লাহি আরকীকা মিন কুল্লি শায়ইন ইউযীকা মিন শাররি কুল্লি নাফসিন আও আয়নিন আও হাসিদিন, আল্লাহ ইয়াশফীকা বিসমিল্লাহি আরকীকা ’’ (আমি আল্লাহর নামে এমন প্রতিটি জিনিস থেকে আপনাকে ঝাড়ফুঁক করছি যা আপনাকে কষ্ট দেয়, প্রতিটি সৃষ্টিজীবের এবং প্রতিটি চোখের এবং প্রতিটি হিংসুকের অনিষ্ট থেকে আপনাকে ঝাড়ফুঁক করছি। আল্লাহ আপনাকে আরোগ্য দান করুন। আমি আল্লাহর নামে আপনাকে ঝাড়ফুঁক করছি)।

 

কারো উপর বদ নজর হলে তাদেরকে এই দোয়া পড়ে ফুক দিবেন যে দোয়া পড়ে হযরত জিবরাইল নবী করিম (দ) কে ফুক দিয়েছেন তাহলে বদ নজর কেটে যাবে।

 

তেমনি ভাবে স্ত্রী সহবাসের সময়ও আল্লারহ নাম নেয়া উচিত, যেমন ইবনে আব্বাস (রা) বলেন নবী করিম (দ) এরশাদ করেন যখন তোমরা নিজের স্ত্রীর কাছে আসে সে যেন বলে (বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শায়তানা ওয়া জান্নিবিশ শায়তানা মা রাজাকতানা)

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তোমার নামে (যৌন মিলন বা সহবাস) আরম্ভ করছি, তুমি আমাদের (স্বামী-স্ত্রী উভয়ের) কাছ থেকে শয়তানকে দূরে রাখ। আমাদের এ মিলনের ফলে যে সন্তান দান করবেন, সে সন্তানকেও শয়তান (যাবতীয় আক্রমণ) থেকে দূরে রাখ।’

 

এই মিলনের ফলে যে সন্তান হবে সে সন্তানকে শয়তান কোন ক্ষতি করতে পারবেনা।

তেমনি ভাবে কোন পশু জবেহ করার সময়ও আল্লাহর নাম নেয়া দরকার, যেমন কুরআনে এরশাদ হয়েছে

وَالْبُدْنَ جَعَلْنَاهَا لَكُم مِّن شَعَائِرِ اللَّهِ لَكُمْ فِيهَا خَيْرٌ فَاذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ عَلَيْهَا صَوَافَّ

এবং কা'বার জন্যে উৎসর্গীকৃত উটকে আমি তোমাদের জন্যে আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন করেছি। এতে তোমাদের জন্যে মঙ্গল রয়েছে। সুতরাং সারিবদ্ধভাবে বাঁধা অবস্থায় তাদের যবেহ করার সময় তোমরা আল্লাহর নাম উচ্চারণ কর। [সুরা হাজ্জ্ব - ২২:৩৬]

তেমনি ভাবে চিঠি লেখার শুরুত বিসমিল্লাহ লেখা। মৃতকে দাফন করার সময় পড়া (বিসমিল্লাহ ওয়ালা সুন্নাতে রাসুলিল্লাহ) তেমনি ঘর থেকে বের হওয়ার সময় পড়া (বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ)

অতএব আমাদের উচিত প্রত্যেক কাজ শুরুর আগে আল্লাহর নাম নেয়া। যার সুচনা ভালো তার ফলাফলও ভালো। প্রথমে ভুলে গেলেও স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে বিসমিল্লাহ পড়ে নিবেন।

আজকাল নানান ধরনের রোগ ব্যধী দেখা যায় মানুষ এমন এমন রোগে আক্রান্ত হয় যা আগে কোনদিন মানুষ শুনে নাই, কিন্তু মানুষ যদি কুরআনের এই হিরা মনি মুক্তার চেয়ে দামি বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম এর এইসব আদব মেনে চলে তাহলে এ ধরনের রোগ শোক দুঃখ পেরেশানি থেকে বেঁচে যেতে পারবে, শয়তান থেকে বেঁচে যেতে পারবে। এবং প্রতিটি কাজ, জীবনের প্রতিটি মুহুত সুখ সচ্ছলতা ও বরকতময় হয়ে যাবে। তাই উঠতে বসতে চলতে ফিরতে প্রত্যেক কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়বেন আর ছোট ছোট বাচ্চাদের সামনে ‍উচ্চস্বরে পড়বেন তাহলে তারাও শিখে নিবে।  বাচ্চা পরে গেলে যখন তাকে তুলবেন তখনও বিসমিল্লাহ পড়বেন, মহিলারা রান্নার সময়ও বিসমিল্লাহ পড়বেন তাহলে সে রান্না খেয়ে ঘরের লোকগুলি নেককার হবে, শোকরগুজার হবে, বিসমিল্লাহ দিয়ে পাকানো খাদ্য খেলে সন্তানেরা পিতা মাতার কথা শুনবে, তারা এবাদতে আগ্রহি হবে, পড়া লেখায় আগ্রহি হবে।

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এই আলোচনা থেকে ভরপুর ফায়দা হাসিল করে জীবনের প্রত্যেক কাজে কর্মে বিসমিল্লাহর প্রচলন শুরু করার তৌফিক দান করুন আমিন।

 

 

 

 

1 টি মন্তব্য:

borchee থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.